এক দৈত্যরাজ এবং আমার জীবনের প্রথম চাকুরী ও তিক্ত অভিজ্ঞতা!!! (২য় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৪:৪০:৫৭ বিকাল
পরিবারের সবার অশ্রুসিক্ত নয়ন দেখে নিজেও স্থির থাকতে পারলামনা, টেক্সিতে উঠ নির্বাক হয়ে বসে রইলাম। দৈত্যরাজ মশাই মুখে বিজয়ের হাসি নিয়ে আমাকে নানান রকমের উপদেশ দিয়েই চললেন!!! মনে মনে কামনা করতেছিলাম যদি তার নন স্টপ রেডিও টা এবার একটু স্টপ হতো, তাহলেই বোধ হয় একটু স্বস্থি পেতাম!!! এর মধ্যেই গ্রামের আঁকাবাঁকা মায়াবী স্মৃতি বিজড়িত রাস্তা পেরিয়ে বেবিটেক্সিটা ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড়ের মিঠাছড়া বাজারের হানিফ কাউন্টারে এসে থামলো। সময়টা ছিল ২০০৭ এর জানুয়ারি মাসের কোন এক শিশির ভেজা সকাল, হানিফ সার্ভিস এর একটা বাসে বসে মনকে শক্ত করে কল্পনায় নতুন পরিবেশের একটা কাল্পনিক ছবি আঁকতে লাগলাম।
নন স্টপ রেডিও টা বাসের মধ্যেও আমাকে শান্তিতে বসে থাকতে দিলনা। উপদেশ দিয়েই চলল, একপর্যায়ে তার কথার যাদুতে মোহিত হয়ে আমি তার প্রতি মনযোগী হতে বাধ্য হলাম। এলাকার মানুষ নাকি আমার সুনামে পঞ্চমুখ!!! আমি না পড়ালে তাদের ছেলেমেরা নাকি ভাল রেজাল্ট করতেই পারতো না!!! আমি অনেক ভাল প্রাইভেট পড়াই! আরোও বলল, এলাকার ২/১ জন লোক নাকি খুব হিংসুটে! দৈত্যরাজ মশাই যেন আমাকে ঢাকা না নিয়ে আসেন ও আমার পরিবারের কোন উপকার না করেন এই জন্য অনেক কু-পরামর্শ দিল! তবুও উনি কারো কথায় কান না দিয়ে আমি এবং আমার পরিবারের উপকার করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ!!! আমার মত নিরীহ কাউকে একটু সাহায্য করতে পারলেই উনার জীবন ধন্য হয়ে যায়!!! উনি জীবনে অনেক টাকা কামিয়েছেন তাই এবার এলাকার কিছু মানুষের উপকার করতে চান!! এই উপকার করতে গিয়ে যদি মানুষের মন্দ কথাও শুনতে হয়, তাতেও দৈত্যরাজ মশাই এর কিছুই যায় আসেনা!!!
অমর বানীগুলো শুনতে শুনতেই যেন আমার কান ব্যাথা হয়েগেল। সারারাত টেনশনে তেমন একটা ঘুম না হওয়ায় বাসের মধ্যে আমার চোখগুলো ঘুমের জন্য যেন ব্যাকুল হয়ে উঠলো। কিন্তু দৈত্যরাজ মশাই কিছুতেই আমাকে ঘুমাতে দিবেন না!!কথার মোড পাল্টিয়ে একটু ভিন্ন সুরে এবার দৈত্যরাজ মশাই আমাকে বললেন, ঢাকাতে চলাফেরা করতে অনেক টাকা লাগে, ঐখানে বিপদে পড়লেও কারো দিকে কেউ তাকায় না। তোমার আব্বু তোমার খরচের জন্য তোমাকে কত টাকা দিয়েছে?
কথাটা শুনেই আমার কেমন জানি মনে হল! তবুও বললাম, ৮৫০০ টাকা দিয়েছেন। কথাটা শুনেই দৈত্যরাজ মশাই যেন অট্টহাসিতেই ফেটে পড়লেন! সাথে সাথেই বলে ফেললেন, টাকাটা আমাকে দিয়ে দে, কারণ ঢাকা শহরে চোর, ডাকাত ও ছিনতাই কারীর কোন অভাব নাই, যে কোন মুহুর্ত্বেই হারিয়ে ফেলতে পারি!!! আমার অবস্থাটা তখন শিকারি বিড়ালের সামনে নিরীহ ইঁদুরের মত!!! একান্ত অসহায়ের মত টাকাটা তার হাতে তুলে দিলাম! তারপর আবার জিজ্ঞাস করলো, আর কোন টাকা নাই? আমি বললাম সামান্য কিছু আমার হাত খরচের জন্য আছে। তখন বললো ঐটাও দিয়ে দে! আমার কাছে আমানত হিসাবে নিরাপদেই থাকবে!!! তোর হাত খরচ যখন যা লাগে আমার কাছ থেকে নিস! ১০,২০,৫০ ও ১০০ টাকার নোট মিলে সর্বমোট ১০০০ টাকা হলো। এই টাকাটা দিতে গিয়ে মনের মধ্যে খুব কষ্ট পেলাম, মনে হলো, যেন আমি সাক্ষাত এক ছিনতাই কারীর কবলে পডে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি!!!
সব টাকা নিয়ে নেওয়ার পর দৈত্যরাজ মশাই সুর পাল্টিয়ে আমাকে বললেন, আমার বড় ছেলে দশম শ্রেণীতে, মেয়ে নবম শ্রেণীতে ও ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। তোমার প্রাথমিক কাজ হচ্ছে ছোট ছেলেকে সকালে স্কুলে নিয়ে যাওয়া ও ছুটির পর স্কুল থেকে নিয়ে আসা এবং সন্ধার পর থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত সবাইকে পড়ানো। মনে কর এটা তোমার চাকুরীর ইন্টার্ভিউ চলতেছে !!!!!
টাকাটা আমার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়ার পর দৈত্যরাজ মশাই তার নন স্টপ রেডিও টা স্টপ করে কিছুক্ষনের মধ্যে বাসের সিটে হেলান দিয়ে নিজেই ঘুমিয়ে পড়লো। অন্যদিকে সবটাকা দৈত্যরাজের হাতে তুলে দিয়ে অজানা টেনশনে আমার চোখের ঘুম যেন মুহুর্ত্বেই উদাও হয়ে গেল!!! মনকে কিছুতেই স্থির করতে পারলাম না, খাচায় বন্ধি পাখির মত শুধুই চটপট করতে লাগলাম!!! ~~~~ চলবে।http://www.bd-today.net/blog/blogdetail/detail/10481/4341216/58380#.VOsygiyhQdU
বিষয়: বিবিধ
৩২০৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন