বহিঃবিশ্বে দেশের সন্মান বজায় রাখতে শিক্ষিত সমাজ ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত নয় কি??
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ২৮ নভেম্বর, ২০১৪, ০২:১৩:৪৮ রাত
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের একটা উদ্দেশ্য থাকে, পড়ালেখা শেষ করে তারা ভাল একটা চাকুরী করবে। পরিবারের পক্ষ থেকেও তাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়। পড়ালেখা শেষ করেও তারা দিনের পর দিন একটা ভাল চাকুরীর আশায় বসে থাকলেও দেশের বাহিরে যাওয়াটাকে তারা অপমানকর মনে করে !!
অপরদিকে পরিবারের যে ছেলেটি পড়ালেখায় একেবারে দুর্বল অথবা প্রাইমারি লেবেলটা কোনমতে শেষ করেছে, অথবা দেশের প্রচলিত নোংরা রাজনীতিতে জডিয়ে গেছে, তাকে নিয়ে পরিবার ভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা করে। যেকোনোভাবে অর্থের ব্যবস্থা করে তাকে বিদেশ পাঠিয়ে দে। পরিবারের ধারনা, ঐ ছেলেটার দেশে কিছু করে চলার মত তার যোগ্যতা নেই, বিদেশ গেলে যেকোনোভাবে কিছুনা-কিছুতো আয় করতে পারবে!!!
আরব-আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ৭৫% অশিক্ষিত। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার কারণে তারা এখানে ভাল চাকুরী পায়না। তারা আরবীদের ঘরে, খেজুর বাগানে, পশুর খামারে অথবা নির্মানশিল্পে সাধারণ শ্রমিকের কাজ করে। তারা যে বেতন পায়, ঐ টাকা দিয়ে এখানে নিজে ভালভাবে চলতেও কষ্ট হয়ে যায়।
জীবনের ঝুকি নিয়ে তারা যেভাবে কাজ করে, সেভাবে তারা কাজের মূল্যায়ন পায়না। অনেক সময় দেখা যায়, মাস শেষে ঠিকমত বেতনটাও পায়না।
জীবনের ঝুকি নিয়ে খেজুর গাছ পরিস্কার করতেছে...
প্রচন্ড গরমেও সবজি বাগানে কাজ করতেছে।
এই অবস্থায় তারা চাকুরীর পাশাপাশি কিছু বাডতি আয় করার চেস্টা করে। এই বাডতি আয় করতে গিয়ে তারা এমন কিছু অবৈধ ও নোংরা কাজ করে পেলে যার জন্য প্রতিনিয়ত দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে!!! সামান্য দু-চার দিরহামের জন্য দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করতে তারা একটু ও চিন্তা করেনা। এদের কল্যানেই আরব-আমিরাতের বাংলাদেশিরা একটা নোংরা জাতি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। যার ফলে আমিরাত সরকার বাংলাদেশি শ্রমিকের প্রবল চাহিদা থাকা সত্তেও ভিসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে!!! আরব-আমিরাত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে(হাছিনাকে) অনুরোধ করা সত্বেও দুবাই এক্সপো কে ভোট না দিয়ে রাশিয়াকে ভোট দেওয়ার কারণে আরব-আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা চালু করার সব পথ আপদত বন্ধ হয়ে আছে। এমনকি ২০১৪ এর শেষের দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা আরব-আমিরাত সফরে আসলে আরব-আমিরাত সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনার প্রতি কোন ভাল আচরনও দেখায়নি, ভিসা চালু তো অনেক দুরের কথা! যা আমাদের জন্য খুব লজ্জাকর।
২৫% শিক্ষিত প্রবাসী বাংলাদেশি যারা আরব-আমিরাতে কর্মরত আছেন, তাদের সর্বনিম্ন বেতন ও বাংলাদেশের একজন ম্যাজিস্ট্রেট এর চেয়ে বেশি!!! তারা প্রতিনিয়ত ভাল কাজ করলেও তা ঐ ৭৫% অশিক্ষিতদের খারাপ ও নোংরা কাজের নিচে চাপা পড়ে যায়!!! এখানে অনেক বড বড় বাংলাদেশি অফিসার আছেন যারা নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করেন!!!
সন্মানীত ভাই ও বন্ধুগন আপনারাই বলুন, প্রথম থেকে যদি আমাদের শিক্ষিত ও মেধাবীরা বাংলাদেশে একটা চাকুরীর আশায় বছরের পর বছর না ঘুরে বিদেশ আসতো, তাহলে দেশের ভাবমূর্তি কি উজ্জল হতোনা??? বিগত সরকার গুলো যদি অদক্ষ শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং শিক্ষিত বেকারদের মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের কে বিদেশের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে বহিঃবিশ্বে পাঠানোর ব্যবস্থা করতো, তাহলে তারা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে বহিঃবিশ্বেও নিজেদের একটা পজিশন করে নিতে পারতো, দেশের সুনাম বাড়তো, দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল হতো।
দিল মোহাম্মদ মামুন
আবুধাবি, আরব-আমিরাত
বিষয়: বিবিধ
১৬৯০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাইয়া আপনার এই কথাটার সাথে মোটে ও একমত হতে পারলাম না । শিক্ষিত ও মেধাবীরা দেশে ও বেকার থাকে না আমার মনে হয়, আর তারা আমাদের দেশের সম্পদ দেশের উন্নতি ,উন্নয়নের জন্য তাদের দেশে থাকাই প্রয়োজন ।
আমার মতে বিদেশ যাবে তারাই যারা দেশে কিছু করতে পারছে না বেকার ,শিক্ষাগত যোগ্যতাও কম ,দেশকে কিছু দিতে পারছে না অনন্ত বিদেশ গিয়ে দেশের জন্য রেমিট্যান্স আনতে পারে ।
সুন্দর বিষয়ে কলম ধরায় অনেক ধন্যবাদ আপনাকে! তবে,আপনার মতামতের সাথে পুর্ণ একমত আমিও না!
প্রবাসে শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে কাজে দক্ষতা বেশী জরুরী। কম শিক্ষিত নয় বরং অদক্ষ শ্রমিক বাংলাদেশের বেশী বলেই এমন অবস্হা।
মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জনশক্তি থাকলেও এদের ম্যাক্সিমামই খুব একটা শিক্ষিত না । ফলে ঐ সব দেশের ধারনা হয়ে গেছে যে বাংলাদেশে শিক্ষিত লোক ডাক্তার , ইন্জিনিয়ার এসব থাকতে পারে না ।
এসব অর্ধশিক্ষিত ও অদক্ষ লোকদের বেতনও ধরা হয় খুব কম । যেহেতু অদক্ষ , তাই এদের মন আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে যে তাদেরকে বেশ রুঢ়ভাবেই ট্রিট করা হবে , যা দেয় তাই সই ।
বাংলাদেশ সরকারও এসব দেশের সাথে ভালভাবে লিঁয়াজো করতে পারে না । দেখা যায় যে কোরিয়া থেকে যে নার্স নিয়েছে তার বেতন বাংলাদেশী ডাক্তারের চেয়ে বেশী । স্বাভাবিক ভাবেই এটা একজন ডাক্তারের কাছে অপমানজনক।
সরকারের রেমিটেন্স পেলেই হল। ওরা সেখানে গুন্ডামী , মাস্তানী করছে নাকি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করছে - সেটা বিবেচ্য নয়।
এসব মনিটরিং না করার ফলে দেখা যায় যে একসময় কোন দেশ বাংলাদেশীদের আর নিতে চায় না । হাজার দেন দরবার করেও তা আর ফিরে পাওয়া যায় না । এর ফাঁকে আরেক দেশ পজিশন নিয়ে ফেলে।
http://www.monitor-bd.net/blog/blogdetail/detail/10481/4341216/57783#.VdHIpbKqqkp
-ভিসাবন্ধ হওয়ার কারণ কি অদক্ষ শ্রমিকের জন্য নাকি অন্য কোন কারণ?
আমরা তো জানি ওয়ার্ল্ড এক্সপো তে ভেঅট না দেওয়াই শ্রমিক নেয়া বন্ধের কারণ। আমার কাছে এই মুহুর্তে বাংলাদেশে পত্রিকাতে ছাপানো রিপোর্টটি নেই। থাকলে প্রেস করা যেত..
মন্তব্য করতে লগইন করুন