জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সরকারের সাহসী পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যত কর্মকৌশল
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৩ আগস্ট, ২০১৭, ০৪:৩৯:৪৪ বিকাল
একজন মানুষ কীভাবে জঙ্গীতে পরিণত হচ্ছে তার ভেতরের বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবছি না। মানুষ থেকে জঙ্গীতে রূপান্তরের জন্য আমাদের ডারউইনের বিবর্তনবাদের মতো জটিল বিষয় বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন প্রকৃত বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা। সম্প্রতি জঙ্গীবাদের ঘটনাগুলো মানুষকে আতঙ্কিত করেনি বরং মানুষের মধ্যে এর বিরুদ্ধে এক ধরনের সচেতনতা ও প্রতিরোধের মনোভাব গড়ে তুলেছে। এটি আমাদের জন্য নিশ্চয়ই আনন্দের। বিশ্বের কিছু দেশ বাংলাদেশের জঙ্গীবাদ নিয়ে তোলপাড় করলেও তারা তাদের দেশে জঙ্গীবাদকে নির্মূল করতে তো পারেইনি বরং এর উল্টো চিত্রটি চোখে পড়ছে। তাদের আক্রমণগুলো তারা আইএসের হামলা না বলে অন্যভাবে বলার চেষ্টা করছে কিন্তু আমাদের দেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও তা প্রমাণ করার চেষ্টায় দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এখানে আমাদের ভাবনার জগতটাকে আমরা প্রসারিত করতে পারছি না। মানুষের ভাবনা যখন বাস্তবতাকে বিবেকের আয়নায় দেখতে পায়, তখন জঙ্গীবাদের শিকড় ওদের থাকে না। বিভিন্নভাবে আমরা জঙ্গী দমনের কথা বলে থাকি কিন্তু তরুণদের ভাবনার দিগন্ত উন্মোচনের কথা ভাবি না। যদি ভাবতে পারতাম তবে কখনও একজন তরুণ জঙ্গীবাদের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করত না। আমাদের দেশে জঙ্গীবাদের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে যাদের পরিচয় পাচ্ছি তারা কানাডা, মালয়েশিয়া, আমেরিকা অথবা ইংল্যান্ড ফেরত অথবা সেই দেশগুলোতে বসে বাংলাদেশে কীভাবে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানো যায় তার নীলনক্সা আঁকছে। সুদূর প্রবাসে ধর্মান্ধ ও জঙ্গীগোষ্ঠী সেই মেধাবী ছাত্রটির একাকিত্বের সুযোগ গ্রহণ করছে। তারা প্রথমে তার সঙ্গে বিভিন্নভাবে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কৌশল অবলম্বন করছে। তার অভাব অনটনগুলো পূরণ করছে। এভাবে তরুণ মেধাবী ছাত্রটির মন জয়ের চেষ্টা করছে ও তাদের ভ্রান্তমতাদর্শে তাকে আকৃষ্ট করছে। এরপর সেই ছেলেটি যখন উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে আসছে তখন তার ব্যক্তিত্বের প্রকৃত বিকাশ না ঘটে সংকীর্ণ ও উগ্র মনোবৃত্তির লক্ষণগুলো প্রকট হয়ে উঠছে। একসময় সে যেভাবে জঙ্গীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল একইভাবে সে তার ছাত্রদের জঙ্গীবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে যারা দেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে তাদের প্রকৃত সংখ্যা এবং বিদেশে তাদের চলাফেরা ও অন্যান্য কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না। ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইমো, স্ক্যাইপি ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানোর প্রচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ থেকে যারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জন করেছে তাদের মাধ্যমেও অপপ্রচারের ব্যাপারটি ঘটছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চাকরি নিয়ে যারা অবস্থান করছে তাদের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ পর্যায়ে সরকারের এর বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ ও কর্মকৌশল গ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যে দূতাবাসগুলো রয়েছে তারা তাদের জনবল বাড়িয়ে সেখানে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশীকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে আনতে পারে। তবে জঙ্গীবাদ বিস্তারে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা উচিত হবে না। অনেক বাংলাদেশী বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এছাড়া আমাদের অর্থনীতিতে বিদেশ থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের অর্থ আমাদের অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। শুধু দরকার বিদেশে অবস্থানরত সকল নাগরিকের প্রতি নজরদারি বাড়ানো ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বিষয়: বিবিধ
৫৬১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত খুন-হত্যা, গুম, অপহরণ, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডগুলোকে সরকার ছলচাতুরি ও প্রতাতরণার মাধ্যমে ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছে। দেশের গণমাধ্যমগুলোকেও এসব ঘটনার কোনো সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে দিচ্ছে না। দুয়েকটি গণমাধ্যম সাহস করে এসব ঘটনার অন্তরালের রহস্য উম্মোচন করার চেষ্টা করলেই তাদের ওপর নেমে আসছে মামলা-হামলার খড়গ।
দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের নেতিবাচক দিক নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন বা তথ্যও ধামাচাপা দিয়ে জনগণের কাছে উল্টোটা প্রচার করছে সরকার। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। এসব নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শুধু প্রতিবাদই করছে না, আসল ঘটনাও তারা বাংলাদেশের জনগণকে জানিয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সভা থেকে দেশে ফিরে সরকারের লোকজন দাবি করেছে যে, ইউনেস্কো রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে তাদের আপত্তি তুলে নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও দেশবাসীকে জানিয়েছে যে ইউনেস্কো তাদের আপত্তি তুলে নিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে যে, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১ তম অধিবেশন শেষে ইউনেস্কো জানিয়েছে তাদের আপত্তি বহাল আছে। এনিয়ে এখন সারাদেশে তুলকালাম কাণ্ড চলছে।
সর্বশেষ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে সরকারের আরেক ভয়াবহ প্রতারণার তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। এ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকেই এর মান নিয়ে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও আইন বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সরকার তার নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এটাকে কাচের গ্লাসের মতো স্বচ্চ দাবি করে জামায়াতের ৫ জন ও বিএনপির ১ জন শীর্ষ নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে।
জানা গেছে, নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত(আইসিসি) এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের গঠিত এই ট্রাইব্যুনালকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালের ওপর সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
গত জুন মাসে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে (আইসিসি) গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি দেশে ফেরার পর সুপ্রিম কোর্ট একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে বলা হয়, নেদারল্যান্ডস এর হেগ এ অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট রোম সনদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ এর বিচারহীনতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের প্রশংসা করেছে। আইসিসির প্রেসিডেন্ট সিলভিয়া ফার্নান্দেজ ডিগার্মেন্ডি এবং ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়ার্ট সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সাথে হেগ এ এক আলোচনায় এ প্রশংসা করে।
এ সংবাদ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তাদের ভাষ্য, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট (আইসিসি প্রেসিডেন্ট) ও ডেপুটি প্রসিকিউটরের বৈঠকের ওপর বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এমন বিভ্রান্ত রিপোর্টের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করছে আইসিসি। এতে আরও বলা হয়, এই রিপোর্টগুলোতে বিভ্রান্তিকরভাবে আইসিসির প্রেসিডেন্ট এবং ডেপুটি প্রসিকিউটরকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তাদের উদ্ধৃত করে বাংলাদেশে চলমান বা আগে হওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশংসা করেছে বা সন্তুষ্টি প্রকাশের খবর ছাপা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও এঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ‘দি কোর্ট (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট) একটি নোট ভারবাল (আনুষ্ঠানিক পত্র) দিয়েছে, অত্যন্ত অপমানজনক আমাদের জন্য। আইসিসি বাংলাদেশের জড়িত কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে, এ বিষয়ের ওপর প্রেস রিলিজটি যাচাই করে দেখার জন্য। এটা নিশ্চয়ই বিব্রতকর।
সর্বশেষ জানা গেছে, প্রশংসা কুড়ানোর জন্য সুপ্রিমকোর্ট যে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, সেটি এখন সরিয়ে ফেলেছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এই প্রতিবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এনিয়ে আবার বইছে সারাদেশে সমালোচনার ঝড়। কেউ কেউ বলছেন, এতদিন ধরে সরকার যেসব রাসায়নিক দ্রব্য চাপা দিয়ে রেখেছিল তা এখন বিস্ফোরিত হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, একে একে থলের বিড়াল সব বেরিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ইস্যুতে দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। ভুল তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে আসছে। শেষ সময়ে এসে এসব এখন আস্তে আস্তে ফাঁস হচ্ছে। বেরিয়ে আসছে আসল ঘটনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন