ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষা

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ৩১ জুলাই, ২০১৭, ০৬:০৬:৫৯ সন্ধ্যা

বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের হার বেড়েছে। সরকার চেষ্টা করছেন মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রদানের জন্য। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এখনও অনেক শিক্ষার্থী এমন সব বিষয় পড়তে আগ্রহী যার কর্ম বাজারে চাহিদা অনেক কম। অন্যদিকে দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিন্তু কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী নয়। সম্প্রতি দেখা যায় যে, একটি পাবলিক লিমিডেট ব্যাংকে ২৬৭টি পদের বিপরীতে ২৫ লাখ আবেদন করেছে, যার মধ্যে বিবিত্র-এমবিএ পাস হচ্ছে ২৩ লাখ। আসলে জনসংখ্যার যে উর্ধগতি সেক্ষেত্রে কর্ম উপযোগী শিক্ষার জন্য সরকার নানামুখী ব্যবস্থা নিলেও একটি অতিরিক্ত জনসংখ্যাপ্রবণ দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সহজ বিষয় নয়। উপরন্তু এ দেশের কিছু ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা-শিল্পপতি আমাদের তরুণ-তরুণীদের কাজে না লাগিয়ে দেশের বাইরে থেকে লোকবল নিয়োগ করে থাকে। এটি প্রয়োজনেও করে থাকে, আবার জাতে ওঠার জন্যও করে। এ দেশ থেকে প্রতিবছর অফিসিয়াল চ্যানেলে ৭০০ কোটি টাকার মতো বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেছনে চলে যাচ্ছে। ২০১৫-১৬ লেবার সেনসাস অনুসারে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় কাজ করে ৮৭%-এর বেশি। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় কাজ করে ১৩%-এর একটু বেশি। বর্তমান সরকার দেশের যে উন্নয়ন করছে তা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার প্রয়াস নিয়েছে। অথচ এ প্রয়াসটি মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমেই হচ্ছে। সরকার যেহেতু জনদরদী সেজন্য যে কোন উপায়েই হোক না কেন উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে চাইছে। এজন্য অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়নের বেশ বড় ভূমিকা পালন করছে। সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য ডিজিটালাইজেশনের ব্যবস্থা নিয়েছে, মানুষ ধীরে ধীরে এর সুফল পাচ্ছে। অনেক কাজ এখন সহজ হয়ে গেছে, ক্ষেত্র বিশেষে দুর্নীতিও কমছে। বর্তমানে ডিজিটালাইজেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ জন্য যারা সেবা দিচ্ছে আর যারা সেবা নিচ্ছেন এ দু’পক্ষের মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য থাকা দরকার। নচেৎ জালিয়াতি এবং আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা, বিশেষত উচ্চশিক্ষাকে দেশের কর্মবাজার উপযোগী তৈরির প্রয়াসে স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি একটি শুভ উদ্যোগ। এ পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি বাস্তবায়নও করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সমস্যাও প্রচুর। জনসংখ্যার আধিক্য হ্রাস করার কোন উপায় নেই। এটির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করতে গেলে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী অপপ্রচার চালাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ যে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে তার মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে বর্তমান সরকারের দূরদর্শীতা। প্রতিটি সেক্টরেই সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর দিকনির্দেশনা এবং উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের উপায় বাতলে দেয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে মান উন্নয়নের সামগ্রিক পরিবেশ উন্নত করতে হলে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি শিক্ষাবিদদের মধ্যেও শিক্ষকসুলভ মনোভাব জাগ্রত করতে হবে। এক্ষেত্রে এখনও অনেকের মধ্যে যে নোংরামীর মনোভাব আছে, তা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ভাল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করা বাঞ্ছনীয়। শিক্ষার উন্নয়নের জন্য শিক্ষককে যথাসময়ে ক্লাসে যেতে হবে। তবে বিদ্যমান কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হলে অবশ্য শিক্ষক ছাড়াও অভিভাবকদের সহায়তা প্রয়োজন। আবার যে সমস্ত শিক্ষক প্রশ্ন ফাঁস করে তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কেউ যেন অন্যের গবেষণাকর্ম নিজের নামে চালিয়ে না দেয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, শ্রমবাজারমুখী শিক্ষাই দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অতএব দেশের সার্বিক উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে এ দেশের জন্য কর্মমুখী শিক্ষা অতিগুরত্বপূর্ণ। কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই আমাদের নতুন প্রজন্ম ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে সক্ষম হবে।

বিষয়: বিবিধ

৫২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File