আসুন পিতা-মাতার যোগ্য সন্তান হিসেবে শপথ করি

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২৭ জুলাই, ২০১৭, ০৩:৩৯:২৬ দুপুর



আমাদের দেশে যৌথ পরিবারের বদলে একক পরিবার একচ্ছত্র জায়গা করে নিচ্ছে। মূলত মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিকভাবে একক পরিবারের সুবিধা বিবেচনাপ্রসূত এর চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জীবন সায়াহ্নে দণ্ডায়মান পরিবারের বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ওপর। কেননা, অধিকাংশ শিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষের আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব, পরিবারের অতিরিক্ত সদস্যের দায়িত্ব নেয়ার প্রতি অনীহা, সংকীর্ণ মনমানসিকতা ও বাবা-মার প্রতি অবহেলার দরুন বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া মানুষগুলো সঙ্গীহীন অমানবিক জীবনযাত্রার সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিশুকাল, যৌবনকাল এবং বৃদ্ধকাল- সময়ের পরিক্রমায় এই তিনটি কাল একজন মানুষকে অতিক্রম করে যেতে হয়। একজন মানুষ তার সমগ্র জীবনে মোটামুটি তিনটি ধাপ অতিক্রম করে থাকেন। একটা শিশু তার এই সময়টা পিতা-মাতার আদর এবং ভালবাসায় বেড়ে ওঠে। অন্যের সাহায্য ব্যতীত কোন কাজ করাই তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ঠিক তেমনিভাবে এই জীবনের শেষের দিনগুলোও এমন আসতে পারে যে সেদিন আর কোন কাজ করার ক্ষমতাই মানুষের থাকবে না। সেদিন ওই মানুষটা তার প্রিয়জনদের সামান্য সহযোগিতা এবং ভালবাসা পেলে সুন্দরভাবে সমাজের বুকে বেঁচে থাকতে পারে। শিশুকালে পিতা-মাতা যেমন তাদের সন্তানকে নিজের বুকে আগলে রাখেন ঠিক তেমনিভাবে পিতা-মাতা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের ভালবাসার সঙ্গে বুকে টেনে নেয়ার দায়িত্ব তার সন্তানদের ওপর বর্তায়। এই দায়িত্বকে কেউই কোনভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না। যে সময়টাতে একজন মানুষের পরিবারের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা এবং সহমর্মিতা পাবার কথা সেই সময়টাতে সেই মানুষটা পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি অবহেলা লাঞ্ছনা। তা না হলে ষাটোর্ধ একজন পিতা কেন আজ নিজের অন্ন জোগারের জন্য রিক্সার প্যাডেল ঘোরাতে ব্যস্ত থাকবেন? কেন একজন পঞ্চাশ পেরুনো মা তার পেটের তাগিদে অন্যের বাড়িতে কাজ করবেন? শীতের রাতগুলোতে যে বৃদ্ধ মানুষগুলো ফুটপাথে শুয়ে থেকে সারারাত কাতরান তারাও কারও না কারও মা, কারও না কারও বাবা। তাদেরও ইচ্ছা হয় এই বয়সে এসে একটু সুখ ও স্বচ্ছন্দে জীবন অতিবাহিত করতে। বার্ধক্য ও ঠিক শিশুর মতো পরনির্ভরশীল সময়। এ সময় এদের আর্থিকভাবে যেমন অকুণ্ঠ সমর্থন আবশ্যক, তদ্রুপ এদের মানসিক প্রশান্তির জন্য তৃপ্তিকর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত আমাদের, বিশেষ করে সব সন্তানের। মানুষের জীবনে শিশুকাল এবং বৃদ্ধকালের মাঝে একটি বিশেষ মিল পরিলক্ষিত হয়। উভয় সময়েই একজন মানুষ থাকে অনেক বেশি অসহায় এবং অনেক বেশি দুর্বল। যেই ছেলে বা মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে, লেখা-পড়ার খরচ যোগাতে একসময় এই বাবা নিজের সব সুখ বিসর্জন করে দিয়েছে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করেছে, নিজের জমানো সম্পদ-ভিটেমাটি সব বিক্রি করে দিয়েছেন সেই বাবার জন্য একটু জায়গা কিন্তু এদের বাসস্থানে হয় না। যে মার বুকের দুধে নিজের সন্তানের দেহ পুষ্ট ও বলিষ্ঠ হয়েছে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দুধ-কলায় মাখানো ভাত সন্তানের পেটে কেমনে যায়? উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে বার্ধক্যের হার শতকরা ৬.১ জন। এর মধ্যে একেবারে হতদরিদ্রের সংখ্যা শতকরা ৩৭ জন এবং একাকী জীবনযাপন করতে হয় শতকরা ২০ জনকে। যদিও বাংলাদেশ সরকার দেশে ১৭ লাখ বেকারের বার্ধক্য ভাতা প্রকল্প চালু করেছে। এছাড়াও সরকার ২০১৩ সালে মা-বাবার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করা এবং তাদের সঙ্গে সন্তানের বসবাস বাধ্যতামূলক করার বিধান করে সরকার ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩’ আইন পাস করে। পিতা-মাতার ভরণ পোষণ আইন ২০১৩-এর ৫ ধারার (১) অনুযায়ী, যদি কোনো প্রবীণ তাঁর সন্তানদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আনেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। শাস্তির ভয়ে নয় নিজেদের দায়িত্ববোধের অবস্থান থেকে আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকেরই এ ব্যাপারে দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। আমাদের সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করা আমাদেরই নৈতিক দায়িত্ব। আজ থেকে আসুন পিতা-মাতার যোগ্য সন্তান হিসেবে শপথ করি, অযত্নে এবং অবহেলায় কোন পিতা-মাতাই আর বৃদ্ধাশ্রম নামক অন্ধকূপে পড়ে থাকবে না। আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষের মুখেই থাকবে সুখের দীপ্তিময় হাসির রেখা।



বিষয়: বিবিধ

৫৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File