পাহাড়ে ধস কেন হয়?
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২৩ জুলাই, ২০১৭, ০৪:০৯:৩১ বিকাল
পাহাড়ে নির্বিচারে বসতি স্থাপনের কারণেই ঘটছে একের পর এক ধসের ঘটনা। পাহাড় ধসে গত ১৮ বছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মারা গেছে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক ব্যক্তি। দেশের অন্যান্য জায়গার পাহাড়গুলোর তুলনায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়গুলোর বয়স কম। তাই পাহাড়গুলোর গঠন অনেকটাই দুর্বল। এই দুর্বল গঠনের কারণেই অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটাতে বর্ষাকালের বৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত পাহাড়গুলো ধসে পড়ছে। এ ছাড়াও নির্বিচারে পাহাড়ি বনভূমির গাছ কাটাতে একসময় গাছের গোড়াগুলো পচে যায়। এ পচা অংশ দিয়ে পানি সহজেই পাহাড়ের ভিতর প্রবেশ করে। এটাও এ অঞ্চলের পাহাড়ধসের আরেকটা কারণ। ইতোমধ্যে পাহাড়ধসের মূল চারটি কারণ চিহ্নিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করা, এ অঞ্চলের পাহাড়ের মাটির গঠন, নির্বিচারে কাটার ফলে পাহাড়গুলোর কোণ ৭০ থেকে ৯০ ডিগ্রিতে পরিণত হওয়া এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে নির্বিচারে গাছ কেটে পাহাড় ন্যাড়া করা। তাছাড়া জিও সায়েন্স অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় পাহাড়ধসের জন্য দুটি অন্যতম কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ দুটির একটি প্রাকৃতিক। অন্যটি মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে। প্রকৃতিসৃষ্ট কারণ হলো, পাহাড়ের ঢালে যদি বেশি গর্ত থাকে, তখন অতিবৃষ্টিতে তা ধসে পড়ে। এ ছাড়া ভূমিকম্প, পাহাড়ের পাদদেশের নদী ও সাগরের ঢেউ থেকেও ধস হতে পারে। মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বিচারে গাছ কাটা, মাটি কেটে ফেলা, পাহাড়ে প্রাকৃতিক খাল বা ঝরনার গতি পরিবর্তন, পাহাড়ের ঢালুতে অতিরিক্ত ভর দেওয়া এবং খনির জন্য গভীর কূপ খনন। উপজাতিরা পাহাড়ে ঘর তৈরি করলেও তারা কখনো পাহাড় কাটে না। তারা আকৃতি অপরিবর্তিত রেখে পাহাড়ের উপযোগী করে ঘর তৈরি করে। তাই উপজাতি-অধ্যুষিত এলাকায় ধসের ঘটনা খুব একটা ঘটে না। কিন্তু সমতল থেকে যেসব লোক পাহাড়ে গিয়ে বসতি গড়ে, তারা পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করে। তাই বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এই সমস্যা মোকাবেলায় অনতিবিলম্বে পাহাড়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করতে হবে, তবে উচ্ছেদকৃত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা করতে হবে। এ দেশে পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্টের মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মূলে থাকা অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধ করতেই হবে - নইলে কোনোভাবেই থামানো যাবে না পাহাড় ধসে মৃত্যুর এ মিছিল।
বিষয়: বিবিধ
৫৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন