নিঃশব্দ সাইবার হামলা

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ১৬ জুন, ২০১৭, ০৩:৪৬:৫০ দুপুর

সময়ের বিবর্তনে আজ বদলে গেছে প্রেক্ষাপট, অপরাধ আর সন্ত্রাসের জন্য এখন আর মারণাস্ত্র বহনের প্রয়োজন হয় না। সমগ্র বিশ্বব্যাপী অপরাধীরা আজ অস্ত্র ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নামীদামি কম্পিউটার, কার্ড, স্মার্টফোন দিয়ে সাইবার অপরাধের মাধ্যমে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র তথা সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থাকে ভীত-স্বন্ত্রস্ত করে তুলেছে। দেশবাসীর জন্য এই নব্য আগ্রাসনের দৃশ্যমান দৃষ্টান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার ফিলিপাইনের ক্যাসিনোর জুয়ার আসরে চলে যাওয়া। সম্প্রতি র্যা নসমওয়্যার ভাইরাসের আক্রমণে বিশ্বব্যাপী লক হয়ে যাওয়াসহ প্রতিটি কম্পিউটারের মনিটরে একটি বার্তা ভেসে উঠেছিল। তাতে আক্রান্ত প্রতিটি কম্পিউটার পুনরায় চালানোর জন্য ৩০০ থেকে ৬০০ ডলার মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অর্থাৎ মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে সব ডেটা, এনক্রিপশন উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নিমিষে। একেবারে যেন অপহরণের জন্য মুক্তিপণ চাওয়া! ‘র্যা নসম’ ও ‘ম্যালওয়্যার’ মিলিয়ে এই হানার নাম দেয়া হয়েছে ‘র্যা নসমওয়্যার’। ‘ট্রোজান ভাইরাসের’ মতো এ ধরনের ম্যালওয়্যার এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে বহু দেশই নিজেদের জন্য জাতীয় পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তা কৌশল তৈরি করেছে। এ দেশে অদ্যাবধি সাইবার আগ্রাসনে ব্যাপক কোন বিপর্যয় না হলেও সম্ভাব্য আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ছিঁচকে চোরের মতো নিরিবিলি কাজ সারার এক মোক্ষম অস্ত্র সাইবার হামলা। যে হামলার কার্যকারিতা ব্যাপক। অথচ সাইবার যুদ্ধে ধ্বংস বা রক্তপাত নেই, সবচেয়ে বড় কথা নেই কোটি ডলার খরচের দায়ভার। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো তাদের শক্তি ও সক্ষমতা দেখিয়ে থাকে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ছাড়াও সময়োপযোগী বিভিন্ন সুসজ্জিত বাহিনী নিয়ে। তবে সময় পাল্টে গেছে, আজ প্রতিটি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ এমনকি পারমাণবিক গবেষণাগারও হয়ে উঠেছে সাইবার হামলার লক্ষ্য। প্রচলিত নিরাপত্তা সক্ষমতা এই হুমকির মুখে অসহায়। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে ইরানের পারমাণবিক গবেষণা ব্যাহত করতে সাইবার হামলায় ‘স্টাক্সনেট’ নামে একটি ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। এ গুপ্তচরবৃত্তি ধরা পড়েছে অনেকদিন পরে। যৌক্তিকতা বিবেচনায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ তাই সাইবার অপরাধীদের দৌরাত্ম দমনে নিরাপত্তা খাতে স্থায়ীভাবে যুক্ত করেছে সাইবার নিরাপত্তা শাখা। কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভৌগলিক অখন্ডতা রক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব সামরিক গুরুত্বের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সাইবার ইস্যু তাই আজ পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়েও বেশি আলোচিত। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে হিরোশিমা নাগাসাকির পারমাণবিক বিপর্যয়ের চেয়েও মারাত্মক ও ভয়াবহ কোনো বিপর্যয়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় এই নিঃশব্দ হামলার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিরক্ষা নিশ্চিতে আমাদের দেশও অনতিবিলম্বে রাষ্টীয় উদ্যোগে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সময়োপযোগী উদ্যোগ নিবে এটাই প্রত্যাশিত, ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে বেশকিছু পদক্ষেপও গৃহিত হয়েছে। তবে সার্বিক সাইবার নিরাপত্তায় রক্ষায় রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে সচেতন ও উদ্যোগী হতে হবে। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এদেশে গড়ে উঠবে সাইবার নিরাপত্তার দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা ব্যুহ, নিঃশব্দ সাইবার হামলার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ – এটাই আজ প্রত্যাশিত। আর তাহলেই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিরাপত্তা।

বিষয়: বিবিধ

৬২২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383363
১৭ জুন ২০১৭ সকাল ১০:৫৭
হতভাগা লিখেছেন : মিরপুরের অক্ষ্যাত এক কলেজের ( সম্ভবত প্রশিকার কাছে)কম্পিউটার সাইন্সে পড়া এক ছেলে বেশ কয়েক বছর আগে র‍্যাবের কোন এক ওয়েব সাইট হ্যাক করেছিল। গ্রেফতার হলে সে বলেছিল সে র‍্যাবের আিটি বিশেষজ্ঞদের চেয়ে কম্পিউটার বিষয়ে তার দখল বেটার।

সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইট দেখলে মনে হয় এসব খুবই কাঁচা হাতের তথাকথিত এক্সপার্টদের হাতে তৈরি করা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File