জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করবে কারিগরি শিক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২৭ মে, ২০১৭, ০৪:৩৪:৫০ বিকাল
আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে টিকে থাকতে বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন। দেশের এই জনসংখ্যাকে অনেকেই অভিশাপ মনে করেন, কিন্তু এই জনংসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে তাদেরকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ লোক কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত, আর আমাদের দেশে এর হার হচ্ছে মাত্র ১০ ভাগ। বর্তমান বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায়তনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেশের মোট শিক্ষার্থীর শতকরা ২০ ভাগে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের দেশ-বিদেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউগুলোতে যুগোপযোগী নিত্যনতুন টেকনোলজি বা বিভাগ চালু করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করছে সরকার। পলিটেকনিক গ্রাজুয়েটদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে তাদের সহজ শর্তে ঋণও প্রদান করা হচ্ছে। এক ই সাথে তাদের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থানের অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করার জোর তৎপরতা চলছে। অদক্ষ জনশক্তির চেয়ে কারিগরি শিক্ষায় পারদর্শী জনবল বিদেশে পাঠাতে পারলে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ ২-৩ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশে দক্ষ জনশক্তির প্রসার ঘটাতে ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে সারাদেশের বর্তমান কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক মানোন্নয়ন কাজ চলছে। দেশের বর্তমান কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রতিটি জেলায় আধুনিক মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হচ্ছে। ৪ বছর মেয়াদি প্রকৌশল ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রম অনুসারে পর্যাপ্তসংখ্যক পাঠ্যপুস্তক এবং ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। তেজগাঁওস্থ টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে আরও সম্প্রসারিত করে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এব্যাপারে কারিগরি শিক্ষার্থীদের শিল্প কারখানায় বাস্তব প্রশিক্ষণকে ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে কারখানা মালিককের উদ্বুদ্ধ করতে বর্তমান শিক্ষা বিভাগও উদ্যোগী। কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং সেলের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা হচ্ছে। মধ্যম স্তরের প্রকৌশলীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও কাজের সঠিক মূল্যায়নসহ দেশের উন্নয়নের ধারায় তাদের অধিকতর সম্পৃক্ত করা হলে তা দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সহায়ক হবে যা পক্ষান্তরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের সব উন্নয়ন কর্মকান্ডে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি জড়িত। সেবামূলক জরুরি কর্মকান্ডও তাদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমনকি বিদেশে কর্মরত দক্ষ জনশক্তির সিংহভাগই ডিপ্লোমা ও স্নাতক প্রকৌশলী এবং তারা সুনামের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে চাকরি করে দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। প্রকৌশলীদের পেশাগত জ্ঞান, কর্মদক্ষতার ওপর যেমনি নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন কাজের মান ও গতিশীলতা তেমনি তাদের ক্রিয়াশীল ভূমিকা গড়ে তোলে দেশের আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধি। কারিগরি শিক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকার দিন বদলের যে ঘোষণা দিয়েছে, সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে মধ্যম স্তরের কারিগরি শিক্ষা বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ডিপ্লোমা প্রকৌশল শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে তা নিঃসন্দেহে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতেও সাহায্য করবে।
বিষয়: বিবিধ
৭৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন