ভুলার নয় ৫ মে’র সেই বিভীষিকা

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৫ মে, ২০১৭, ০৪:৪২:৪২ বিকাল

বহুদিন গত হয়েছে। বদলে গেছে অনেক কিছু। তাই বলে ৫ মে’র বিভীষিকা কী করে ভুলবে শহর ঢাকার মানুষ? ২০১৩ সালের এই দিনে ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী শহর ঢাকার বুকে যে ক্ষতচিহ্ন এঁকে দিয়েছিল, তা আজও দগদগে ঘা হয়ে আছে। শান্তির ধর্মের বিপরীতে দানবের চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। প্রিয় শহর ঢাকা এক রকম দখলে নিয়েছিল। ইসলাম রক্ষার নাম করে রাজধানীতে প্রবেশ করেছিল মৌলবাদী গোষ্ঠী। সংগঠনের অজ্ঞ-অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত-ধর্মান্ধ কর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতাকারী অপশক্তি জামায়াত-শিবির। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে হেফাজতের ঘাড়ে চড়ে বসে এই দৈত্য। এর পর শুরু হয় তা-ব। মতিঝিল, পল্টন, বিজয়নগর, গুলিস্তান, নয়াপল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকা দখলে নিয়ে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায় মানুষরূপী দানবরা। টেলিভিশনে দৃশ্যগুলো সরাসরি দেখানো হয়। ভালবাসার শহরকে চোখের সামনে জ্বলেপুড়ে ছাই হতে দেখেন নগরবাসী। এর পরদিন অবশ্য কান ধরে উঠ-বস করেই বিদায় নেয় হেফাজত। তবে সেই দুঃসহ অতীত ভোলার নয় কোনদিন। ঘটনার পর টানা কয়েকদিন গোটা এলাকা ঘুরে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি বিবেকবান মানুষ। প্রিয় শহরের মানুষের ওপর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিসের ওপর এমন হামলা ছিল নজিরবিহীন। ঘটনার পর কয়েকদিন গোটা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ধ্বংসস্তূপ। উগ্রবাদীরা যা সামনে পেয়েছিল তাই ভেঙ্গে-গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। পুড়িয়ে দিয়েছিল। পল্টনের ফুটপাথে পুরনো বইয়ের বেশ কিছু দোকান। অস্থায়ী দোকান ছিল। ছিল কয়েকটি স্থায়ী দোকানও। সব মিলিয়ে ৩৮টি। কিভাবে যেন পাঁচটি বেঁচে যায়। বাকি সব দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়। দাউ দাউ করে হাজার হাজার বই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। একই সময় উন্মাদরা পাশের মুক্তিভবনে কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ে আগুন দেয়। আগুন ছড়িয়ে যায় আশপাশের বিভিন্ন অফিসে, দোকানে। ওই ভবনের দোতলার উত্তরা ব্যাংকের শাখাটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পল্টনের র্যাং গস ভবনেও ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়। আগুন দেয়া হয় কেএফসির শোরুমে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ভবনের দিকে তো তাকানোই যাচ্ছিল না। এই চোখ আগে কোনদিন দেখেনি এমন বর্বরতা। ভবনটির নিচতলায় ছিল জনতা ব্যাংকের শাখা। সেটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করে দিয়েছিল হেফাজতীরা। শাখাটির ভেতরে-বাইরে পুড়ে একরকম ছাই হয়ে গিয়েছিল। আগুনে পুড়ে যায় পাশে থাকা আইডিয়াল প্রোডাক্টসের শোরুম। ভবনের ভেতরের অংশে বড় খোলা জায়গা। এখানে সব গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি রাখা ২৪টি গাড়িতে সেদিন আগুন দেয়া হয়। বাকি গাড়িগুলোতে চলে ভাংচুর। হেফাজতীরা ভবনের দুই গেট দিয়ে স্রোতের মতো প্রবেশ করে। সবাই বের হতে না হতেই আগুন ধরিয়ে দেয় সবখানে। ভবনে আরও ছিল আয়কর বিভাগ, প্রধান হিসাব নিরীক্ষণ কর্মকর্তা (জনপ্রশাসন), বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড ও যুবক কমিশনের কার্যালয়। সেগুলোও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ধর্মের নামে যে ধ্বংসযজ্ঞ তা থেকে সেদিন বাদ যায়নি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমও। মসজিদটির বাইরের দেয়ালে বহুদিন ছিল আগুনে পোড়া দাগ। সেদিন মসজিদের দক্ষিণ গেটে কোরান শরিফ ও হাদিসের বই পুড়িয়ে দিয়েছিল অন্ধের দল। টুপি, আতর, সুরমা কিংবা মেসওয়াক কোনটিই বাদ যায়নি। পুরো ঘটনায় বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত যেমন হয়েছেন তেমনি বেদনাহত হয়েছেন শহরের অধিকাংশ মানুষ। এই ঢাকা চারশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী শহর। এখানে বহু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রচিত হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম, শিল্প, সাতিহ্য, সংস্কৃতির ঢাকায় এমন বর্বরতা অকল্পনীয়। ইসলামের নামে এরকম ঘৃণ্য কর্মকান্ড কোন মানুষই কামনা করে না।

বিষয়: বিবিধ

৭৪১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382913
০৬ মে ২০১৭ দুপুর ১২:৩১
হতভাগা লিখেছেন : বঙ্গবন্ধু বা হাসিনার ছবি আওয়ামী বা তার অংগ সংগঠনের কেউ যেমন পুড়িয়েছে বললে সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় , তেমনি যেসব ছাত্রদের মূল পাঠ্য বিষয় হচ্ছে ক্বুরআন - হাদিস যারা সবসময়ই ক্বুরআন হাদিস নিয়ে পড়াশুনা করে এবং সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করে - তাদের বিরুদ্ধে ক্বুরআন পোড়ানোর বিষয় শুনলে একই রকম কষ্ট হয় ।

ঐ দিন কাকরাইল মোড় থেকে পল্টনের মোড় পর্যন্ত সড়কের আইল্যান্ডে যত বড় বড় গাছ ছিল সেগুলো কেটে ফেলেছি হাঙ্গামাকারীরা । আমরা যারা সেসব জায়গা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করি তারা সবসময়ই এই রাস্তার দুই মাথায় বা তার কাছাকাছি সবসময়ই পুলিশ দেখতে পাই। সে সময়ে তো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশী পুলিশ থাকবার কথা । তারা কেন তাদের আশেপাশে ঘটা এ সমস্ত ম্যাসাকার হতে দিল? জনগনের জান ও মালের নিরপাত্তা দিতে কি পুলিশ নির্দেশিত নয় ?
382917
০৬ মে ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
আবু জান্নাত লিখেছেন : ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর ও বায়তুল মোকাররম এলাকার ঘটনা নিয়ে ATN news আজ ৫ মে ২০১৭ তারিখে যে মিথ্যাচার করছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বাম রাম ও নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠীকে জানাতে চাই যে, শাপলা চত্বরের শহীদদের পবিত্র রক্তের বিনিময়ে এদেশে ইসলামের বিজয় নিশান উড়বেই ইনশাআল্লাহ ।
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম এদেশে নাস্তিকদের মুখোশ যেমন উন্মোচন করেছে, তেমনিভাবে জাগিয়ে দিয়েছে হাজারো তরুণের ঈমানী চেতনা ও জিহাদি জযবাকে।
আজকের রক্তমাখা এই দিনে আমাদের শপথ হোক শহীদদের প্রতি ফোটা রক্তের বদলায় এদেশকে নাস্তিক, মুরতাদ, বেঈমান, মুশরিক, ভন্ড, দালাল মুক্ত করার দৃঢ় অঙ্গীকার। মহান আল্লাহর দরবারে আমাদের ফরিয়াদ হলো, হে আল্লাহ তোমার হাবিব সা. এর আশেকীনদের শাহাদতকে তোমার দ্বীনের জন্য কবুল করুন।, তাদেরকে জান্নাতের আ'লা মাকাম দান করুন। আমাদেরকেও শাহাদতের মর্যাদা নসীব করুন। আমিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File