বর্ষা আসন্ন, নৌ-নিরাপত্তার প্রস্তুতি
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ০৮:১৭:৩০ রাত
সাবধানতা নিরাময়ের চেয়ে ভাল (Precaution is better than cure.) কালবৈশাখী মৌসুম চলমান, লঞ্চ দুর্ঘটনা রোধ না হলে নৌপথ হবে বিপন্ন। এখন থেকেই নৌদুর্ঘটনা রোধে সকল স্থায়ী পদক্ষেপ ও প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ। বর্ষা মওসুম এলেই জলপথে দুর্ঘটনা বাড়তে থাকে। প্রতি বছরই শত শত মানুষ প্রাণ হারায়। আর এই মওসুমে আবার ঈদ পূজার মতো পার্বন থাকলে তো কথাই নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ নৌযান, ধারণক্ষমতা চেয়ে বেশি যাত্রী বহন, মাঝ নদীতে পাল্লা দিয়ে নৌযান চালানো ইত্যাদি কারণে ঘটে এসব দুর্ঘটনা। এ ছাড়া এর পেছনে রয়েছে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতি। সারাদেশে নিরাপদ নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকারের ভূমিকা আজ দৃশ্যমান। বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারে নদী খনন, বিলুপ্ত নৌপথ পুনরুদ্ধারসহ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্প প্রণয়ন এবং বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়ে মহাজোট সরকারের দীর্ঘ সময়ে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের জনবল কাঠামো সংশোধন করে নৌখাতের সবচেয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটিকে শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ করে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরকে শক্তিশালীকরণ সম্পর্কিত সব পরিকল্পনাই আজ বাস্তবে রুপ নিয়েছে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যেই যতোটা সম্ভব নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে সরকার। গত দুই দশক যাবৎ ঈদ মৌসুমে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর তৎপরতা ও কর্মকান্ডের সংশিষ্ট মহলগুলো নৌ নিরাপত্তা নিয়ে তৎপর ছিল। সেখানে দুর্ঘটনা প্রতিরোধসহ নৌপথ ও নদীবন্দরগুলোর অধীন সব টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটের নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। নিরাপদ নৌ চলাচল নিশ্চিতকরণে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করা হলে দুর্ঘটনা কমে যাবে। ঝড়ো মওসুম চলছে, দু’মাস পড়েই ঈদ; তাই নৌ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এখন থেকেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া উচিত। দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি করে দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনার তুলনায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় একসঙ্গে প্রাণহানির সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এখন থেকেই লঞ্চ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল। নিম্নে লঞ্চ দুর্ঘটনার কিছু কারণ চিহ্নিত করা হলো: ১। নৌযানের অবকাঠামো ও কারিগরি অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করা। ২। টার্মিনাল ও ঘাট ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ও গাফিলতি। ৩। ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি যাত্রী ও অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন। ৪. নৌপথে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম না থাকা। ৫. নৌযান চলাচলের ওপর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের তদারকির অভাব। ৬। পরীক্ষায় দুর্নীতির মাধ্যমে অদক্ষদের মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ সনদ প্রদান। ৭। দক্ষতা যাচাই না করে মাস্টার ও ড্রাইভার (চালক) নিয়োগ। ৮। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য অল্প বেতনে সনদবিহীন মাস্টার ও ড্রাইভার নিয়োগ। ৯। অনুমোদিত নকসা যথাযথভাবে অনুসরণ না করে নৌযান নির্মাণ। ১০। নৌপথে দিক-নির্দেশক বিকন ও বয়াবাতি না থাকা। ১১। ত্রুটিপূর্ণ নকসা প্রণয়ন ও তা অনুমোদন। ১২। অবকাঠামোগত ও যান্ত্রিক ত্রুটি সঠিকভাবে পরীক্ষা ছাড়াই ফিটনেস (সার্ভে) ও নিবন্ধন প্রদান। ১৩। সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে রাতে বালুবাহী ও তেলবাহী ছোট নৌযান চলাচল। ১৪। আবহাওয়ার পূর্বাভাষ যথাযথভাবে অনুসরণ না করা।
বিষয়: বিবিধ
৭৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন