গিরিশচন্দ্রের বাড়ি এখন জাদুঘর
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ১৬ এপ্রিল, ২০১৭, ০৪:০৭:৪৪ বিকাল
পবিত্র কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদক গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি এখন আর আগের মতো নয়। বদলে গেছে বাড়িটি দৃশ্যপট। বাড়িটির অবস্থান নরসিংদীর পাঁচদোনায়। কিছু দিন আগেও যে বাড়িটি ছিল ভাঙাচোরা আর ময়লা আবর্জনার স্তূপ, বাড়ির চার দেয়াল ঘিরে বেড়ে উঠেছিল লতাপাতা, সেই ধ্বংসস্তূপেই গড়ে উঠেছে ইট-সুরকির সুদৃশ্য ভবন। একদল উদ্যমী মানুষ পরম মমতায় শৈল্পিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। ভারত সরকারের আর্থিক অনুদানে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ঐতিহ্য অন্বেষণ গিরিশচন্দ্র সেনের স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি জাদুঘর নির্মাণ করেছেন। সর্বপ্রথম কোরআনের বাংলা অনুবাদ করে ইতিহাস হয়ে আছেন তিনি। ১৮৩৪ সালে নরসিংদীর সদরে পাঁচদোনার দেওয়ান দর্পনারায়ণের বংশে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম ছিল মাধবরাম সেন। তার পিতামহ ইন্দ্রনারায়ণ। হিন্দু পরিবার হলেরও তাদের সুনাম-সুখ্যাতি ও প্রভাব প্রতিপত্তির কেন্দ্র ছিল আরবি ও ফারসি ভাষায় পাণ্ডিত্য ও জ্ঞান। শৈশবে গিরিশচন্দ্রের পিতৃবিয়োগ ঘটে। পিতার মৃত্যুর পর ১৮৪৬ সালে বড় দাদা ঈশ্বরচন্দ্র তাকে ঢাকার ঐতিহাসিক পোগোজ স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। স্কুলে প্রধান শিক্ষকের বেত্রাঘাত দেখে গিরিশচন্দ্রের মন বিষিয়ে ওঠে। পরে তাকে আর স্কুলমুখো করানো যায়নি। এ সময় তিনি কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের সান্নিধ্য আসেন এবং বিখ্যাত ফার্সি পুস্তকগুলো পাঠ শেষ করেন। ১৮৫২ সালে গিরিশচন্দ্র সেন ছোট দাদা হরচন্দ্র রায়ের সঙ্গে ময়মনসিংহে চলে আসেন। প্রকৃতপক্ষে এখানেই তিনি জীবন গড়ার সন্ধান লাভ করেন। ১৮৫৩ সালে সংস্কৃতি পাঠশালায় ভর্তি হয়ে সংস্কৃতি ভাষায় ঋদ্ধ হন। ১৮৫৭ সালে ২২ বছর বয়সে যুবক গিরিশচন্দ্র সেন ৯ বছর বয়সের ব্রহ্মময়ী দেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর ময়মনসিংহের জেলা স্কুলে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৮৭১ সালে তিনি সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ব্রাহ্মণধর্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে গিরিশচন্দ্র সেন বন্ধু ও মহিলা নামে দুটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৮৭৬ সালে গিরিশচন্দ্র ৪২ বছর বয়সে লক্ষনো যান। মৌলভী এহসান আলীর কাছে আরবি ব্যাকরণ শিখেন। এক বছর পর ঢাকা চলে আসেন। ১৮৭৮ সালে বন্ধু জালাল উদ্দিনের মাধ্যমে কোরআন শরিফ কিনে অধ্যয়ন শুরু করেন। ৩ বছর কঠোর সাধনার পর ১৮৮১ সালে প্রথম পারা কোরআনের অনুবাদ শেরপুর চারুচন্দ্র প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। পরে কলকাতায় মাসিক কিস্তিতে মুদ্রিত হতে থাকে। পরবর্তী ২ বছর পর পুরো কোরআন বাংলায় অনুবাদ হয়ে মুদ্রিত হয়। গিরিশচন্দ্রের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৩টি। তার মধ্যে বাংলায় পবিত্র কোরআনের অনুবাদসহ ইসলাম ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থ ২২টি। রাত দিন পরিশ্রমের কারণে গিরিশচন্দ্র অসুস্থ হয়ে পড়ে। ১৯০৯ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরের বছরই তিনি মারা যান। গিরিশচন্দ্র সেন মারা যাওয়ার পর থেকে তার স্মৃতিবিজড়িত প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো বাড়ি ও সমাধিস্থল ছিল নিশ্চিহ্নের পথে। বাড়ির মূল অবকাঠামো বজায় রেখে মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য ভারতীয় হাইকমিশন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান দেয়। জেলা প্রশাসন ও ঐতিহ্য অন্বেষণের মধ্যে বাড়িটি সংরক্ষণের পাশাপাশি জাদুঘর নির্মাণের চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও দিকনির্দেশনায় ঐতিহ্য অন্বেষণ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়িটি সংরক্ষণের কাজ শুরু করে। নকশা অনুযায়ী নওগাঁ ও কুড়িগ্রামে পুরাকীর্তির কাজে অভিজ্ঞ ২৫ জন শ্রমিককে কাজে লাগানো হয়। এতে যশোরের টালি ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া ঐতিহ্য অন্বেষণ নিজ উদ্যোগে উয়ারী-বটেশ্বর এলাকায় তৈরি করা একটি বিশেষ আয়তনের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। সংগ্রহ করা হচ্ছে বৃটিশ আমলের কাঠ ও আসবাবপত্র।
বিষয়: বিবিধ
৮৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন