অনুপ্রবেশ রুখতে হবে
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৮ এপ্রিল, ২০১৭, ০৮:২০:৪৭ রাত
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল এক মহান নেতার অবিস্মরনীয় নেতৃত্বে – তার মনের উদারতায় মিশে ছিলো আকাশের বিশালতা। তাই তো স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রের পুনর্গঠনকে গুরুত্ব দিয়ে বিভেদের অচলায়তন ভেঙ্গে তিনি মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে চেয়েছিলেন ভিন্ন মতাদর্শের মানুষগুলোকেও। এদেশে মহান নেতার সেই অনন্য দৃষ্টান্তকে পরবর্তীতে ব্যবহার করা হয়েছে হীন গোষ্ঠী স্বার্থ আর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পূরণের হাতিয়ার হিসেবে। তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে দল পরিবর্তন বা ক্ষমতাসীন দলে বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের যোগদান কোন নতুন ঘটনা নয়। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরবর্তী সময়ে মতাদর্শগত চরম বৈপরীত্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে শাসকদলের অনুগামী হওয়ার প্রবণতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে, যা এখনো চলমান। গণরায়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় কিছুদিন আগেও তাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা যাদের নিত্যদিনের রাজনৈতিক রুটিন ছিল তাদের অনেকেই আজ অনুসারীদের নিয়ে সদলবলে শাসক দলে যোগ দিয়ে দলটির বড় নেতা সাজার অপতৎপরতায় মেতে উঠেছেন। বিশেষ করে একসময় বিএনপি জোটের রাজনীতিতে সক্রিয় অনেককেই এখন আওয়ামী লীগের অন্ধ অনুসারীর ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক দল আওয়ামী লীগকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে জামায়াতি অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের বিষয়ে। কারণ এদের প্রতিহত করা নাহলে এই বর্ণচোরা কালসাপেরা কালক্রমে আত্মপ্রকাশ করবে ঘরের শত্রু বিভীষন রুপে। কেননা স্বাধীনতাবিরোধী এই চক্র আজও স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বকে যেখানে মেনে নেয়নি সেখানে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের মতাদর্শে কিভাবে আস্থা রাখবে? তাদের ভোল পাল্টানো তো কেবল অস্তিত্বের সংকট মোকাবেলার কৌশল মাত্র। অনুপ্রবেশে সফল হলে ষড়যন্ত্রে অভিজ্ঞ এই দুরাত্মাদের দৌরাত্ম্যে অচিরেই দলে আওয়ামী লীগের অনেক পরীক্ষিত নেতাকর্মী কোণঠাসা হয়ে পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। তখন দলীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার সুযোগ বঞ্চিত হয়ে অনেক পরীক্ষিত নেতাকর্মীই নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। এতে অনুপ্রবেশকারীদের সুবিধা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে দল, মানুষের মধ্যে দেখা দিবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। প্রহসনের ষোলকলা পূর্ণ হয়ে আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের আজন্ম বিরোধীদের মুখে ধ্বনিত হবে আওয়ামী লীগের জয়গান। শুধু এই আশঙ্কাই শেষ কথা নয়, বিএনপি মতাদর্শের সক্রিয় অনুসারী কোন নেতাও যদি অনুপ্রবেশে সক্ষম হয় তবে তার হাত ধরেও বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাসীদের ঠাঁই হতে পারে শাসক দলে। আওয়ামী লীগে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে — এমন খবর অনেকবারই গণমাধ্যমে এসেছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকেও বহিরাগতদের সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু এখনও অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়েছে কি? দলটির নীতি নির্ধারকদের বিবেচনায় রাখতে হবে - মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক আদর্শনির্ভর আওয়ামী লীগে জামায়াত-বিএনপির অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র অস্তিত্ব রক্ষার রাজনৈতিক কৌশল। কিছু সময়ের জন্য ভোল পাল্টে নিজেদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই মূখ্য। রাজনৈতিক আদর্শের জায়গা থেকে জামায়াত-বিএনপির অনুসারীদের আওয়ামী লীগে যোগদান বিশ্বাসযোগ্য নয়। দেশে আরেকটি সাধারণ নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই। তাই আওয়ামী লীগকে অনতিবিলম্বে দলে অনুপ্রবেশকারী এবং অনুপ্রবেশে আগ্রহী বহিরাগতদের সম্পর্কে সাবধান হতে হবে। অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড আওয়ামী লীগারদের চিহ্নিত করে সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিতে না পারলে তা দলের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। শুদ্ধ অঙ্গীকার নিয়ে আগামী নির্বাচনে গণআস্থা অর্জনে জনগণের সমর্থন চাইবার পূর্বে দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানো হলে তা হবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের জন্য সুবিবেচনা প্রসূত পদক্ষেপেরই পরিচায়ক। দেশ ও জাতির স্বার্থেই শাসক দলে অনুপ্রবেশ রুখতে হবে – এটাই আজ সময়ের দাবি।
বিষয়: বিবিধ
৭৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন