জানাতে হবে সঠিক ইতিহাস

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২৯ মার্চ, ২০১৭, ০৫:৩৮:০৪ বিকাল



বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিনা বাধায় অর্জিত হয়নি। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ীর ইতিহাস। আর এ রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের পাতায় রয়েছে সর্বস্তর মানুষের স্থান। এর মধ্যে ছাত্র-যুব সমাজের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। সে সময় তাদের নব উদ্যমতা ও স্বাধিকার আদায়ের যে তেজ তা মনে পড়ে আজও শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ২৫ মার্চ গভীর রাতে নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর পাকিস্তানী হানাদাররা যখন নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল, তখন হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এ দেশের ছাত্র-কৃষক, শ্রমিক-জনতা। মাত্র নয় মাস যুদ্ধ করে তারা দেশটাকে শত্রু মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। পৃথিবীর আর কোন জাতিই এত কম সময়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তারাই জানে নয় মাসের মধ্যে শেষ হওয়া যুদ্ধটা ছিল কত ভয়াবহ। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক, শোষণহীন গণতন্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, যে স্বপ্ন বা আকাক্সক্ষা সামনে রেখে এ দেশের আপামর জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, সেই স্বপ্ন পূরণ করা স্বাধীনতার এত বছর অতিক্রম করলেও নানা কারণে সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার পর বার বার হত্যা ও রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি অবক্ষয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিপন্ন করে চলেছে। নিজ স্বার্থের প্রয়োজনে অনেকেই যে কোন নিষ্ঠুরতম কাজ করতেও বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশপ্রেমের অভাব। আর সবার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করার মাধ্যমে এখনও মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব। আমাদের নতুন প্রজন্মই আমাদের সেই স্বপ্নের দেশ উপহার দিতে পারবে। তাই এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। তাদের জানা প্রয়োজন আমাদের মুক্তিযুদ্ধটির সঙ্গে গভীর আত্মত্যাগের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য সাহস আর বীরত্বের ইতিহাস এবং বিশাল এক অর্জনের ইতিহাস। এই আত্মত্যাগ, বীরত্ব ও অর্জনের ইতিহাসটুকু সঠিকভাবে উপস্থাপন করলে, তখন যে শুধু দেশের জন্য মমতা অনুভূত হবে তা নয়, দেশের জন্য গর্বে বুক ফুলে উঠবে। আমাদের নতুন প্রজন্মকে আরও জানতে হবে ১৯৭১ সালের নয় মাসের সংগ্রামের ইতিহাসটিই মুক্তিযুদ্ধের পরিপূর্ণ ইতিহাস নয়। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর পরই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় রফিক, সালাম, রবকতদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর প্রাদেশিক নির্বাচনে পাকিস্তানী শাসক দল মুসলিম লীগের ভরাডুবি এবং যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয়, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলন ও ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলনে জনগণের অভূতপূর্ব সাড়া, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে ’৬৯-এর উত্তাল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুসহ অন্য কারাবন্দীদের মুক্তকরণ, ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অবিশ্বাস্য বিজয়, পাকিস্তানের টালবাহানা ও বিশ্বাসঘাতকতা। এ দেশের বিশাল তরুণ সমাজ যারা দেশকে ভালবাসে, যারা দেশকে গড়ে তুলতে চায়, তাদের যদি সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়া যায়, তাহলে তারা অবশ্যই আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। যে চেতনা ও স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেশটাকে শত্রুমুক্ত করেছিল তার প্রতিফলন ঘটবে। তাই আসুন আমরা আমাদের নতুন প্রযন্মকে দেশে সঠিক ইতিহাস জানাই এবং দেশ সেবায় এগিয়ে আসি।



বিষয়: বিবিধ

৮১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File