রক্তলাল সুর্যে কাটবে আধার
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২৮ মার্চ, ২০১৭, ০৬:৩৫:৪৬ সন্ধ্যা
২৫ মার্চ, ভয়াল রাত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির ওপর আধুনিক অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, তখনকার ইকবাল হল (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) এবং পিলখানা ও রাজারবাগে হামলা চালায়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে যে নির্বিচার গণহত্যার সূত্রপাত, ৯ মাসে তা চলে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে। ৯ মাসে প্রাণ হারায় ৩০ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বড় ও নৃশংস গণহত্যার উদাহরণ নেই। পাকিস্তান বরাবরই এ গণহত্যার দায় অস্বীকার করে আসছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই গণহত্যার স্বীকৃতি মেলেনি। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চ পালিত হচ্ছে গণহত্যা দিবস। এবার তাই আয়োজন ছিল অনেক বেশি। শোকে আর শ্রদ্ধায় জাতি স্মরণ করছে একাত্তরের শহীদদের। কিন্তু হঠাৎ করে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। দুপুর থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে চোখ পড়ে সিলেটের দিকে। শ্রীলঙ্কার ডাম্বুলায় সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ খেলছিল বাংলাদেশ। আমরা যখন টেলিভিশনের পর্দায় ক্রিকেটারদের সাফল্যে হাততালি দিয়ে দেশ প্রেমের প্রমাণ রাখছি, সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আতিয়া মহলে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে ব্যস্ত।তারও আগে থেকে পুলিশ, র্যা ব আর সোয়াতের সদস্যরা নাওয়া খাওয়া ভুলে ঘিরে রেখেছে জঙ্গি আস্তানা। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর ব্রিফিঙের পরপরই কাছাকাছি এলাকায় দুই দফা বোমা হামলায় প্রাণ দিয়েছেন দুই পুলিশ সদস্যসহ ৬ জন,গুরুতর আহত হয়েছেন র্যাছবের গোয়েন্দা প্রধান। আমরা যারা ক্রিকেটের সাফল্যে উল্লসিত, তাদের দেশপ্রেম নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলছি না। কিন্তু আসল বীর আমাদের সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যা ব আর সোয়াতের সদস্যরা। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছেন, অভিযান চালাচ্ছেন। একাত্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধারাও জীবনের মায়া তুচ্ছ করে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে লড়াই করে ছিনিয়ে এনেছিল বিজয়। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে ৯০ রানে হারানো অনেক বড় সাফল্য। কিন্তু সিলেটের ঘটনায় তেতো হয়ে যায় বিজয়ের আনন্দ।লঙ্কাবধ হতে পারতো স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গিফট। কিন্তু সিলেটে জঙ্গি আস্তানায় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের চলমান অভিযান উৎকণ্ঠায় রেখেছে গোটা জাতিকে। একাত্তরের ২৫ মার্চের পর ২০১৭ সালে আরেক ২৫ মার্চ আসে আরেক কালরাত হয়ে। গোটা জাতি সময় পার করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর শোকে। হলি আর্টিজানের পর এমন উৎকণ্ঠার রাত আর আসেনি।অনেকে বলছেন, এত সময় লাগছে কেন? প্রথম কথা হলো, আতিয়া মহলে ৩০টি ফ্ল্যাটের একটিতে জঙ্গি আস্তানা। বাকি ২৯ ফ্ল্যাটে আটকা পড়েছিলেন ২৯টি পরিবার। আর জঙ্গি আস্তানায় ছিল বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। মাঝে মাঝে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা তা জানানও দিচ্ছিল। তাই অভিযানের প্রথম লক্ষ্য ছিল আটকে পড়া মানুষদের নিরাপদে উদ্ধার করা। সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা সাফল্যের সাথে পাশের বাসার ছাদ দিয়ে গিয়ে প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর নারী-শিশুসহ ৭৮ জনকে উদ্ধার করেছেন। উদ্ধার হওয়া সবাই বলেছেন, তারা নতুন জীবন পেয়েছেন।একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ইসলামের নামে এ দেশে নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছিল। এখনও তাদের প্রেতাত্মারা ইসলামের নামে ভিন্ন ফরম্যাটে রুদ্ধ করতে চাইছে অগ্রগতির চাকা। কিন্তু শান্তির ধর্ম ইসলাম কখনও হত্যা-সন্ত্রা্স অনুমোদন করে না। আত্মঘাতী হামলা তো ইসলামে মহাপাপ। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, তবে ধর্মান্ধ নয়। ৭৫’এর পর থেকে বিভিন্ন সংগঠন ইসলামের নামে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের ভোট সবসময় সিঙ্গেল ডিজিটেই থেকেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ইসলামের নামে রাজনীতি, সন্ত্রাসে দেশের মানুষ কখনোই মেনে নেয়নি, নেবেও না। একাত্তরে আমরা জিতেছি। ২০১৭ সালে আমরাই জিতবো। অল্প কয়েকজন জঙ্গি আমাদের অগ্রগতিকে রুখতে পারবে না। ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যার পথ ধরে যে মুক্তিযুদ্ধ, তার পথ ধরেই উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার লাল সূর্য। জঙ্গিবাদের নামে যে আঁধার ঢেকে দিতে চাইছে আমাদের উদার আকাশ, তা ভেদ করে অপারেশন টোয়ালাইট বা অপারেশন গোধুলির পথ ধরে আবারও উঠবেই সম্ভাবনার নতুন সূর্য। আমরা তো জানিই রাত যত গভীর, ভোর তত নিকটবর্তী।
বিষয়: বিবিধ
৭৬৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন