পরিকল্পিত বাংলাদেশ গড়তে চাই ভূমির ব্যবহার
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২৩ মার্চ, ২০১৭, ০৬:৫১:৪৯ সন্ধ্যা
বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে এখন থেকে শহর-নগরের পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জেও ঘরবাড়ি বা অন্যবিধ স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে লিখিত অনুমোদন লাগবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এটি অবশ্য নতুন কোন আইন নয়। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনে গ্রামাঞ্চলে ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমতির বিধান থাকলেও সেটি প্রতিপালিত হয় না কোথাও। ফলে কৃষি জমিসহ ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহার এমনকি অপব্যবহার বেড়েছে ক্রমশ। যে যেখানে খুশি মর্জিমাফিক গড়ে তুলেছে বসতবাড়ি কিংবা অন্যবিধ স্থাপনা। বাগানবাড়ি, পার্ক এমনকি শিল্প কারখানা। ফলে দিন দিন ভূমি বিশেষ করে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। অনেক স্থানে এমনও দেখা যায় যে, ধানের জমির মাঝখানে অথবা জলাশয় ভরাট করে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন বাড়িঘর। অনেক ক্ষেত্রে নদ-নদীসহ অবৈধ দখলের অভিযোগও আছে। বেদখলে বনভূমিও উজাড় হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন কৃষি জমির পরিমাণ কমছে, অন্যদিকে ভরাট হয়ে যাচ্ছে জলাশয়, লোপাট হচ্ছে বনভূমি। এক হিসেবে দেখা যায়, দেশে প্রতিবছর কৃষি জমির পরিমাণ কমছে ১ শতাংশ হারে। অন্যদিকে প্রতিবছর বাড়ছে জনসংখ্যা। ফলে খাদ্য উৎপাদনেও সৃষ্টি হচ্ছে বাড়তি চাপ। এ অবস্থায় ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার ও উন্নয়ন নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে চিন্তাভাবনা চলছে বেশ কিছুদিন থেকে। এরই ফলশ্রুতি হিসেবে ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন-২০১৭-এর নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১৯৫০ এর আইনে শাস্তির বিধান ছিল না। এমনকি লিখিত অনুমোদনের বিধান থাকলেও তা মানা হতো না। এখন এটি আইনে পরিণত হলে নিয়ম মানতে হবে। আর না মানলে অভিযুক্তের জন্য পাঁচ বছর কারাদন্ডের সঙ্গে ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তবে খসড়াটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই পরিণত হবে আইনে। ক্ষেত্রমতে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, রাজধানীতে রাজউক, চট্টগ্রামে চসিক এ অনুমোদন দিয়ে থাকে। ভবিষ্যতে এই ক্ষমতা ইউনিয়ন পরিষদের হাতেও দেয়ার সুযোগ হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। গ্রামে বাড়িঘর ও উন্নয়নমূলক কাজের আগে এখন থেকে ইউনিয়ন পরিষদের লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। এ রকম একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং তা মানার বাধ্যবাধকতা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। সত্য বটে, বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে এবং শহর-বন্দরসহ নানা স্থানে শিল্প কারখানাসহ নানা স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। তবে এসবের অধিকাংশই অপরিকল্পিত, ভূমির ব্যবহার যথেচ্ছ এবং কোথাও বা অবৈধ। সরকারী খাস জমি এমনকি জলাশয়, নদ-নদী দখল করেও চলছে নির্মাণ। প্রায় গ্রামেই এখন প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ বাড়ছে এবং বাড়িঘর নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। এর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কৃষি জমিও। নিজের সম্পত্তি বলে কথা! উচ্চমূল্যে জমি কেনার খবরও আছে। আরও একটি উৎকট উপদ্রব যত্রতত্র ইটভাঁটি ও চিমনির ধোঁয়া। ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ার জন্য এটিও কম দায়ী নয়। এতে খাদ্য নিরাপত্তাসহ খাদ্যশৃঙ্খলে সৃষ্টি হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত চাপ। ব্যাপক উন্নয়নের জন্য ইটভাঁটি, শিল্পকারখানার অবকাঠামো নির্মাণ, ঘরবাড়ি, আবাসন ইত্যাদি অপরিহার্য। তবে ভূমির পরিমাণ যেহেতু সীমাবদ্ধ ও সীমিত, সেহেতু তা অবশ্যই পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহারের দাবি রাখে। সেটাও হতে হবে সুষ্ঠু, সমন্বিত, সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব। নতুন আইনে তা নিশ্চিত করা গেলে একদিকে যেমন জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার রোধ হবে, অন্যদিকে সুনিশ্চিত হবে উন্নয়নের গতি। অব্যাহত থাকবে খাদ্য নিরাপত্তা। এভাবেই একদিন আমরা উন্নত জাতিতে পরিণত হব।
বিষয়: বিবিধ
৭০২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন