তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য রক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২২ মার্চ, ২০১৭, ০৩:৩৫:৫৪ দুপুর
শেকড় ছাড়া যেমন গাছ বাঁচে না, ঠিক তেমনি ঐতিহ্যের লালন এবং উত্তর প্রজন্মে তার যথাযথ উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা না গেলে জাতি সাংস্কৃতিক চেতনা আর মূল্যবোধের দেউলিয়াত্বে ক্রমশঃ স্বকীয়তা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। এই চিরন্তন সত্যে বিশ্বাস করে বলেই বর্তমান সরকার বাংলার আবহমান ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পকে আরও আধুনিক ও বহুমুখী করে এই শিল্পের প্রসারে সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে দেশে একটি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই শিল্প যেন আরও উন্নত হয়, সম্প্রসারিত হয়, সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিনকে আবার ফিরিয়ে আনতে সরকার সারা বাংলাদেশে একটা সমীক্ষা চালিয়েছে। মসলিন কোন কোন এলাকায় তৈরি হতো, এর সুতা আবার তৈরি করা যায় কিনা এজন্য গবেষণা করা হচ্ছে। তাঁত শিল্পের প্রসারে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ৪২৬টি তাঁতের বিপরীতে ১৪২ জন তাঁতীকে ৪৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। তাঁতীদের প্রশিক্ষণের জন্য নরসিংদীর তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে উন্নত করে সেখানে ৪ বছর মেয়াদে ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল কোর্স চালু করা হয়েছে এবং এতে ভর্তির ক্ষেত্রেও তাঁতী পরিবারের সদস্যদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে বয়নশিল্পের নতুন নতুন ডিজাইন উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ৪১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্যাশন ডিজাইন ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং একটি বেসিক সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নরসিংদীতে একটি ফ্যাশন ডিজাইন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের কাজ প্রায় ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি, টাঙ্গাইল এবং মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে একটি করে তিনটি প্রশিক্ষণ উপকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র জামদানি পল্লী, বেনারসি পল্লী ও তাঁত পল্লী স্থাপনেরও কাজ চলছে। নারায়ণগঞ্জের তারাবোতে ক্ষুদ্র তাঁতীদের জন্য প্লট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তাঁতীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাদের ঋণ দেয়া হচ্ছে। তাঁতীদের কল্যাণে জাতীয় বাজেটে সুতা ও রং আমদানিতে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর রহিত করা হয়েছে। মাদারিপুরের শিবচর এবং শরিয়তপুরের জাজিরায় ১শ’ ২০ একর জমিতে তাঁত পল্লী স্থাপনে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সিলেটে মণিপুরী তাঁত শিল্পের উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ৬শ’ মণিপুরী তাঁত শিল্পীকে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ তাদের পণ্য বিক্রিতে সিলেটের জিন্দাবাজারের ‘ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড শপিং সিটিতে’ একটি বিপণী কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রংপুরের শতরঞ্জি এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, সেখানে বেসিক সেন্টার এবং প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বাংলার এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাঁতী পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া শেখার পাশাপাশি তাদের এই শিল্পের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বংশ পরম্পরায় তাদের মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য তাদেরকে তাঁত শিল্পের বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগী হতে হবে। সকলের সমন্বিত উদ্যোগে বাংলার আবহমানের ঐতিহ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রসার লাভ করবে, নিশ্চিত করবে আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের বিশ্ববিজয় – এটাই সকলের প্রত্যাশা।
বিষয়: বিবিধ
৭৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন