দুইটি শর্ত পূর্ণ হয়েছে
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ১৬ মার্চ, ২০১৭, ০৬:০১:৪০ সন্ধ্যা
উন্নয়নশীল দেশ বা ডেভেলপিং কান্ট্রি হতে প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের দেয়া তিন শর্তের মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা—এই দুটি শর্ত পূরণ হয়ে গেছে। আর জাতীয় মাথাপিছু আয় সূচকেও লক্ষ্য পূরণের পথেই আছে বাংলাদেশ। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। তিনটির মধ্যে দুটি শর্ত পূরণ করলেই উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার প্রাথমিক বাছাই হয়। তাই এলডিসি থেকে বের হতে সরকারি উদ্যোগ হিসেবেই জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসোক) কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে সরকার। এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রাথমিক তালিকা তৈরিকারী জাতিসংঘের সিডিপি কমিটির ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে গত মাসেই পরিকল্পনা কমিশনের জিইডির এক প্রতিনিধিদল আলোচনা করে এসেছে। এখন বাংলাদেশসহ এলডিসি ৪৮টি। প্রতি তিন বছর পর সিডিপি কোন কোন দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে প্রস্তুত—সেই বাছাই তালিকা করে থাকে। সর্বশেষ তালিকাটি ২০১৫ সালে হয়েছিল। আগামী তালিকা হবে ২০১৮ সালে। ২০১৮ সালের মূল্যায়নে ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ওই তিনটি সূচকে কী ধরনের পরিস্থিতি ছিল, তা বিবেচনা করা হবে। ২০১৮ সালেই বাংলাদেশ বাছাইয়ে থাকতে চায়। অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু, মাধ্যমিক শিক্ষায় নিবন্ধন, বয়স্ক শিক্ষা, মাতৃমৃত্যুসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে মানবসম্পদের উন্নয়ন নির্ধারণ করা হয়। জিইডি এর হিসাব মোতাবেক ২০১৫ সালের হিসাবে এই সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬৯ দশমিক ৫ পয়েন্ট। জাতিসংঘের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮ দশমিক ৭ পয়েন্ট। এলডিসি থেকে বের হতে এই সূচকে ৬৬ পয়েন্টের বেশি পেতে হয়। অন্যদিকে মোট জনসংখ্যা, প্রত্যন্ত ও উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত জনসংখ্যা, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনের ঝুঁকি, রপ্তানি নির্ভরতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক নির্ধারণ করা হয়। জাতিসংঘের হিসাবে এই সূচকে ৩২ পয়েন্টের কম থাকতে হবে। জিইডি এর হিসাবে এই সূচকে বাংলাদেশের অর্জন ২৫ দশমিক ০৩ পয়েন্ট। এর মানে, এই সূচকেও বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবেও এই সূচকে বাংলাদেশের অর্জন ২৫ দশমিক ১১ পয়েন্ট। তবে জাতীয় মাথাপিছু আয় সূচকে ১ হাজার ২৪২ মার্কিন ডলার থাকতে হবে। মাথাপিছু আয়ের হিসাবটি জাতিসংঘ করে এটলাস পদ্ধতিতে। এতে একটি দেশের স্থানীয় মুদ্রায় গণনা করা জাতীয় আয়কে মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয়। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হারের উঠানামা সমন্বয় করতে আগের তিন বছরের গড় বিনিময় হারকে ধরা হয়। এটলাস পদ্ধতিতে হিসাব করা জিইডি এর প্রতিবেদন মোতাবেক, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের গড় জাতীয় মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৩ ডলার। এর মধ্যে ২০১৬ সালের প্রাক্কলন ১ হাজার ৪০৩ ডলার। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এর পরিমাণ যথাক্রমে ১১৪২ ও ১২৭৫ ডলার। তবে জাতিসংঘের সিপিডি যদি ২০১৮ সালের মূল্যায়নে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য বাছাইয়ে মনোনীত করে; ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে এই তিনটি সূচকেই নিজেদের অবস্থান বজায় রাখতে হবে। সফল হলেই উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাংলাদেশ যোগ্যতা অর্জন করবে, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করবে ইকোসোক। সেই সুপারিশ জাতিসংঘের সাধারণ সভায় অনুমোদিত হলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা কার্যকর হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে রাষ্ট্রপরিচালনায় বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের অবস্থান ধারাবাহিক হলে সাম্প্রতিক সময়ে এই সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে গৃহিত সময়োপযোগী উদ্যোগের সফলতা বিবেচনায় এটি সুনিশ্চিত যে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ বা ডেভেলপিং কান্ট্রি হওয়ার স্বপ্নপূরণ এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
বিষয়: বিবিধ
৭৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন