অস্তিত্ত্বের সংকটে দিশেহারা
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৭ মার্চ, ২০১৭, ০৫:৫৬:২৮ বিকাল
বিএনপি দলছুটদের দল। দীর্ঘকাল ক্ষমতার বাইরে থাকলে এ ধরনের দলের অস্তিত্ব থাকে না। তবু বিএনপি যে টিকে আছে তার প্রধান কারণ, বাংলাদেশে এখনো ধর্মীয় জাতীয়তায় বিশ্বাসী ও কমবেশি পাকিস্তানপন্থী একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী যেমন প্রশাসনের ভেতরে আছে, তেমনি বাইরেও আছে। তাদের বিদেশি পৃষ্ঠপোষকও আছে। তার ওপর বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয় এমন কট্টর মৌলবাদীরাও এসে বিএনপির ছাতার তলে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া দেশের মানুষ চেয়েছে দ্বিদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের প্রায় সমকক্ষ দল হয়ে উঠতে পেরেছে বিএনপি। মানুষ চেয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ক্ষমতার নিয়মিত হাত বদলে দেশে বহুদলীয়, বিশেষ করে সুস্থ দ্বিদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে উঠুক।বিএনপি এই গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে সব সময় অটল না থেকে চক্রান্তের ও সন্ত্রাসের রাজনীতির পথ ধরায় এতকাল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠতে গিয়েও বারবার হোঁচট খেয়েছে। ২০১৪ সালে বিএনপির নির্বাচন বয়কট ও নির্বাচন বানচাল করার সন্ত্রাসী রাজনীতির (জামায়াতের সহায়তা) মোকাবেলায় হাসিনা সরকার যদি কঠোর নীতি গ্রহণ না করত ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম না হতো, তাহলে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ডদান যেমন সম্ভব হতো না, তেমনি অর্ধতালেবানি দুঃশাসনের প্রতিষ্ঠা ঠেকিয়ে রাখা যেত না।আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানোর সন্ত্রাস দ্বারা গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটাতে ব্যর্থ হওয়া ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ডদান বানচাল করতে না পারার কারণেই জামায়াতের কোমর ভেঙে গেছে এবং বিএনপির আজ এই দুরবস্থা। এখন জামায়াত ও বিএনপি হরতালের ডাক দিলে তা প্রহসনে পরিণত হয়। বিএনপি জানে, আন্দোলনের নামে কোনো সন্ত্রাস ও পর্দার আড়ালে কোনো চক্রান্ত চালিয়ে আর তারা সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না এবং নির্বাচনও ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তাই, বিএনপি আগামী সাধারণ নির্বাচনে কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই যোগ দেবে। জামায়াতের সঙ্গে গোপন অথবা প্রকাশ্য আঁতাত বজায় রেখেও এই নির্বাচনে হয়তো জয়লাভ করা যাবে না—এটা জেনেই তারা তাদের তথাকথিত কুড়ি জোটের বাইরের অন্য দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের নামে জোট গঠন করতে চাইছে। এটি হবে আসলে আওয়ামী লীগবিরোধী জোট। বিএনপির এই সম্ভাব্য উদ্যোগই প্রমাণ করে তারা এবার নির্বাচন বর্জনের আত্মঘাতী নীতি গ্রহণ করতে যাবে না।বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাহলে কী ঘটবে? আমার ধারণা, বিএনপি তাদের কৌশলের অংশ হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেবে। কিন্তু একটি গোপন সন্ধি করবে। এক বিরাটসংখ্যক জামায়াতিকে তারা নিজেদের দলের প্রার্থী পরিচয়ে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে। জামায়াতও নির্বাচনে অনিবন্ধিত বা অচ্ছুৎ দল হিসেবে এ ব্যবস্থা মেনে নিতে বাধ্য হবে। তাতেও ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ার ডাক কতটা সফল হবে তা বলা মুশকিল। কারণ পড়ন্ত সূর্যের নিচে আশ্রয় নিতে সহজে কেউ চায় না।বিএনপি আগামী নির্বাচনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, অথচ মুখে বলছে নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকার গঠন করা না হলে তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিশ্চিত নয়। অনেকের ধারণা, এটা বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাদের দর-কষাকষি ও চাপ সৃষ্টির কৌশল। যদি এই কৌশল সফল হয় ভালো। না হলে নির্বাচনে যোগ দেওয়ার দুয়ার তো খোলা আছেই। । যে দল নির্বাচনে যোগ দেবে না তারা নিবন্ধন হারাবে। বিএনপি এই নিবন্ধন হারালে এবং আগামী সংসদে তাদের উপস্থিতি না থাকলে তারা রাজনৈতিক অস্তিত্ব হারাবে। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের ধারণা, এই ভয়ই বিএনপিকে তাড়া করে নির্বাচনে নিয়ে যাবে। তবে তার আগে পর্যন্ত তারা সাপ হয়ে দংশন করতে ও ওঝা হয়ে বিষ নামাতে চাইবে।আগামী সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি যোগ না দিলে শুধু রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন হারাবে তা নয়, ক্ষমতাহারা বিএনপিতে বেগম জিয়া নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারবেন না। অসুস্থতাও তাঁকে কাবু করে ফেলবে। লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানেরও দেশে ফেরা ও কারাবাস এড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বিষয়: বিবিধ
৭০২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রতিপক্ষ না থাকায় খেলা জমানোর জন্য নিজেরা নিজেরা তখন খেলতে হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন