স্বপ্ন দেখার সাহস
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০২ মার্চ, ২০১৭, ০৬:৫৫:১৫ সন্ধ্যা
সফলতা অনেক বিস্তৃত একটা ব্যাপার, এটা একদিনে অর্জিত হয় না। আর কোন একটা ব্যাপারে অকৃতকার্য হলেই মানুষ ব্যর্থ হয়ে যায় না। বড় হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাই মানুষকে পরবর্তীতে বড় করে তোলে। কোন পরীক্ষায় একটু খারাপ ফলাফল করলেই অনেক বাবা মায়েরা মনে করতে থাকেন তাদের এই সন্তান অকর্মা হবে, আসলে ধারনাটি মোটেই ঠিক নয়। শিশুদের মনে কখনোই তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না এমন ধারণাকে জায়গা করে নিতে দেয়া যাবে না। শিশু যেন বিশ্বাস করতে শুরু না করে যে সে পারবে না। গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বাসের প্রথম প্রভাব পড়ে মনে। মন প্রোগ্রাম পাঠায় মস্তিষ্কে আর মস্তিষ্ক সেটা পাবার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করে। মন একটি আত্মসচেতন, সক্রিয় অনুসন্ধিৎসু স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া। শিশুদের মন যা ভাবে, তার সেই ভাবনাটাই একসময় বিশ্বাস হয়ে যায় এবং তারপর মস্তিষ্কের মাধ্যমে সেটি কর্মফলে প্রভাব ফেলে। মন হচ্ছে মস্তিস্কের আসল পরিচালক। শিশুদেরকে সে কারনেই বড় হওয়ার অদম্য ইচ্ছা লালনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে, তাদেরকে স্বপ্ন দেখতে শিখাতে হবে। বড় হবার প্রথম পদক্ষেপটি হচ্ছে স্বপ্ন দেখতে শিখা। আর বড় হওয়ার এই রঙ্গ স্বপ্নটিই একসময় বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়। বড় হবার, দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার দীক্ষাটি দিতে হবে পরিবারের বড়দেরকেই। স্বপ্ন যখন শিশুর বিশ্বাসের জায়গায় চলে যায় তখন সেই বিশ্বাসটিই তাকে বড় হবার জন্য তাড়া করে বেড়ায়। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবুল কালাম তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন, “মানুষ ঘুমিয়ে যা দেখে তা স্বপ্ন নয়, স্বপ্ন হলো সেটা যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।” সাম্প্রতিক সময়ে দেশের তরুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বপ্ন দেখায় কৃপণতা লক্ষ্য করা যায়। বেশিরভাগ তরুনের স্বপ্নই পড়াশোনা শেষ করে কোনরকম খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার মতো একটা চাকরিতেই সীমাবদ্ধ। একটা শিশু যখন বড় হতে থাকে তখনই তাকে মহৎ হওয়ার বিষয়ে ধারণা দিতে হবে। বিশাল এই পৃথিবীতে ভাববার মতোন, করবার মতোন অনেক কাজই আছে। কোন একটা শিশুকে যখন তার ভবিষ্যতের সীমারেখা একেঁ দিয়ে মুখস্থ করা স্বপ্নের কথা বিশ্বাস করানো হয় তখন দেশের অনেক বড় সম্ভাবনা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়। আমরা মনে করি জীবনে সাফল্য হলো পড়া শেষ করে চাকরি পাওয়া। অথচ সফলতার সংজ্ঞা অন্যরকম, আমরা যদি আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোকে স্বার্থহীনভাবে ভালোবাসতে না পারি, তবে নিজেকে সফল মানুষ হিসেবে দাবি করা যাবে না। শিশুকে শিখাতে হবে মহত্ত্ব, শিখাতে হবে সত্যিকারের বড় হওয়া। বাবা মায়েরা নিঃসন্দেহে শিশুর ভালো চান। কিন্তু, একটা পরীক্ষায় একটু খারাপ ফলাফল কিংবা পাশের ফ্ল্যাটের বাচ্চার সাথে প্রতিযোগিতা করাতে গিয়ে তারা অনেক সময় উল্টো ক্ষতি করে বসেন তাদের ভবিষ্যতের। তারা অনেকেই ভুলে যান বিজ্ঞানী আইস্টাইনের সেই বিখ্যাত কথাগুলো, “পৃথিবীতে সকলেই জিনিয়াস, কিন্তু আপনি যদি একটা মাছকে গাছ বেয়ে উঠার সামর্থ্যের উপর বিচার করেন, তবে মাছটি সারাজীবন নিজেকে অপদার্থই ভেবে যাবে।” সুতরাং, বড়রা যেনো ছোটদের একটা পরীক্ষার ফলাফলে অসন্তুষ্ট হয়ে তার মনের বিশ্বাসকে বদলে না দেন। হয়তো এ বিশ্বাস বদলে দেবার কারণেই বাংলাদেশ হারাবে অনেক সম্ভাবনাময় কোন ভবিষ্যতকে। ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ নিশ্চিত করতে আসুন আমরা সকলে এ দেশের প্রতিটি শিশুকে স্বপ্ন দেখার সাহস যোগাই।
বিষয়: বিবিধ
১০২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন