প্রতিশ্রুতি পূরণ
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৪:৪২:৫৯ বিকাল
ছয় বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত দিয়েছিলেন যশোরের ভৈরব নদ খননের, কিন্তু ভুলেননি তিনি। সম্পদের সীমাবদ্ধতায় নানা অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের চাপে পড়ে কিছুটা বিলম্ব হলেও ভৈরব নদের ৯৬ কিলোমিটার খননের কাজ এবার শুরু হতে যাচ্ছে। চলতি মাসেই খনন কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে, এজন্য একনেকে ২৭২ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যশোরের বাবলাতলা ব্রিজের কাছ থেকে বিরামপুর কালীতলা পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার এলাকায় ভৈরব নদের তিনটি অবৈধ পাটা অবৈধ পাটা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস উদ্বোধনের সময় ১২টি বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ভৈরব নদের খনন। এরই অংশ হিসেবে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব। ফলে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভৈরব নদ খননের সমীক্ষা করে। পরবর্তীতে গত ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে 'ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পনি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প' নামের একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এর মাধ্যমে তাহেরপুর থেকে যশোর হয়ে নওয়াপাড়া আফরা ঘাট পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার খনন কাজ শেষ হলে দর্শনার মাথাভাঙা নদীর সাথে সংযোগ হবে ভৈরব নদের। এতে নাব্যতা ফিরে নদটি নৌযান চলাচলের উপযোগী হয়ে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি আসবে, ভৈরব পাড়ের জলাবদ্ধতাও দূর হবে। উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় ভৈরবের উৎসমুখ মাথাভাঙা নদে বাঁধ দেয়ায় ভৈরব-কপোতাক্ষে গত ১৫০ বছর ধরে পদ্মার পানি আসে না। ১৮৬১ সালে বেঙ্গল-আসাম রেলপথ স্থাপন ও ১৯৩৮ সালে দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকল প্রতিষ্ঠা করার সময় মাথাভাঙা নদ থেকে ভৈরবকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এই উৎসমুখ থেকে খুলনার শিবসা নদীর খুলনা হার্ড বোর্ড মিল ঘাট পর্যন্ত ভৈরব নদের দৈর্ঘ্য ১৩৩ কিলোমিটার। সেই থেকে গত ১৫০ বছর ধরে ভৈরবসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোন নদ-নদীতে আর পদ্মার পানি আসতে পারে না, কারণ এই এলাকার সব নদ-নদী ভৈরব নদেরই শাখা। বাঁধের অশুভ প্রভাবে সেই থেকেই এ এলাকায় জলাবদ্ধতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, আর্সেনিকের বিষক্রিয়া এবং সুন্দরবন ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মাথাভাঙা নদের সাথে যুক্ত করলে ভৈরবসহ কপোতাক্ষ, বেত্রাবতী, মুক্তেশ্বরী, চিত্রা এবং বেগবতী হারানো প্রবাহ ফিরে পাবে।ভৈরব-কপোতাক্ষ স্রোতধারা ফিরে পেলে প্রাকৃতিকভাবেই স্রোতের টানে নদ গভীর হবে। প্রবাহ থাকায় পলি আর নদের বুকে না জমে নিম্নভূমিতে প্রবেশ করে উর্বর ভূমি গঠন করবে। এর সুফল হিসেবে লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা ও আর্সেনিকের বিষক্রিয়া দূর হবে। সেই সাথে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে সুন্দরবনও। প্রকল্পটির মাধ্যমে ভৈরবের ৯৬ কিলোমিটার সাড়ে তিন থেকে চার মিটার গভীর করে খনন করায় নদটিতে নাব্যতা ফিরে জলাবদ্ধতা দূর হবে এটাই শেষ কথা নয়। আসল বিষয় হচ্ছে এটি এক সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি পূরণের অনন্য দৃষ্টান্ত। এ দেশের জনতা এখন বিশ্বাস করে গণরায়ে নির্বাচিত জবাবদিহিতায় উজ্জীবিত এই সরকার তার দেয়া যে কোন প্রতিশ্রুতি পূরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ – জনতাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হবেই।
বিষয়: বিবিধ
৭৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন