বাংলাদেশের উন্নয়নে কৃষি

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৩:৩৪:০৮ দুপুর



বাংলাদেশের ফসলের মাঠ এখন সবুজ শস্য ও সোনালি ধানে-গমে ভরে থাকে। এক অভাবনীয় চোখ জুড়ানো উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এদেশের কৃষি খাতে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বহুলাংশে কৃষি খাতের উন্নয়নের ওপর নির্ভরশীল। কৃষির অগ্রগতির সঙ্গে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ অকৃষি খাতের উন্নয়ন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। কৃষি খাত থেকে অবমুক্ত হওয়া শ্রমিক নিয়োজিত হচ্ছে দেশের শিল্প খাতে ও বিদেশে। বর্তমানে জিডিপিতে সার্বিক কৃষি খাতের অবদান প্রায় ১৬ শতাংশ। মোট রফতানি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শরিকানা প্রায় ৯ শতাংশ। বৃহৎ সেবা খাতের মধ্যে পাইকারি ও খুচরা বিপণন, হোটেল ও রেস্তোরাঁ এবং পরিবহন, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ খাতের প্রবৃদ্ধিতে এ খাতের অংশীদারিত্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ পরিমাণগতভাবে কৃষির উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। রাসায়নিক সারের দাম দফায় দফায় কমিয়ে নিয়ে আসা হয় কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। পানি সেচের জন্য ব্যবহূত বিদ্যুতের ওপর চালু করা হয় ভর্তুকি। ৩০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয় কৃষি যন্ত্রপাতি। মোট বাজেটের প্রায় সাড়ে চার শতাংশ ব্যয় করা হয় কৃষি ভর্তুকি খাতে। তাছাড়া দ্রুত হ্রাস করা হয় কৃষিঋণের সুদের হার। তাতে কৃষিতে নতুন প্রযুক্তির ধারণ ও বিকাশ উৎসাহিত হয়। পানি সেচের আওতা বৃদ্ধি পায় মোট আবাদি জমির প্রায় ৭০ শতাংশে। উচ্চ ফলনশীল জাতের আওতায় আসে প্রায় ৮০ শতাংশ ধানি জমি। ফলে দ্রুত বৃদ্ধি পায় খাদ্যশস্যের উৎপাদন। ২০০৮-০৯ সালে এ দেশে মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ৩৩৮ লাখ টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ৩৯০ লাখ টনে বৃদ্ধি পায়। গমের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ৯ লাখ থেকে ১৪ লাখ টনে। ভুট্টার উৎপাদন ১৪ লাখ থেকে বেড়ে গিয়ে ২৫ লাখ টনে দাঁড়ায়। চিরকালের খাদ্যঘাটতির দেশ পরিণত হয় খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে। বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ স্বীকৃতি লাভ করে খাদ্য রফতানিকারক দেশ হিসেবে। দানাদার খাদ্যশস্যের পর আলুর উৎপাদনে বিপুল উদ্বৃত্ত অর্জনের বিষয়টি উল্লেখ করার মতো। দেশের মানুষের দৈনিক জনপ্রতি আলুর চাহিদা হচ্ছে ৭০ গ্রাম। আমাদের দৈনিক প্রাপ্যতা জনপ্রতি প্রায় ১৭০ গ্রাম। বর্তমান শতাব্দীর গোড়ার দিকে আলুর মোট উৎপাদন ছিল প্রায় অর্ধকোটি টন। এখন তা এক কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকে আলু রফতানি হচ্ছে বিদেশে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আলু রফতানি করে আমাদের আয় হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। শস্য খাতে আরেকটি বড় সাফল্য অর্জিত হয়েছে সবজি উৎপাদনে। ২০০১ সাল থেকে বিদায়ী বছর পর্যন্ত সবজি উৎপাদন প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন ও ভারতের পর বিশ্বের সবজি উৎপাদন বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। মৌসুমের শুরুতে বাজারে সবজির দাম ভালো থাকায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবজির রফতানি সম্প্রসারিত হওয়ায় কৃষকরা সবজি চাষে বেশ উৎসাহিত হচ্ছে। অনেক শিক্ষিত তরুণ এখন আধুনিক সবজি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

বিষয়: বিবিধ

৭২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File