অক্ষুন্ন হোক "নদীমাতৃক' পরিচিতি

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৬:২৭:১৮ সন্ধ্যা



ছবি- সংগৃহীত

আবহমান কাল থেকে এ দেশের আপামর জনতা স্বদেশের যে ভৌগলিক পরিচয় জেনে আসছে সেটা হলো, নদীমাতৃক বাংলাদেশ। কিন্তু সময়ের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে এই জনপদের মানুষ তার সেই 'নদী মাতা'কে ক্রমাগত হারাতে হারাতে আজ নিজেদের অস্তিত্ব হারানোর ঝুঁকিতে উপনীত হয়েছে, তার খোঁজ কি রেখেছে এদেশের অধিবাসীরা! বিগত ৪৫ বছরে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক নদীই শুকাতে শুকাতে ক্রমান্বয়ে মরে গেছে। এ দেশে একসময় বয়ে চলা প্রায় ১৩০০ নদীর সংখ্যা এখন ৭০০-তে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই এক ভয়াবহ তথ্য। বিষয়টি নিয়ে এক দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকাতেও। গত শুক্রবার "নদী বাঁচাও আন্দোলন' ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে 'নদ-নদী রক্ষায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয়' শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রকৌশলী জাবের আহম্মেদ ও মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে চার দশকে এদেশের ১৩০০টি নদ-নদী এখন মাত্র ৭০০ তে নেমে এসেছে। এছাড়া বেঁচে থাকা নদ-নদীর মধ্যেও প্রবাহমান নদীর সংখ্যা অর্ধেক। "নদী বাঁচাও আন্দোলন'র পক্ষ থেকে দেশের নদী রক্ষায় মোট ১৬টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে আছে- নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, কৃত্রিম লেক বা সমুদ্র সৈকতে ইঞ্জিন চালিত নৌকার পোড়া মবিল, তেল, গৃহবর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা, প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিনসহ অপচনশীল বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে আইনি পদক্ষেপ নেয়া, এ জন্য প্রয়োজনীয় জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপও নেয়া যেতে পারে। নদী বাঁচাতে নদীর সীমানা রক্ষায় স্থায়ী সার্ভে কমিটি গঠন করে তিন মাস পর পর নদীর পাড় সরেজমিনে পরিদর্শন করে নৌ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতর ও পরিবেশবাদী সংগঠনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ভূমিখাদকদের অবৈধ দখল থেকে নদীকে রক্ষা করতে দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়। মধ্য মেয়াদি পাঁচটি সুপারিশে বলা হয়েছে- সুপেয় জলের আধার সৃষ্টির জন্য ভরাট ও অর্ধ ভরাট হয়ে থাকা মজা পুকুর এবং দীঘিগুলোকে খনন ও পুনঃখনন প্রক্রিয়ার আওতায় আনা। মাঝারি ও ছোট নদী-নালা, খাল-বিলগুলোকে সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা। বন্যা কবলিত এলাকায় উচ্চ ফলনশীল ও দ্রুতবর্ধনশীল ফসলের ব্যবস্থা করা। নদীবান্ধব অর্থনীতি ও যোগাযোগে ব্যবস্থা চালুর জন্য নদী বন্দরগুলো পুর্নগঠন ও সংস্কার করা এবং পরিকল্পিতভাবে নদী-নালা ও খাল-বিলের উপর ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ করা। দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- শিল্পবর্জ্যের দূষণ থেকে নদী রক্ষায় শিল্পকারখানায় ২৪ ঘণ্টা ইটিপি (Effluent Treatment Plan) চালু রাখা, বিভিন্ন হাওড়-বাওড়-বিল ও পতিত নদী-নালাগুলোর উৎসমুখের বাঁধাগুলো সরিয়ে নিম্নভূমিতে জলের প্রবাহ সচল রাখার ব্যবস্থা করা। এই পদক্ষেপগুলো গৃহিত হলেই রোধ করা সম্ভব হবে এ জনপদের মানুষের স্বাভাবিক-সাবলীল জীবনযাত্রার অন্যতম নিয়ামক নদীর অপমৃত্যু। সরকার আর সচেতন জনতার যুগলবন্দী প্রয়াস আগামী দিনগুলিতে নদীর অপমৃত্যু প্রতিরোধে সফল হবেই। অক্ষুন্ন থাকবে এ জনপদের ঐতিহ্যবাহী "নদীমাতৃক' পরিচিতি – এটাই আজ সময়ের দাবি।



বিষয়: বিবিধ

৭৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File