আশার হাতছানি

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৫:৩৩:৩৯ বিকাল



দেশীয় পরিমন্ডলে পাঁচ শতাধিক কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক স্পর্শ করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। এই সাফল্য অনন্য ও প্রশংসনীয় এবং দেশের প্রায় ২ কোটি কিডনি রোগীর জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এক সুসংবাদ। তবে এই সাফল্য উদযাপনের উচ্ছাসের মাঝে বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বিরাজমান নানা সমস্যা। যেমন— দেশে কিডনি রোগীর চিকিৎসাসেবার পরিধি আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেলেও প্রতিস্থাপনের জন্য চাহিদা অনুযায়ী কিডনির প্রাপ্যতা অত্যন্ত অপ্রতুল। কেননা দেশে কিডনি দাতার সংখ্যা দিন দিন ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে পারিবারিক কিডনি দাতার সংখ্যাও। অসহায় কিডনি রোগীদের বাঁচাতে হলে কিডনি প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত এসব সমস্যার আশু সমাধান একান্ত প্রয়োজন। বর্তমানে কিডনিজনিত অসুস্থতা বিশ্বের একটি অন্যতম যন্ত্রণাদায়ক স্বাস্থ্যগত সমস্যা। মানবদেহের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি, এটি বিকল হলে শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া-কর্মগুলি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ব্যথার ঔষধের যথেচ্ছ ব্যবহার, ভেজাল খাদ্য, ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অপারেশন পরবর্তী ইনফেকশন, মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন ইত্যাদি কারণে কিডনি বিকল বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে প্রায় ৬০ ভাগ রোগীকেই নিরাময় করা সম্ভব। তবে রোগ জটিল আকার ধারণ করিলে আমৃত্যু ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের কোন বিকল্প নাই। দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের উন্নত ব্যবস্থাপনা গড়িয়া তোলা গেলেই এ ধরনের রোগীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারবে। উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় আত্মীয় এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্য থেকে ডোনার পাওয়া গেলে তাদের কিডনি গ্রহণ করা দরকার। ১৯৯৯ সালের বাংলাদেশ টিস্যু প্রতিস্থাপন আইন অনুযায়ী শুধু নিকটাত্মীয়রাই কিডনি দিতে পারে। তারা হলো—বাবা, মা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে, চাচা, ফুফু, মামা, খালা এবং স্বামী ও স্ত্রী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর আওতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তবে আশার কথা এই যে, বাংলাদেশে বর্তমানে স্থানীয়ভাবে কিডনি প্রতিস্থাপনে সফলতার হার সন্তোষজনক। উন্নত বিশ্বে যেখানে এই হার ৮৬ ভাগ, সেখানে আমাদের দেশে এই হার ৮২ ভাগ। কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই কিডনি ডোনেশনের বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। জীবিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কিডনি সংগ্রহে সংকট থাকায় দেশে এখন মৃত ব্যক্তিদের নিকট হতে মৃত্যু পূর্ববর্তী অঙ্গদানের অঙ্গীকারের আওতায় কিডনি সংগ্রহের প্রচলন বৃদ্ধি করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও আইনি কাঠামো তৈরি করা দরকার। অন্য একটি আশাব্যঞ্জক সুসংবাদ হলো, বাংলাদেশি বংশোদভূত একজন মার্কিন জৈব-প্রকৌশলী ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড থেরাপিউটিক সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক ড. শুভ রায়ের নেতৃত্বে কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপনের গবেষণা বর্তমানে প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২০২০ সাল নাগাদ কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপনের এই প্রযুক্তিও সুলভ হতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় এক প্রকার বিশেষ যন্ত্র সংশ্লিষ্ট কিডনি রোগীর রক্ত সঞ্চালক অঙ্গ ও ক্ষতিগ্রস্ত কিডনির কাছে সংযুক্ত করা হবে যা হরমোন তৈরি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও রক্ত পরিশোধনসহ অধিকাংশ জৈবিক কাজ সম্পন্ন করবে। কিডনি ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের এই মানসম্মত বিকল্প আগামী দিনগুলিতে কিডনি রোগীদের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটাবেই। দেশ-বিদেশের কিডনি রোগীদের জন্য এটা এক সুন্দর আশার হাতছানি।

বিষয়: বিবিধ

৮৫৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381643
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ রাত ০৮:৪৩
হতভাগা লিখেছেন : কিডনী ডোনেট এর ব্যাপারগুলো আইনী মারপ্যাচে জটিল হয়ে আছে । আপনজন ছাড়া কিডনী নিতে গেলে অনেক জেরার মুখোমুখি হতে হয় ।

আপনজনেরাও দিতে অনেক সময় হেসিটেট করে কারণ তারও তো জীবনটা পড়ে আছে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File