সমুদ্র মন্থন
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৪:১৭:২৯ বিকাল
পৌরনিক উপজীব্যে আছে দেবতারা সমুদ্রমন্থন করে লাভ করেছিল অমৃত আর গরল। তারপর থেকেই মানুষের চেতনার মাঝে একটি বড় জায়গা দখল করে আছে সমুদ্র, তার অফুরন্ত সম্পদের জন্য। মানব সভ্যতার বিকাশে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার। তাই বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার তার কূটনৈতিক সাফল্যে "সমুদ্র বিজয়ে' অর্জিত বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশির বুকে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকারকে কাজে লাগিয়ে এর বিপুল সম্পদ ও সম্ভাবনা ব্যবহার করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সময়োপযোগী উদ্যোগ নিতে উদগ্রীব। এরই ধারাবাহিকতায় গভীর সমুদ্র এলাকায় তেল-গ্যাস সন্ধান ও মৎস্য আহরণের জন্য সরকার ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকায় বহুমুখী প্রকল্প নিয়েছে। এর আওতায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক মাল্টিডিসিপ্লিনারি জাহাজ কেনা হবে। জাহাজটি তৈরি করতে কমপক্ষে ২ বছর সময় লাগবে। বাকি ৬৫০ কোটি টাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গবেষণা সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বাংলাদেশ ভূতাত্বিক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। জাহাজটি সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানসহ অন্যান্য সম্পদ আহরণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে জরিপ ও মানচিত্রায়ণের কাজ করবে। জাহাজটির দৈর্ঘ্য হবে ৯০ থেকে ১০৫ মিটার আর প্রস্থ ১৬ থেকে ২০ মিটার। গভীরতা হবে ৪.৫ মিটার। একনাগারে ৪৫ দিন সাগরে চলতে পারবে এ জাহাজ। গতি হবে ন্যূনতম ১২ থেকে ১৪ নটিক্যাল মাইল। জাহাজে একসঙ্গে ৬০ থেকে ৭০ জন ক্রু থাকতে পারবেন। সম্পূর্ণ চিকিৎসা সুবিধাসহ জাহাজের ডেকে থাকবে একটি হেলিপ্যাড। এতে আনুষঙ্গিক গবেষণার উপকরণসহ সম্পূর্ণ সাইসমিক সেট, সনিক ড্রিলিং রিগ, একক ও বহু বিচ্ছুরণ ক্ষমতাসম্পন্ন ইকো সাউন্ডার, সাব বটম প্রোপাইলার, সাইড স্ক্যান সোনার থাকবে। সিটিডি প্রোপাইলার, মাল্টিসেন্সর কোর লগার, স্পিলিটার ও স্যাম্পলার, অটোমেটিক ডপলার কারেন্ট মিটার, মেরিন মেগনেটোমিটার থাকবে। এছাড়া ডিপ ওয়াটার ক্যামেরা ও লেজার স্ক্যানার, সেডিমেন্ট কোরার, গ্রাভিটি ও সনিক ভাইব্রেটরও থাকবে এ জাহাজে। এতে থাকবে ওয়েট অ্যান্ড ড্রাই গবেষণাগার, নমুনা প্রসেসিং গবেষণাগার, কোর স্ক্যানিং গবেষণাগার, সাইসমিক গবেষণাগার, পলল গবেষণাগার, ডেটা প্রসেসিং গবেষণাগার, হাইড্রোকেমিস্ট্রি গবেষণাগার ও কুলিং চেম্বার। জাহাজটি দিয়ে সমুদ্রের তলদেশের ১৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত স্যাম্পলিং, পানি স্যাম্পলিং, জৈবিক নমুনা, জলপথ স্যাম্পলিং, জল কলামের পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এছাড়া ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত আঞ্চলিক সমুদ্রের হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে এবং বঙ্গোপসাগরে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল (৬৪৮.২ কিলোমিটার) পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে জরিপ চালানো যাবে। বাংলাদেশে ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা-সংক্রান্ত জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশের অগভীর ও গভীর সমুদ্রের তলদেশে অতি মূল্যবান খনিজসম্পদ ইউরোনিয়াম ও থোরিয়াম এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, অগভীর সমুদ্রে সন্ধান মিলেছে সিমেন্ট তৈরির অন্যতম কাঁচামাল বিপুল পরিমাণ ‘ক্লে’র। ১৩টি স্থানে রয়েছে ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুটাইল ও ম্যাগনেটাইটসমৃদ্ধ ভারি খনিজ বালু। এছাড়া অগভীর সমুদ্রের তলদেশে কোবাল্ট, ভানাডিয়াম, মলিবডেনাম ও প্লাটিনামে গঠিত ম্যাঙ্গানিজ ক্রাস্ট এবং তামা, সিসা, জিংক, কিছু পরিমাণ সোনা ও রুপা দিয়ে গঠিত সালফাইডের অস্তিত্ব আছে। পাওয়া যেতে পারে তেল ও গ্যাসের বড় ধরনের মজুদ। সমুদ্র মন্থন করে সাগরের ১৪০০ থেকে ৩৭০০ মিটার গভীরে থাকা এসব অতি মূল্যবান সম্পদ উত্তোলন করতে পারলেই রাতারাতি বদলে যাবে বাংলাদেশের ভাগ্য।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Did not catch your point? Need a bit explanation.
আর এসব বেনিয়ারা ৮০ ভাগেরও বেশী সম্পদ নিজেরা নিয়ে যায় এবং বাকী যে ২০% আছে তা চড়া মূল্যে বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করে ।
স্বাধীনতার ৪০/৪৫ বছর পার হয়ে গেলেও আমরা নিজস্ব খনিজ সম্পদ আহোরনের জন্য টেকনলজি ও দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে পারি নি ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন