তরুণরাই নির্মান করবে কাঙ্খিত সোনার বাংলা
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৩:৩২:১২ দুপুর
বর্তমানে দেশে সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মের কিছু অংশের বখে যাওয়া, অপরাধে জড়িয়ে পড়া, জঙ্গি হওয়া, মানুষ হত্যায় মেতে ওঠা ইত্যাদি ঘটনায় সকলে বিষ্মিত হচ্ছে, নানা পরামর্শ শুনছে এবং দিচ্ছে, কিন্তু বিদ্যমান সমস্যার মৌলিক কোন পরিবর্তন হচ্ছে কি? আসলে দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, অর্থনৈতিক পরিবর্তনও দৃষ্টিতে পড়ার মতো, সমাজের কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটছে দ্রুততার সঙ্গে, কিন্তু আধুনিক, চিন্তাশীল, সৃজনশীল মানসিকতা বিকাশের সমস্যা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। এদেশে বেশিরভাগ পরিবারই নিজেদের বিশ্বাস এবং ধ্যান-ধারণার আলোকে শিশুদের গড়ে তোলে। শিশুর মানস গঠনে
প্রকৃতির তরুলতা, জীবজগৎ, প্রাণী, মানুষ, চারপাশ ইত্যাদি সম্পর্কে তাদের সহজ, সরল, কৌতূহল নিবারণ, নতুন নতুন উদ্দীপক প্রশ্ন করে জানার আগ্রহকে পাশ কাটিয়ে তাদেরকে অনেক সময় এমন কিছু শিক্ষকের হাতে তুলে দেয়া হয় যাদের এ সম্পর্কে জ্ঞানভিত্তিক কোন মৌলিক ধারণাই নেই। তারা বাস্তবতা বিবর্জিত ধর্মীয় উগ্রবাদের অন্ধবিশ্বাসে শিশুদেরও তাদের
নিজেদের মতো করে গড়ে তুলতে নানা কাল্পনিক বিষয়ের আশ্রয় নেয়। যা ঐ শিশুদের চেতনা জানা ও শেখার শুরুতেই নানা বিভ্রান্তি, ভয়-ভীতি, অন্ধ বিশ্বাস ইত্যাদিতে ভরপুর করে তোলে। কোন বয়সের শিশুকে কি ধরনের পাঠ দিতে হয়, ধর্মের কোন কোন দিকগুলোর শিক্ষায় শিশুদের মন মানবিকতায় ভরে উঠবে, সৎ, সুন্দর জীবন গঠনে সহায়ক হবে তা এই স্তরের বেশিরভাগ
শিক্ষকেরই জানা নেই। কোন বয়সের শিশুকে কি শিখতে দিতে হয়, কতটা দেয়া উচিত এ বিষয়ে বড়দের অজ্ঞতা, খামখেয়ালিপনা, অন্ধ বিশ্বাসসহ নানা অসম্পূর্ণতার শিকার হচ্ছে আমাদের শিশুরা। ফলে ঐ শিশুরা শৈশবেই বিভাজনের রাস্তায় হেঁটে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব বাস্তবতাকে শেখে ও বিশ্বাস করে। এই শিশুরাই তারূণ্যে আর কোনোদিন নিজেদের বিশ্ব সম্প্রদায় ও
সভ্যতার একজন হিসেবে ভাবতে পারে না। শিক্ষাজীবনের কোথাও বর্তমান বিশ্বসভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস, মানুষের অর্জনগুলো, মানুষ হিসেবে মেধা-মননের বিকাশ ঘটানোর উপায়গুলো কি, কিভাবে তারাও বিজ্ঞানী, গবেষক, শিল্পী, সাহিত্যিক, জ্ঞানের উদ্ভাবক, সৃষ্টির রহস্যের উন্মোচনে অবদান রাখতে পারবে সেই চিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটানোর ধারে-কাছেও তাদের নেয়া হয় না। ফলে তাদের মাঝে প্রকৃতি, সমাজ ও মানুষ সম্পর্কে কোনো কৌতূহলী ধারণাই তৈরি হয় না, তাদেরকে আমরা প্রশ্ন করতে, ভাবতে এবং জানতে উৎসাহী করি না। ফলে নানা অন্ধ বিশ্বাসে বিভ্রান্ত হয়ে তারা ব্যতিক্রমী কিছু ঘটাতে চায়। ছোটকাল থেকে যে সাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা বা দীক্ষা নিয়ে বড় হয়ে ওঠে সে একই পথে চরমভাবাপন্ন হতেও তারা কোনো দ্বিধা করে না, এরাই জঙ্গিবাদের হাতে ধরা দেয়। কেননা তাদের বিশ্ববাস্তবতা বোঝার মতো জ্ঞান নেই, আধুনিক মানবজীবন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। এ কারণেইে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ প্রকৃত মানবসম্পদ ও সৃজনশীল মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারছে না। ফলে দেশ ও জাতি বঞ্চিত হচ্ছে মেধা, মনন ও প্রগতিশীলতার বেড়ে ওঠা শিশু, কিশোর ও তরুণদের সার্বজনীন প্রতিনিধিত্বের ইতিবাচক অবদান থেকে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, তারুণ্যের এমন অপচয় রোধকল্পে সন্তানদের প্রকৃত সৃজনশীল আধুনিক মানুষরূপে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, অনুসৃত পথ ও মতের যথার্থ অনুশীলনের অভিজ্ঞতা এদেশের অনেকেরই খুব একটা জানা নেই। তারুণ্যের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে নিরবিচ্ছিন্ন করতে অতিদ্রুত আমাদের সন্তানদের সঠিকভাবে বেড়ে উঠা ও গড়ে উঠার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এ দেশের তরুণ প্রজন্ম আমার, আপনার সকলের আস্থাভাজন হয়ে গড়ে উঠবে। স্বদেশ বিনির্মাণে তরুণদের ইতিবাচক অবদানে আমরা সকলে ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে গর্বিত হতে পারব।
বিষয়: বিবিধ
৮১৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন