রপ্তানি সম্ভাবনায় খেজুর গুড়
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৫:৪৪:০৭ বিকাল
একসময় মাগুরা অঞ্চলের খেজুরের গুড় থেকে উৎপাদন হতো বাদামি চিনি। খেজুর গুড়, পাটালি ও বাদামি চিনির খ্যাতি ছিল সারা বিশ্বে। খেজুর গুড় শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল বিশাল বাণিজ্য। কিন্তু কালের পরিক্রমায় অনেকটা হারাবার উপক্রম হলেও সম্প্রতি নতুন করে একটা সম্ভাবনা তৈরি করেছে। খেজুর রসের উপজাত ব্যবহার করে নানা রপ্তানি পণ্য উৎপাদন করা হলে আবার ফিরে আসতে পারে খেজুরের রস-গুড়ের হারানো ঐতিহ্য। এই শিল্পকে নতুন করে পুনরজ্জিবিত করতে পারলে এর মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।খেজুরের রস গুড় থেকে আবারো ব্রাউন সুগার কারখানা চালুর উদ্যোগ নেয়া সম্ভব। গুড়-পাটালির পাশাপাশি খেজুর রসের উপজাত থেকে জুস, জেলি, প্রাকৃতিক ভিনেগার ও সিরাপসহ নানা পণ্য তৈরি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এতে খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরে আসার পাশাপাশি সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ। উন্মোচিত হবে অর্থনীতির নতুন দ্বার। সুমিষ্ট খেজুরের রস জ্বালিয়ে তৈরি হয় দানা, ঝোলা, নলেন গুড় ও পিঠা-পায়েশ। যার স্বাদ ও ঘ্রাণই আলাদা। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। খেজুর রসের গুড় ও পাটালি উৎপাদন গ্রামবাংলায় এখনো চালু আছে। এ এলাকার খেজুর রস-গুড়-পাটালি প্রসিদ্ধ। শীত মওসুমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড়-পাটালি তৈরি এবং বিক্রি করে উপজেলার আট ইউনিয়নের দুই হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন। খেজুর গাছ থেকে যারা রস সংগ্রহ করেন স্থানীয়ভাবে তাদের গাছি বলা হয়। শীতের শুরুতেই মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার গ্রামীণ জনপদের সর্বত্র খেজুরগাছ থেকে রস আহরণ শুরু হয়। সদর, নহাটা, রাজাপুর, বাবুখালি, বিনোদপুর, বালিদিয়া, পলাশবাড়িয়া ও দীঘা ইউনিয়নের কয়েক শ’ গ্রামে এ বছর প্রায় পঁচিশ হাজার খেজুর গাছ থেকে অন্তত ৫০০ মেট্রিক টন গুড়-পাটালি উৎপাদন হবে। এসব গাছ থেকে শীতের শুরুতেই রস আহোরণ শুরু হয়। যা থেকে নলেন গুড় ও পাটালি উৎপাদিত হয়। ব্রিটিশ আমলে খেজুর গুড় থেকেই তৈরি হতো চিনি। এ চিনি ‘ব্রাউন সুগার’ নামে পরিচিত ছিল। এই চিনি ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হতো। সাদা চিনি উৎপাদন শুরু হলে খেজুর গুড় থেকে চিনির উৎপাদনে ধস নামে। একে একে কারখানাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। খেজুরের গুড় তৈরি ও সংরক্ষণে আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এখনো রস থেকে গুড় পাটালি তৈরিতে মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিই ব্যবহার করা হচ্ছে। গুড় পাটালি তৈরিতে আধুনিকতা আনা গেলে এটিও রফতানি পণ্যের তালিকায় স্থান পাবে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদিত গুড়ের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন চাষিরা। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হলে খেজুরের রস-গুড় প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে খেজুরের রসের উপজাত ব্যবহার করে নানা পণ্য উৎপাদন সম্ভব। খেজুর রস থেকে মল্টেড ভিনেগার ও সাদা ভিনেগার তৈরি করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এ জন্য সড়কপথ, জমির আইল, পতিত জমি ও বাড়ির আঙিনায় কোটি কোটি খেজুর গাছ লাগানোর সুযোগ কাজে লাগাতে সরকারি উদ্যোগ নিতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৯৭০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন