গৌরবান্বিত বিজয়ের মাস- ডিসেম্বর
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৫:২৭:২৭ বিকাল
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তপাত শেষে পাকিস্তানি নরপিশাচদের আত্মসমর্পণে সক্ষম হয়েছি আমরা। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন ভূ-খণ্ড পেয়েছি। সেই পবিত্র রক্তের পবিত্রতা রক্ষা করতে পেরেছি? স্বাধীনতার ৪৫ বছর হয়ে গেলো। নিজের মায়ের জন্য একবারও মূল্যবান সময় দিতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদের রঙিন করে তাহলে কী লাভ? সোনার বাংলা পেয়েছি, এখনো নিজের মধ্যে নিজেদের লুকিয়ে রেখেছি। কবে আমাদের ঘুম ভাঙবে আর কবে আমরা সুন্দর সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়বো। রক্তের দাগ না শুকাতেই আমরা হারিয়েছি আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টাকে। যার ক্ষতি কখনো পূরণ হবার নয়। সামরিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সাংস্কৃতিক বৈষম্য থেকে উদ্ধার করে দেশ আজ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশকে দুর্বল ভেবে কেউ কেউ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারপরও বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দন গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন আমরা দুর্বল নয়। আমরাও পারি। পদ্মা সেতুর কাজ আমাদের নিজস্ব অর্থায়নেই হচ্ছে। ৪৫ বছরে এটাই আমাদের প্রাপ্তি। ১১১টি ছিটমহলের জনতা মুক্তির স্বাদ পেয়েছে এটাও আমাদের বিজয়ের আরেক আনন্দ। সারা দেশেই শহীদদের রক্তে ভেজা মাটি, পা রাখার জায়গা নেই। শহীদদের রক্তের ঋণ আজও কাঁধে নিয়ে অপরাধী হয়ে ঘুরি। যে যুদ্ধের পর দেশটির আন্তর্জাতিক সমর্থন ছিল অর্ধশতেরও বেশি দেশের। বছর ঘুরে এলেই আমরা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের আনন্দে মেতে উঠি। মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছেন তাদের অনেকে এখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আবার অনেকে বিদায় নেবেন। স্মৃতি রোমন্থন যা করার সবই করছেন প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ। এই প্রবীণগণ মারা গেলে স্মৃতি রোমন্থন করবে কী আমাদের মত স্বাধীনতা না দেখা নাবালকরা? তাহলে ইতিহাস তার সঠিক ঐতিহ্য হারাবে বৈ কি। মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বিতরণ করা হয়েছে। দলিলপত্রগুলো বিতরণ পর্যন্তই শেষ কথা নয়। কয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই দলিলপত্র পড়ানো হয়। কয়টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের এই দলিলপত্র নিয়ে পাঠচক্র হয়। বা কয়জন শিক্ষক দলিলপত্রগুলো খুলে নিজের জ্ঞান সমৃদ্ধ করেন। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই দলিলপত্রগুলো বাক্সবন্দি করা রয়েছে। তাহলে দলিলপত্র করে কী লাভ হয়েছে? প্রতিষ্ঠানে এ রকম একটি মূল্যবান জিনিস রয়েছে সেটা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জানে না। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। দেখছে রাজাকার আল বদর আল শামসদের মতো ভয়ঙ্কর রক্তপিপাশুদের যুদ্ধাপরাধের বিচার। বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করতে হলে এসব বিকারগ্রস্ত ঘাতকদের কথাও উঠে আসে। এই ঘাতকরা হত্যা করেছে একশ বুদ্ধিজীবীকে। পাকবাহিনী দিয়ে ধর্ষণ করেছে আমাদের সম্ভ্রম। অপমান করেছে আমাদের বাঙালির রক্তকে। তারা খুন করেছে একটি জাতিসত্তাকে, জাতি বোঝার শক্তিকে, পথচলার আলোকে, অনুভব করার শক্তিকে, তারা খুন করেছে বাঙালির বিবেককে। আমাদের এখনো পথ অনেক বাকি। দেশের প্রতিটি মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারে। মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে। সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা ভুলিনি আমাদের শহীদদের শপথ। পরস্পরে কাঁধে কাঁধ রেখে লক্ষ্যে অগ্রসর হবো। বাংলাদেশ অপরাজেয়, রক্তিম সূর্যের আলোই অমিত তার শক্তি। তরুণ প্রজন্ম জাগবে সেই শক্তিতে, সোনার বাংলা অগ্রসর হবে। এটি আমাদের আত্মপ্রত্যয়। মুক্তিযুদ্ধ বস্তাবন্দি করে রাখা জিনিস নয়। এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৭৩৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন