৩৪তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মর্যাদা অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৭:৫০:২৮ সন্ধ্যা
স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল স্বাধীনতার দশ বছর আগে, ১৯৬১ সালে। পাবনা জেলার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। অধিগ্রহণ করা হয় ২৬০ একর জমি। ১৯৬৪ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতিও আমদানি করা হয়। তবে সেই যন্ত্রপাতিবাহী জাহাজ চট্টগ্রামে না এসে নোঙ্গর করে করাচি বন্দরে। ওই স্বপ্নের ওখানেই মৃত্যু হয়। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৫০ বছরের পুরনো ওই স্বপ্ন আবার জাগিয়ে তোলে।
২০১০ সালের ২১ মে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার সঙ্গে ঋণচুক্তিও হয়। বর্তমানে সম্পন্ন হওয়ার পথে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ। অপেক্ষা এখন প্রকল্পের মূল কাজের। এই প্রকল্প সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ৩৪তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আর উৎপাদন সক্ষমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ চলে আসবে শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে। আর দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ ভাগ আসবে এই খাত। এটিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার জন্য মাইলফলক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এটি দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প। ২ হাজার ৪শ’ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার তৃতীয় প্রজন্মের (সর্বাধুনিক প্রযুক্তি) এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ব্যয় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা (১৪.১৪ বিলিয়ন ডলার)। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা ও রাশিয়ার ঋণ দেবে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা (১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার)। এ প্রকল্পে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ লাইবর প্লাস ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার জন্য গত ২৬ জুলাই বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে রাশিয়া। একনেকে অনুমোদনের পর পুরোদমে শুরু হবে মূল প্রকল্পের কাজ। ১২শ’ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট থাকবে এই প্রকল্পে। প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২১ সাল নাগাদ। ওই বছরেই জাতীয় গ্রিডে পারমাণবিক বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার আশা করছে সরকার। আর দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আয়ু নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বছর। এই কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হবে ২ টাকার কম। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও নিরাপত্তার ইস্যুটি মাথায় রেখেই রাশিয়ার সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি ভিভিইআর ১২০০ মডেলে স্থাপিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিশ্বের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো মাথায় রেখেই রাশিয়া তার সর্বশেষ মডেলের আধুনিকায়ন করে এই মডেল দাঁড় করিয়েছে। রাশিয়ার অভ্যন্তরেই নবোভরনেজ ও লেনিনগ্রাদে ভিভিইআর ১২০০ মডেলটি চালু করা হয়েছে। তুরস্ক ও ফিনল্যান্ডসহ অনেক দেশে এই প্রযুক্তি গ্রহণে এগিয়ে এসেছে। এসব কারণে বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার সক্ষমতা আছে এই মডেলটির। আর পাবনা জেলাতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ৭.৮ মাত্রার যার কেন্দ্রস্থল ছিল নেপালে। এই মডেলটি যে কোনো ধরনের বিমান হামলা থেকেও রক্ষা পেতে সক্ষম।
বিষয়: বিবিধ
৮৫৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন