রামপাল সুন্দরবনের ধ্বংশ নয়, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৫:২২:২০ বিকাল
২০৪০ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৬৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। প্রতিবছর গড়ে ৮ শতাংশ করে চাহিদা বাড়বে। বাংলাদেশের বিদ্যুতের এই চাহিদা নিবারনের লক্ষ্যে সরকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি রাম পালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে নানাভাবে যৌক্তিক-অযৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারের মহৎ উদ্যোগকে এক শ্রেনীর লোক প্রশ্নের মুখোমুখি করার অবিরত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের এ ভ্রান্ত ধারণাগুলো পরিবর্তন এবং জানা জরুরী। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশ এবং পরিবেশের ক্ষতি করে, তারা একটু বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘুরে আসতে পারেন। বড়পুকুরিয়া একটি সাব-ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্ট। সাব-ক্রিটিক্যাল এবং আলট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্লান্টের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। সাব-ক্রিটিক্যালের তুলনায় সুপার ক্রিটিক্যালে ৪০ শতাংশ কার্বন, সালফার ও নাইট্রোজেন গ্যাস নিঃসরণ কম হয়। আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্লান্টে যে কোন দূষণের মাত্রা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব। সুন্দরবনের যাতে ক্ষতি না হয় সেদিক বিবেচনায় রেখেই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি হবে আমদানি করা কয়লা দিয়ে। কয়লা আসবে সমুদ্রপথে। আবার প্রকল্পের জন্য পানিরও প্রয়োজন রয়েছে। সুন্দরবনের কথা বিবেচনা করে কতটুকু দূরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না সে বিষয়টিও ভাবা হয়েছে। দূষণ প্রতিরোধে সর্বাধুনিক যত ধরনের প্রযুক্তি পাওয়া যায়, সেগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ফ্লু-গ্যাস টেম্পারেচার, নাইট্রোজেন, সালফার-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-ডাই অক্সাইড ইত্যাদির নিঃসরণ পর্যবেক্ষণের জন্য রিয়েল টাইম কন্টিনিউয়াস এমিশন মনিটরিং সিস্টেম থাকবে। যাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যাবে। পাশাপাশি অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রপাতি বসানো হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইএসপি থাকবে যা উদ্গিরণকৃত ফ্লাই এ্যাসের ৯৯.৯৯ শতাংশ ধরে রাখতে সক্ষম হবে। এই ছাই সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত হবে। একইভাবে এফজিডি স্থাপনের ফলে ৯৬ শতাংশ সালফার গ্যাস শোষিত হবে। এই সালফার গ্যাস থেকে জিপসাম সার তৈরি হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনির উচ্চতা হবে ২৭৫ মিটার। এই চিমনি দিয়ে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হবে তা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১.৬ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য যে সমস্ত গ্যাস সামান্য পরিমাণে বের হবে, সেগুলোর ঘনত্ব বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃত মাত্রার চেয়ে অনেক কম থাকবে। রামপালে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। একটি সাধারণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পোড়ানোর দক্ষতা যেখানে ২৮%, সেখানে আলট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্টের দক্ষতা ৪২-৪৩%। অর্থাৎ একই পরিমাণ কয়লা পুড়িয়ে আমরা দেড়গুণ বিদ্যুৎ পাব। সবচেয়ে গুণগত মানসম্পন্ন কয়লা এখানে ব্যবহার করা হবে। কয়লা আমদানি করা হবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। প্রকল্পটি সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং প্রকল্প থেকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের নিকটতম দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। কয়লার ধূলিকণা প্রতিরোধের জন্য ঢাকনাযুক্ত জাহাজে কয়লা আনা হবে। লাইটার্জে পরিবহনের সময়ও ঢাকনার ব্যবস্থা করা হবে। এতে বাতাসে কয়লার ধূলিকণা ছড়াতে পারবে না। সরকার মাতারবাড়ি, পায়রা ও রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। এসব বিদ্যুতকেন্দ্র আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে তৈরি। এতে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। বরং বেকারত্ব দূর করার ক্ষেত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হবে মাইলফলক সিদ্ধান্ত।
বিষয়: বিবিধ
৮৯৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাই বাই ফেয়ার এন্ড লাভলি
মন্তব্য করতে লগইন করুন