পরিবার হোক সুনাগরিক গড়ার প্রথম সুতিকাগার

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ১৮ নভেম্বর, ২০১৬, ০৪:৪৫:২৩ বিকাল



বর্তমানে সম্পদ আর সমৃদ্ধির নেশায় মানুষ অবিরত ছুটে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যেখানে আবহমানকাল থেকে চলমান অনেক পারিবারিক ও সামাজিক রীতিনীতি চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। এমনকি অভিভাবকরা পরিবারের সদস্যদের দিকেও মনোযোগ দিতে পারছেন না।সন্তানেরা বেড়ে উঠছে বাবা-মায়ের সান্নিধ্যবিহীনভাবে। অথচ সন্তানের সুষম শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাবা-মায়ের সান্নিধ্যের বিকল্প নেই। কিন্তু প্রাচুর্যের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা বাবা-মায়েরা এ বোধহারা হয়ে পড়েছে যে, সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়ার জন্য শুধু অর্থেরই প্রয়োজন নয়, প্রয়োজন হয় বাবা-মায়ের একান্ত সান্নিধ্য এবং নিবিড় পরিচর্যা। সন্তানকে ঘরবন্দি করে প্রযুক্তির উপর ছেড়ে দেয়ার কারণে তাদের যে কত বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, তা তারা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাচ্ছেন না। প্রথমত তাদের শারীরিক সক্ষমতা হ্রাস এবং সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। দ্বিতীয়ত প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে তারা মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তৃতীয়ত সন্তানকে সময় না দেয়ার ফলে তাদের মধ্যে একাকীত্ব এবং হতাশার সৃষ্টি হয়। এই একাকীত্ব ও হতাশা কাটাতে অনেকে নেশাসক্ত হয়ে পড়ছে। বিগত দিনগুলিতে দেশের নানা স্থানে নেশাসক্ত সন্তানের হাতে পিতা-মাতা নির্যাতিত, এমনকি খুনও হওয়া ন্যায় অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যে বাবা-মা সন্তানের কল্যাণের জন্য অর্থ রোজগারে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করেছেন, সেই সন্তান যখন অস্বাভাবিক হয়ে উঠল, তখন তাদের এই ব্যস্ততার কি কোনো মূল্য থাকল? তার সন্তান যে বিপথে গেল এর জন্য কাকে দায়ী করবে? চার. মানুষের চিরন্তন আকাঙ্খাই হচ্ছে, তার বংশধর বা পরবর্তী প্রজন্ম রেখে যাওয়া। সচেতন মানুষ মাত্রই এ কাজ করেন তার সন্তানকে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন ও সুশিক্ষিত করার মধ্য দিয়ে। এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, বর্তমানে এ দেশের বাবা-মায়েরা কি এ কাজটি সঠিকভাবে করতে পারছেন? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছে, এসব ঘটনা দেখে এ আশঙ্কাই জন্ম দিচ্ছে, কাজটি যথাযথভাবে করা হচ্ছে না। ঘটনাগুলোকে অনেকে বিচ্ছিন্ন বলে এড়িয়ে যেতে পারেন। তবে দিন দিন এসব ঘটনার বিস্তৃতি সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এসব ঘটনা আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়েরই চিহ্ন। বিচ্ছিন্ন ভেবে এড়িয়ে গিয়ে উদাসীন হয়ে পড়লে, তা বাড়তেই থাকবে। এখনই সতর্ক না হলে একসময় তা দেশের সম্পূর্ণ পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলবে। এমন অরাজকতার সৃষ্টি হবে যা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের নজরদারি না করার চলমান প্রবণতা তাদের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছে, এ বোঝা তাদের সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সমাজের সকলকে আবহমানকাল থেকে বয়ে চলা আমাদের চিরায়ত পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের দিকে ফিরে যেতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে মানুষকে আধুনিকতায় অভ্যস্ত হতে হয়, তবে সমাজের চিরায়ত মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতাকে অস্বীকার করে নয়। তথাকথিত আধুনিকতার গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলে যে মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হতে হয়, তা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি বাবা-মায়েরই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত নিজস্ব শক্তি-সামর্থ্যের মধ্যে থেকেই সন্তানকে যথাযথ নীতি-নৈতিকতার মাধ্যমে সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। হাজার বছর ধরে বহমান পরিবার ও সমাজের এই বৈশিষ্ট্যের মধ্যে থেকেই গড়ে উঠেছে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এবং দেশের সকল ক্রান্তিকালে এগিয়ে এসেছে অগ্রগামী নেতৃত্বের দায় গ্রহণে। পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতায় উজ্জীবিত বাবা-মায়ের যথাযথ ভূমিকায় আবারও সু্স্থ পারিবারিক জীবনের সঠিক তদারকিতে বেড়ে উঠবে এ দেশের সন্তানেরা, চিরায়ত পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের যথাযথ অনুসরনে গড়ে উঠবে ভবিষ্যতের সুনাগরিক হিসাবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।

বিষয়: বিবিধ

৮৭৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379804
১৯ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:৩৯
মোঃ আনোয়ার হুসাইন লিখেছেন : সুন্দর বিশ্লেষণ
379840
২০ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৪:৩০
মনসুর আহামেদ লিখেছেন :
379841
২০ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৪:৩০
মনসুর আহামেদ লিখেছেন :

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File