এক অনন্য, অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ০৮:০২:৫৭ রাত
নিজস্ব উদ্যোগে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা মারাকাশের চলমান জলবায়ু আলোচনায় প্রশংসিত হয়েছে। বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের উচ্চহারের জন্য দায়ী না হওয়া সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজনের উদ্যোগে অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়েও বাংলাদেশের অনুসরণীয় দৃষ্টান্তই এই স্বীকৃতির মূল কারণ। মারাকাশে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড ও বাংলাদেশ মিলে এচিভিং এনডিসি ও চ্যাম্পিয়নস ফ্রম এ সেক্টরাল ভিউজ বিষয়ে এক সাইড ইভেন্টের আয়োজন করে। এতে নামিবিয়া, মেক্সিকো, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ অংশ নেয়, অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের কার্বন কমানোর পরিকল্পনা তুলে ধরে। বাংলাদেশের পক্ষে বলা হয়, এ দেশ মাথাপিছু দশমিক ৩৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে যা বৈশ্বিক উষ্ণতায় কোন ভূমিকা রাখে না। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ, পরিবহন ও শিল্পখাতে ৫ শতাংশ কার্বন কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি, তা বাস্তবায়নে রোডম্যাপও তৈরি করেছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সব খাতের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় এই কমিটির সদস্য থাকবে। এছাড়া প্রত্যেকটি খাতে আলাদা আলাদা ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করবে। যার নেতৃত্বে থাকবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হলেও নিজস্ব উদ্যোগে এ পর্যন্ত ৪০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা প্রতিরোধে এদেশের সার্বিক দক্ষতা অনেকাংশেই বেড়েছে। তবে শুধু অভিযোজন করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা সম্ভব নয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশগুলোতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতি জোর দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ, গত এক দশক ধরে এ দেশে ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ফলে এই অর্জনকে অব্যাহত রাখতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে গিয়ে দেশের উন্নয়ন কাজ ব্যাহত করা যাবে না। উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিদ্যুতের যোগান নিশ্চিত করতে দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে পরিণত করার কার্যক্রম চলমান থাকলেও এ ক্ষেত্রে যাতে কার্বন নির্গমন না বাড়ে সে বিষয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে। ইতোমধ্যে দেশে ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। জমির স্বল্পতায় দেশে ব্যাপক আকারে গ্রিডভিত্তিক সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না গেলেও নিজস্ব উদ্যোগে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার। বর্তমানে বিশ্বের সব দেশ কার্বন কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করলেও বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। তাই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সহনীয় পর্যায়ে রাখতে তথা ধরণীকে রক্ষা করতে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কার্বন নির্গমনের ক্ষেত্রে অবদান আরও বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের আন্তরিকতা আর সময়োপযোগী উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রণীত রোডম্যাপ সকলের জন্য হতে পারে এক অনন্য, অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
বিষয়: বিবিধ
৯৬৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন