অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের পর্যটন খাত
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৩ অক্টোবর, ২০১৬, ০৩:৩৫:৪০ দুপুর
পর্যটন খাত হচ্ছে বাংলদেশর অপার সম্ভাবনাময় খাত। যা দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম। পর্যটন এমন একটি শিল্প, যা বহু দেশের অর্থনৈতিক খাতের অন্যতম উপাদান। এ শিল্প এখন বিশ্বব্যাপী একটি দ্রুত বিকাশমান খাত হিসেবে চিহ্নিত। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ছাড়াও বহুমাত্রিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পর্যটন অনেক দেশেরই শীর্ষ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্পে পরিণত হয়েছে। পর্যটন একটি ব্যতিক্রমধর্মী রফতানি-বাণিজ্য। অন্যান্য ক্ষেত্রে সাধারণত বিদেশে পণ্য পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। কিন্তু পর্যটনের ক্ষেত্রে বিদেশীদের দেশ ভ্রমণে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের সেবা ও সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়। পর্যটনে বিদেশী পর্যটক নিজের দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণে এসে থাকা-খাওয়া, যাতায়াত বিনোদন ইত্যাদিতে যে অর্থ ব্যয় করে, তা অন্য দেশের বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে অর্জিত হয়। পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হোটেল, মোটেল ও অন্যান্য সহসংস্থার অর্জিত অর্থ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পণ্য রফতানির তুলনায় পর্যটন শিল্প থেকে আয়ের পরিমাণ দ্রুত বর্ধনশীল। কোন এলাকায় পর্যটন অঞ্চল গঠন ও উন্নয়নের ফলে সেখানে পর্যটকের সমাগমের মাধ্যমে অর্থপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। কম শিল্পায়িত এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশের ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা আশপাশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বের বহু দেশ প্রমাণ করেছে, পর্যটন অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম। সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকং, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার জাতীয় আয়ের একটা বড় অংশ অর্জিত হয় এখাত থেকে। মালদ্বীপের অর্থনীতির প্রধান অংশ পর্যটন খাতের ওপর নির্ভরশীল। ১৯৫০ সালে বিশ্বে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র আড়াই কোটি। ২০১২ সালে বেড়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৫ কোটি। অঞ্চলভিত্তিতে ২০১২ সালে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে ইউরোপ, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। ২০১২ সালে বিশ্ব পর্যটন আয় জিডিপির ৯ শতাংশ, যা বিশ্ব রফতানির ৬ শতাংশ। এর রফতানিমূল্য ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই খাতে প্রতি ১০ জনে একজনের কর্মসংস্থান হয়েছে।বাংলাদেশেও রয়েছে অসংখ্য নৈসর্গিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, ধর্মীয় নিদর্শন ও স্থান। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার।একই
স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায় সমুদ্রকন্যা পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিচ, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, যা বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি হিসেবে পরিচিত; হিমছড়ি ঝরনা, ইনানী সমুদ্রসৈকত, হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ,
মহেশখালী, টেকনাফ, টাঙ্গুয়ার হাওড়, হাকালুকি হাওড়, কাপ্তাই, বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা, চট্টগ্রামের দিগন্তজোড়া সবুজআর পাহাড়ের গা ঘেঁষে যাওয়া আঁকাবাঁকা লেক, মায়া হরিণের জাদুমাখা সোনার চর, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার সিলেটের জাফলংয়ের পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানিতে মাছের খেলা। ঐতিহাসিক প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর, কুমিল্লার ময়নামতি, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, ঢাকার লালবাগ কেল্লা, ষাট গম্বুজ মসজিদ, আহসান মঞ্জিল ও কুষ্টিয়ার লালন শাহের আখড়া। রয়েছে ঐতিহাসিক কীর্তির ঐতিহাসিক স্থান, যেমন জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় শহীদ মিনার, জাতীয় কবির কবরস্থান, বাহাদুর শাহ পার্ক, রমনার বটমূল, কার্জন হল ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে তার অপরূপ সৌন্দর্যে।
বিষয়: বিবিধ
৭৯০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন