হাইস্পিড ট্রেনে চেপে ঢাকা হতে চট্টগ্রামে

লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৩:২৪:২৭ দুপুর

সরকার দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুট ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে মাত্র দু’ঘন্টায় যাতায়াতের লক্ষে উচ্চ গতি সম্পন্ন এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে এ রুটে যাতায়াত করতে ছয়-সাত ঘন্টা সময় লাগে। পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রকল্প সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে একযোগে ১০টি ট্রেন চালানোর জন্য ৩০০০ একর জমি ও নিরবচ্ছিন্ন ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহের প্রয়োজন হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত ট্রেনে যাত্রী ও পণ্য উভয় পরিবহন করা হবে, কিন্তু যাত্রী পরিবহন অগ্রাধিকার পাবে। এই ট্রেনে ভ্রমণে যাত্রীদের সময় এবং খরচ উভয় কমবে সেই সাথে যাত্রা আরামদায়ক করলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটে ভ্রমণকারী মোট যাত্রীর ৮০ শতাংশ উচ্চ গতির ট্রেনের যাত্রী হতে আগ্রহী হবে। এক্সপ্রেস রেলওয়ের সাথে কক্সবাজার যুক্ত থাকলে পর্যটন শহরে ভ্রমণ সহজ হবে। এক্সপ্রেস রেলওয়ে স্থাপন করা হলে যোগাযোগের ক্ষেত্র ব্যাপক সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে আন্তঃরাষ্ট্রীয় যোগাযোগের একটি সুযোগ তৈরি হবে। রাজধানী কেন্দ্রিক একমুখী রেল ব্যবস্থার পরিবর্তে মাল্টিডিরেকশনাল রেল লিংক স্থাপন করা হবে। এক্সপ্রেস রেলওয়েতে ভ্রমণের খরচ বিমান ও বাস রুটের তুলনায় কম হতে হবে। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে যাতায়াতের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ঘুরে যেতে হয়, কিন্তু এক্সপ্রেস লাইন প্রবর্তন হলে এই রুটের দুরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার কমে যাবে। উচ্চ গতির এক্সপ্রেস ট্রেন প্রথমে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, কুমিল্লার দাউদকান্দি ও মোহনপুর হয়ে কুমিল্লার ময়নামতি পর্যন্ত যাবে এবং এরপর বিদ্যমান কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রেল লাইনের পাশ দিয়ে সমান্তরালভাবে চালাবে। প্রস্তাবিত রুটে, ১১০ কিলোমিটার নতুন রেললাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে, এটি শুধুমাত্র ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে এবং বিদ্যমান রেললাইনের ভূমিতে অবশিষ্ট অংশের রেলপথ নির্মান করা হবে। ডিজেল দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড গেজের পথে ট্রেন চালানো হলে এর গতি ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার হতে পারে, কিন্তু এটা বিদ্যুত দিয়ে চালানো হলে ঘন্টায় গতি ২০০ কি.মি. পর্যন্ত বেড়ে যাবে। ট্রেন চলবে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ২৩২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টার কিছু বেশি।

এজন্য নির্মাণ করা হবেএলিভেটেড (উড়াল) বৈদ্যুতিক রেলপথ। এতে চলাচল করবে হাইস্পিড (দ্রুতগতি) ট্রেন। ৩৮৭ কোটি ডলারের (প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা) এ প্রকল্পে এরই মধ্যে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে চায়না রেলওয়ে এরিউয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি (সিআরইইজিসি)। ২০ বছর পরিচালনার পর হাইস্পিড ট্রেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করতে চায় তারা। হাইস্পিড ট্রেন চালু করতে বিশেষ ধরনের রেলপথ দরকার। এজন্য বিদ্যমান রুটের পরিবর্তে সরাসরি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, দাউদকান্দি, মোহনপুর, ময়নামতি, লাকসাম, ফেনী, চিনকি আস্তানা, সীতাকুণ্ড হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণ কমানো ও অধিক গতির জন্য উড়ালপথ নির্মাণ হবে সাশ্রয়ী। দুই ধাপে তিন বছরে এ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ঢাকা-লাকসাম রুটে প্রায় ১১১ কিলোমিটারে ব্যয় হবে প্রায় ২০৬ কোটি ডলার। এ অংশে বেশ কয়েকটি বড় সেতু নির্মাণের প্রয়োজন । আর বড় সেতু না থাকায় লাকসাম-চট্টগ্রাম রুটে ১২১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে খরচ দাঁড়াবে ১৮১ কোটি ডলারের মতো। সব মিলিয়ে প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ৩৮৭ কোটি ডলার। পুরো অর্থই বিনিয়োগ করতে চায় সিআরইইজিসি। ভারত ও চীনের সঙ্গে রেল সংযোগ উন্নয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক করিডোর বিশেষত বিসিআইএম, আসিয়ান ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথে যুক্ত হতে এটি অবদান রাখবে। এজন্য রেলপথটি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

৮৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File