সম্ভাবনার অপার দিগন্ত পায়রা সমুদ্র বন্দ ======================
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ০৩:০৭:৩১ দুপুর
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার এবং দেশে সুষম ও টেকসই উন্নয়নে সমুদ্র বন্দরের ভূমিকা অতুলনীয়। নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশের সমুদ্র বন্দর রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। তৃতীয় বিশ্বের দ্রুত অগ্রসরমান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সমুদ্র বন্দরের সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন ও এর সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সেই উন্নয়নের ধারাটিকে আরো বেগবান করা যে সম্ভব, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সমুদ্রবন্দর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এই লক্ষ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রামনাবাদ চ্যানেলের তীরে ১৬ একর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা। এই সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে সমগ্র দেশ বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সঞ্চার ঘটবে নূতন প্রাণের। খাল ও নদী বিধৌত উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চল বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার হিসাবে পরিচিত। এখানে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল সুলভ ও সহজলভ্য। সেই তুলনায় গড়িয়া উঠে নাই শিল্প-কল-কারখানা। তবে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরটি ২০২৩ সাল নাগাদ পরিপূর্ণভাবে চালু হলে এই অঞ্চলের সম্পদ-সম্ভাবনার দ্বারা জাতীয় অর্থনীতিতে আরো ফলপ্রসূ অবদান রাখার পথ সুগম হবে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে স্থাপিত হবে চার লেনের মহাসড়ক, ডাবল গেজ রেলপথ, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নৌবাহিনীর ঘাঁটি বিএনএস শের-এ-বাংলা ও সেনানিবাস। এর পাশাপাশি গড়ে উঠবে সার কারখানা, জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ মেরামতশিল্পসহ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এতে বিকশিত হবে পোশাক, ঔষধ, সিমেন্ট, পর্যটনসহ বিভিন্ন শিল্প। নিশ্চিত হইবে ব্যাপক কর্মসংস্থান। এতদ্ব্যতীত ট্রানজিট সুবিধার আওতায় এই বন্দর ব্যবহার করতে পারবে ভারত, নেপাল ও ভুটান। অন্যদিকে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোর বিসিআইএমের প্রাণকেন্দ্রও হয়ে উঠবে এই বন্দর। ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পায়রা সমুদ্র বন্দর অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে মাইলফলক হিসাবে পরিগণিত হতে পারে। এই বন্দরের সুবিধা হল, এখানে জোয়ার-ভাটা ২৪ ঘণ্টা বিদ্যমান এবং পানির গভীরতাও বেশি। ফলে সরাসরি মাদার ভ্যাসেল হইতে জেটিতে পণ্য খালাস সম্ভব। এ ছাড়া চট্টগ্রামের চাইতে এখান হতে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব কম হওয়ায় হ্রাস পাবে অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যয়ও। আমরা মনে করি, পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে পায়রা বন্দরই হবে দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। অতএব, এই বন্দরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মেয়াদি ও বহুমুখী পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন প্রত্যাশিত। মানসম্মত ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়েও সবিশেষ মনোযোগ দেওয়া বাঞ্ছনীয়। পরিশেষে অনেক সম্ভাবনাময় পায়রা সমুদ্র বন্দরের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য আমরা বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
বিষয়: বিবিধ
৯৭৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন