ফরমালিন, সমাজ, সরকার এবং আমাদের জনস্বাস্থ্য
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০২ মার্চ, ২০১৬, ০৪:৫২:৫০ বিকাল
দেশে দিন দিন খাদ্যে বিষ ও ভেজাল দেয়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে। সবার চোখের সামনেই এসব ঘটনা ঘটছে। বাজারে এমন কোন ফল নেই, যাতে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যাবে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা মানুষের জীবনের কথা না ভেবে অধিক মুনাফার লোভে খাদ্যে ভেজাল দিয়েই যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় ভেজাল বিরোধী কিছু অভিযান পরিচালনা করা হলেও তা থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল আসছে না। ফরমালিন ধ্বংস করছে মানবদেহ এবং জাতীয় জীবন। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার জন্য এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দেশবাসীকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারে এখন ফরমালিন। ফলে আমরা অনেক ফরমালিন খেয়ে বড় বড় রোগের শিকার হচ্ছি। এর ফলে মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। অথচ ভেজাল ছাড়া কোনো খাদ্যপণ্য কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনকি ফলমূল কিনেও নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। হোটেলে যে মুরগি কিংবা গরু বা খাসির মাংস পরিবেশন করা হয় তা নিয়ে সংশয় দানা বেঁধে উঠছে সেটি মরা মুরগি কিংবা অন্য কোনো জন্তুর মাংস কিনা। ফরমালিনসহ নানা বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে ফলমূল ও মাছ তরতাজা রাখা হয়, যা খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে জীবনঘাতী রোগে। এমনকি পকেটের টাকা খরচ করে বোতলজাত যে বিশুদ্ধ পানি কেনা হয় তার বিশুদ্ধতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। খাদ্যপণ্যে ভেজাল জনস্বাস্থ্যের জন্য এ মুহূর্তে এক নম্বর হুমকি। এ হুমকি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও সামাজিক সচেতনতার অভাবে তা কোনো কাজে আসছে না। ভেজালের বিরুদ্ধে আইনের যথার্থ প্রয়োগ না হওয়ার কারণেই খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর প্রবণতা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, দুধে মেলামাইন মেশানোর অপরাধে চীনে যেখানে অপরাধীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়, বাংলাদেশে ঠিক একই অপরাধে শাস্তি হয় মাত্র তিন মাস জেল। এ ধরনের অপরাধের কোন শাস্তি না হওয়ার কারণেই বাংলাদেশে আজ খাদ্যে ভেজাল মেশানো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে প্রায় প্রতিটি খাদ্যসামগ্রীর বিষক্রিয়ার ফলে কিডনি ও লিভারের অসুখে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসীনতা আসলে দেশবাসীর বিরুদ্ধে, খাদ্যে ভেজালকারীদের পক্ষে যাচ্ছে। সরকারকে খাদ্যে ভেজালকারীর বিরুদ্ধে জনস্বাস্থ্যের পক্ষে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। খাদ্যে নকল ভেজাল বন্ধে সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এ জন্য দরকার সামাজিক সচেতনতা। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠলে এ আপদ থেকে সহজেই নিস্তার পাওয়া যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে নকল ভেজালের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। খাদ্যে ভেজালকারীদের সামাজিকভাবে চিহ্নিত করে কঠোর সাজার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৮৪২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আজব দেশ! এ যেন ডাকাতিকেও হার মানায় !
ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন