নতুন চালের পিঠে পুলি
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ১৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:৩৩:০৯ দুপুর
প্রথম ফসল গেছে ঘরে,
হেমন্তের মাঠে-মাঠে ঝরে
শুধু শিশিরের জল;
অঘ্রাণের নদীটির শ্বাসে
হিম হয়ে আসে...।
বছর ঘুরে আবারও এসেছে অঘ্রাণ। প্রিয় ঋতুর প্রথম দিন আজ ১ অগ্রহায়ণ, ১৪২২ বঙ্গাব্দ। আজ থেকে আনুষ্ঠানিক শুরু হবে নবান্ন উৎসবের। নতুন চালে হবে পিঠে পুলির আয়োজন। এতিহ্যবাহী আচার উৎসবে মুখরিত হবে গ্রামীণ জনপদ। পাশাপাশি শহরেও থাকবে নবান্ন উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। অসাম্প্রদায়িক উৎসবে যোগ দেবে বাঙালী। নিজের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হবে নতুন প্রজন্ম। সব মিলিয়ে বড় ভাললাগার অগ্রহায়ণ। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দের ভাষায়, ‘আমি এই অঘ্রাণেরে ভালোবাসি বিকালের এই রং-রঙের শূন্যতা/রোদের নরম রোম ঢালু মাঠ বিবর্ণ বাদামি পাখি হলুদ বিচালি/পাতা কুড়াবার দিন ঘাসে ঘাসে কুড়ুনির মুখে নাই কোন কথা,/ধানের সোনার সাজ ফুরায়েছে জীবনেরে জেনেছে সে কুয়াশায় খালি...।’ অগ্রহায়ণের বন্দনা করে আরও অনেক গান কবিতা হয়েছে। এসব গান কবিতার বড় অংশ জুড়ে আছে নবান্ন। গোটা মাস ধরেই উৎসবটি চলবে। অনেকেরই জানা, ‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ ‘নতুন অন্ন’। নতুন আমন ধান থেকে পাওয়া চালে যে রান্না, সে উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবটি নবান্ন নামে পরিচিতি পায়। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব শুরু হয়। ইতিহাস বলে, ফসলকেন্দ্রিক সবচেয়ে প্রাচীন এবং বড় উৎসব এটি। হাজার হাজার বছর আগে নারীদের হাতে কৃষি সভ্যতার শুরু। কৃষি প্রথা চালু হওয়ার পর থেকেই নবান্ন উৎসব পালন হয়ে আসছে। তখন থেকেই ঘরে ফসল তোলার আনন্দে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন সেগুলোর অন্যতম। প্রতিবারের মতো এবারও বর্তমান সরকারের নতুন নতুন উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার, সময়মত সার ও বীজ সরবরাহ থাকায় অগ্রহায়ণের শুরুতে সোনার ফসলে ভরে উঠেছে কৃষকের জমি। হেমন্তের মৃদুমন্দ বাতাসে খেলা করছে পাকা ধানের শীষ। আপন মনে হেলছে। দুলছে। দেখে মন ভরে যায়। সোনালী ফসলের দিকে তাকিয়ে নতুন নতুন স্বপ্ন বুনছেন কৃষক। ধান কাটার কাজও শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন অঞ্চলে। লোককবির ভাষায় আইলো অঘ্রাণ খুশীতে নাচে প্রাণ/ চাষি কাঁচিতে দিলো শান/কাঁচি হাতে কচ কচা কচ কাটে চাষি পাকা ধান...। নতুন এই ধান ঘরে তোলার পর আয়োজন করা হবে নবান্ন উৎসবের। বিভিন্ন অঞ্চলে ফসল কাটার আগে বিজোড় সংখ্যক ধানের ছড়া কেটে ঘরের চালে বেঁধে রাখা হয়। বাকি অংশ চাল করে সে চালে পায়েশ রান্না করা হয়। মুড়ি-মুড়কি, পিঠাপুলি ছাড়া নবান্ন হয় না। ঐতিহ্যবাহী এসব খাবারের ব্যবস্থা হবে ঘরে ঘরে। প্রায় একই সময় আরও কিছু উৎসব অনুষ্ঠান থাকবে রাজধানী শহরে। শেকড় সন্ধানী মানুষের অংশগ্রহণে নতুন প্রাণ পাবে অসাম্প্রদায়িক বাঙালী সংস্কৃতি।
বিষয়: বিবিধ
৯৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন