মাছের প্রজনন ও সর্বোচ্চ সংরক্ষণের স্বার্থে ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মৎস্য ও চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ করাটা সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ০৯ মে, ২০১৫, ০৮:২৬:১৭ রাত
প্রবাদ রয়েছে বাংলাতেই- মারিব মৎস্য খাইব সুখে। কিন্তু মৎস্যই যদি না মেলে তবে মারিবেই কি আর খাইবেই বা কি। সুখ তো দূরে থাক, দুশ্চিন্তার পাহাড় বাড়ে মাছে-ভাতে খ্যাত বাঙালীর। কত জাতের, প্রজাতির মাছই ছিল বাংলায় সে সব মেলে প্রাচীন গ্রন্থে। পুকুরভরা মাছের দিনও গল্পগাথা হয়ে আছে। নিয়মনীতি না মেনে ও অপরিকল্পিতভাবে আইনকে তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে মাছ ধরার ফলে মৎস্য সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সহজলভ্য হয়ে সবার পাতে ধরা দেয় না। দেশের জনগণের প্রোটিন সরবরাহের অন্যতম প্রধান উৎস মৎস্য ভান্ডারগুলো প্রায় মাছশূন্য। বিশেষত সামুদ্রিক মাছ। মাছের চাহিদা পূরণের অন্যতম যোগানদাতা বঙ্গোপসাগর। উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা, মৎস্য লুটেরাদের তৎপরতার কারণে প্রাকৃতিক এই মৎস্যভান্ডার অনেকটা মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মাছের প্রজনন মৌসুমে মা মাছ ও পোনা মাছ ধরা পড়ে। পোনা মাছ ফেলে দেয়া হয় সাগরে। এরা মারা যায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে অবাধে মৎস্য আহরণের সুযোগ নেই প্রায়। সে ক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিয়ম পালন করা হয়। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে নির্বিচারে মাছ শিকারের ফলে মৎস্যশূন্যতা বাড়ছে ক্রমাগত। সমুদ্রসীমা মামলায় রায় পাওয়ার পর বাংলাদেশের বর্তমান সামুদ্রিক এলাকা হচ্ছে ১ লাখ ১৮ হাজার ১১৩ বর্গকিলোমিটার। যা প্রায় আরেক বাংলাদেশের সমান। এই বিশাল এলাকা এখন এ দেশের মূলত অর্থনৈতিক অঞ্চল। বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন মাছ আহরণ করে আয় হয় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো। উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে বংশ পরম্পরায়। মাছের মজুদ বাড়াতে মৎস্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সাদা মাছের প্রজননকাল বিবেচনায় নিয়ে টানা ৬৫ দিন সাগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তা এই প্রথমবারের মতো। মাছের প্রজনন ও সর্বোচ্চ সংরক্ষণের স্বার্থে তাই ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মৎস্য ও চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ করাটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশ্বের সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোতে এমনকি ভারতেও প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ দুই থেকে তিন মাসের জন্য। বাংলাদেশ এই প্রথমবারের মতো দীর্ঘ সময়ের জন্য এমন পদক্ষেপ নিল। যদিও সাময়িকভাবে আমাদের কিছুটা সমস্যা হতে পারে তার পরও বৃহত্তর স্বার্থে সবার উচিত সরকারকে তথা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করা। সম্পদের উন্নয়নে সংশ্লিষ্টরা সহায়ক হবেন এটাই ব্যবসায়ী, জেলেসহ দেশবাসীর প্রত্যাশা।
বিষয়: বিবিধ
৭৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন