বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ। যেন একটি আরেকটির পরিপূরক

লিখেছেন লিখেছেন ফারাবি রহমান ১৫ আগস্ট, ২০১৫, ০৬:২২:০৪ সন্ধ্যা

বঙ্গবন্ধু একটি নাম একটি অসমাপ্ত ইতিহাস। বাংলাদেশের সাথে বঙ্গবন্ধু কিংবা বঙ্গবন্ধুর সাথে বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্দভাবে জড়িত। যেন একটি আরেকটির পরিপূরক। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার নামে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্র বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল সেই মানুষটিই পরবর্তীতে বাংলাদেশীদের প্রাণের পুরুষে পরিণত হয় এবং তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র পরিচয়ের কথা কল্পনাতীত হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৪৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর আমৃত্যু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশীদের মুক্তি ও অধিকার ফিরিয়ে আনতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত তিনি এ জাতির পক্ষে ত্রাতার ভূমিকায় ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর শিষ্য হিসেবে তিনি কখনো ক্ষমতার মোহে অন্ধ হননি বরং সর্বদা চেষ্টায় ছিলেন কিভাবে এদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র এবং এ জাতিকে স্বতন্ত্র জাতীয়তাবোধের স্বাদ দিতে পারেন। পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর অপসাশনের বিরোধীতা করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের উল্লেখযোগ্য অংশ কারগারে কেটেছে। ফাঁসির হুমকিতেও তিনি ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবোধ কিংবা এ জাতির অধিকার আদায়ের পক্ষে অবস্থান থেকে এক চুলও পিছপা হননি। পাকিস্তানে বর্বর শাসকগোষ্ঠী যখন সর্বত্র থেকে বাংলা নামক শব্দটি উচ্ছেদে ব্যস্ত তখন তিনি বুক চিতিয়ে বাংলাকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ় সংকল্প। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মরণসভায় উপস্থিত হয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এক সময় এ দেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে বাংলা কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকু চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে, একমাত্র বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোন কিছুর সঙ্গে বাংলা কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। আজ আমি ঘোষণা করছি এটা পূর্ব পাকিস্তান নয় শুধু বাংলাদেশ। আমেরিকার মত বিশ্বের সুপার পাওয়ার বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করলেও শুধু বঙ্গবন্ধুর সীমাহীন আত্মবল, মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা এবং তার প্রতি মানুষের বিশ্বাস বিশ্বমানচিত্রে নতুন করে ’৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর স্থান করে নেয় আরেকটি রাষ্ট্রের নাম। আর সেটা আমাদের লাল-সবুজ পতাকাখোচিত বাংলাদেশ। যে দেশের ইতিহাস পাঠ করতে গেলে বঙ্গবন্ধুর নাম অবশ্যই বারবার উচ্চারিত হবে। ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট কালোরাতের শেষ প্রহরে কয়েকজন বিপথগামী সেনা সদস্য ও অফিসারের হাতে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নিহত হন।কুলাঙ্গারেরা বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের মধ্য থেকে ২৬ জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাৎ বার্ষিকিতে দাঁড়িয়ে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ, বঙ্গবন্ধুর মত মহৎমনের মানুষটিকে রাজনীতির গন্ডিবন্দ করে তাকে সংকুচিত করা উচিত হবে না। ’৭১ সালের মার্কিন সাপ্তাহিকি ‘নিউজ উইকে’ লোরেন জেঙ্কিসের প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ২০০৪ সালের ১৪ এপ্রিল বিবিসি বাংলার জরিপে তাকে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। তবে আমরা বঙ্গবন্ধুকে আরও অনেক উচ্চতায় উচ্চতায় দেখতে চাই। এজন্য তাকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে। ভারতে যেমন করমদাস মোহনচাঁদ গান্ধীকে সকল দল-মতের কাছে গ্রহনযোগ্য করা হয়েছে তেমিন বঙ্গবন্ধুকেও অচিরেই সার্বজনীন করার ব্যবস্থা করা উচিত।

বিষয়: বিবিধ

৬৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File