পার্বত্য সন্ত্রাসীদের অলীক স্বপ্ন ‘জম্মুল্যান্ড’ নামে স্বাধীন একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তাদের এই দিবা স্বপ্ন চিরকাল স্বপ্নই থেকে যাবে, বাস্তবায়িত হবে না কখনও (পর্ব-৫/১২)
লিখেছেন লিখেছেন আবডুল রহমান ০৬ আগস্ট, ২০১৫, ০৭:৪০:২৯ সন্ধ্যা
শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি :
একটি অর্ধেক পানি ভর্তি গ্লাসকে অর্ধেক পূর্ণ বা অর্ধেক খালি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। শান্তি চুক্তির সর্বমোট ৭২টি ধারার মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ, ১৫টি ধারার বেশিরভাগ অংশ এবং অবশিষ্ট ৯টি ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তি করেছিলেন এবং অবশ্যই তিনি তা বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর। চুক্তি অনুযায়ী নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক ক্যাম্প ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে অথচ সন্ত্রাসীরা তাদের সব অস্ত্র এখনও পর্যন্ত সমর্পণ করেনি। কিন্তু পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত সাধারণ জনগণ দাবি করেছে যে, নিরাপত্তা বাহিনী এখান থেকে চলে গেলে তারা আরও বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আবর্তিত হবে। শান্তিচুক্তির সবচেয়ে জটিল যে বিষয়টি তা হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনা। এ বিষয়ে ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং সেই কমিশন কাজ করছে। ভূমি কমিশনের প্রধান ছাড়া বাকি সব সদস্যই পার্বত্য পাহাড়ি। বিষয়টির ব্যাপকতা এবং জটিলতার কারণেই একটু বেশি সময় লাগছে সমাধান করতে। তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ পর্যন্ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি উভয়পক্ষ খাগড়াছড়িতে ৩১০৫টি, রাঙ্গামাটিতে ৯৬৯টি এবং বান্দরবানে ৩৮৪টিসহ সর্বমোট ৪৪০৮টি ভূমি সংক্রান্ত মামলা করেছে। অগ্রগতি হিসেবে ইতোমধ্যে কমবেশি ৪০০০টি মামলার ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে, ৩৩টি মামলার শুনানি শেষ হয়েছে এবং বাকি মামলাগুলোর ব্যাপারে কার্যক্রম চলছে। জানা গেছে, এখানকার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ভূমি সমস্যা সমাধান কার্যক্রমে সর্বদা বাধা প্রদান করে থাকে, কারণ ভূমি সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে তাদের হাতে কোনো ইস্যু থাকবে নাÑযা তাদের স্বার্থ হাসিলের ট্রাম কার্ড। একইভাবে যে সকল বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ অবৈধভাবে প্রাপ্যের চেয়ে অনেক বেশি জমি দখল করে আছেন তারাও চান না ভূমি সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক। এছাড়া আরেকটি জটিলতা হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ব্যক্তিবর্গের ভূমির মালিকানার যথাযথ কাগজপত্র না থাকা। কারণ অতীতে তারা কোনো প্রকার কাগজপত্র ব্যতিরেকেই জমি ভোগদখল করত। এছাড়া শান্তিচুক্তির কিছু ধারা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। সেগুলোর সমাধানের বিষয়ে কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এখানে ভুলে গেলে চলবে না যে, পৃথিবীর অনেক দেশে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পরও তা নানা কারণে কার্যকর করা যায়নি বা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। উদাহরণ স্বরূপ সুদান (১৯৭২), সোমালিয়া (১৯৯০), অ্যাঙ্গোলা (১৯৯১ ও ১৯৯৪), রুয়ান্ডা (১৯৯৩), নর্দান আয়ারল্যান্ড ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তির অনিষ্পন্ন বিষয়াবলি সমাধানের জন্য ধৈর্য হারানো কারও জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে মনে হয় না।
(...............চলমান)
বিষয়: বিবিধ
৮৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন