বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির বাস্তবায়নে দুই দেশেই রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব নেই
লিখেছেন লিখেছেন আবডুল রহমান ১২ জুন, ২০১৫, ০৭:৪৭:৩৮ সন্ধ্যা
মোদির এবারের সফরেই তিস্তা নদীর পানির সমস্যা সম্পর্কিত বহু প্রত্যাশিত চুক্তিটি না হওয়ায় বাংলাদেশে অনেকের আশাভঙ্গের কারণ ঘটতে পারে। কিন্তু এই ব্যাপারেও হতাশ না হওয়ার একটা ব্যাপার হল, তিস্তা চুক্তির যিনি সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেছেন সেই মমতা ব্যানার্জি দুই দেশের শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির গাড়িতে চেপেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে যান। তারপরই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন তিস্তা ও ফেনী নদীর সমস্যার ন্যায্য সমাধান হবে। তার এই অঙ্গীকারে বাংলাদেশের মানুষ সম্ভবত আস্থা রাখতে পারে। বর্তমান বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির ক্ষেত্রে একটি আশার কথা হল, এই চুক্তি বাস্তবায়নে দুই দেশেই এখন রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব নেই। ভারতে বিজেপি সরকার এই চুক্তি সম্পাদনে এগিয়েছে এবং কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো তাতে জোর সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশেও রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনের ফলে বিএনপি ও সমমনা সাম্প্রদায়িক দলগুলো ভারত-বিরোধিতায় পাকিস্তানি লিগ্যাসি আর বহন করতে পারছে না। তাদেরও বলতে হচ্ছে, আমরা কখনও ভারতবিরোধিতা করিনি এবং ভবিষ্যতেও করব না। কিছুদিন আগেও বিএনপি নেত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরের সময় তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকারেও যাননি। এবার তদবির করে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বোঝাই যায় গরজ বড় বালাই। নিজেদের দলীয় স্বার্থেই ভারতের সঙ্গে বৈরিতার নীতি বিএনপি ত্যাগ করতে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার বাস্তব ও আশাব্যঞ্জক দিক। বর্তমান চুক্তি বাস্তবায়নে দেশটিতে কোনো বিরোধিতা নেই, বরং রাজনৈতিক সদিচ্ছা জাগ্রত হয়েছে। ফলে আশা করা যায় দুই দেশের সরকারেরই রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জনগণের অনুমোদন এবং সেই ইচ্ছা ও অনুমোদনের সঙ্গে প্রশাসন বা আমলাতন্ত্রের সহযোগিতা যুক্ত হয়ে এবারের সম্পাদিত বাংলাদেশ-ভারত চুক্তিগুলো দ্রুত কার্যকর হওয়ার ব্যবস্থা হবে। এরপর যদি তিস্তা ও অন্যান্য নদীর পানি বণ্টনসংক্রান্ত সমস্যাগুলো পারস্পরিক সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার দ্বারা দ্রুত মীমাংসার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ ও ভারতের ইতিহাসে অবশ্যই নবযুগের সূচনা হবে এবং এজন্য শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি দুজনই ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।এশিয়ায় ভারতও আধিপত্যবাদী নীতি দ্বারা নয়, সৌহার্দ্য ও মিত্রতার নীতি দ্বারাই প্রতিবেশী ছোট-বড় দেশগুলোর আস্থা ও বন্ধুত্ব অর্জন করতে পারে এবং একটি আঞ্চলিক সুপার পাওয়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।যদি তা হয়, তাহলে বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার আরও কিছু ছোট-বড় দেশ মিলে সার্কের চেয়ে শক্তিশালী ও কার্যকর একটি এশিয়ান কমনওয়েলথ গড়ে উঠতে পারে। এটা শেখ মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধীর স্বপ্ন ছিল। হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির আমলে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার রইল।
বিষয়: বিবিধ
৬৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন