বিয়েটা তাহলে হয়েই গেল......................
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পগন্ধা ১০ আগস্ট, ২০১৫, ০৪:১৫:২০ বিকাল
ছোট এই জীবনে অনেক গুলো বসন্ত পাড় করেছে, নানা অধ্যায়ে পদার্পন করতে করতে পাড় হতে হতে এই বিশেষ অধ্যায়টাও যে এরকম হুট করে চলে আসবে বুঝতে পারেনি জাকিয়া
অনেক দিন ধরেই গুণ গুণ চলছিল, এখানে ওখানে এই বুঝি বিয়ের কথা পাকাপাকি হয় হয় করেও হয়ে উঠছিল না। মাস খানিক ধরে একটা প্রস্তাব কানে আসছিল ওর, কিন্তু কেন যেন তাতে কান দিচ্ছিলনা সে। এই কান দেয়া, না দেয়ার দোলাচলে হঠাৎ মাঘের এক শনিবার পাত্রের সাথে দেখা করার দিন ধার্য করল দুই পরিবার। শনিবার বিকাল ৪.০০টায় একটা রেস্টুরেন্টে পাত্রের সাথে দেখা করবে জাকিয়া।
দুইটা পরিবারই এই চায় যে তাদের চাপিয়ে দেয়া ডিসিশনে তারা বাধ্য না হউক, তারা সেচ্ছায় রাজি হউক।
প্রচন্ড শীতের মাঝেও অস্থিরতার উস্মতায় কিছুটা অস্বস্তি বোধ করা শুরু করল জাকিয়া কারন পাত্র দুরের কেউ না, চাচাত ভাই জহির, অবশ্য আপন চাচাত ভাই না, ওর বাবার মামাত ভাইয়ের ছেলে। সে যাই হউক কোন আত্মিয়ের সাথে এরকম উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে হবে তা সপ্নেও ভাবেনি ও।
এভাবেই নানা হ্যা-না এর মাঝে হাজির হল সেই রেস্টুরেন্টে যেখানে তার ওর সাথে দেখা করার কথা। শীতের ঠান্ডা বাতাস ভেদ করে এগিয়ে চলছে জাকিয়ার গাড়ী। মনের ভিতর অনেক অস্থিরতা কাজ করছে, কি হয় না হয়, কিভাবে কি ধরণের কথা হবে।
সকল অস্থিরতা নিয়ে ও যখন সেখানে পৌছল তখন জহির ওখানে ছিল না।
জাকিয়া সাথে সাথে ফোন করছিল আর তখনই পিছন থেকে জোরে সালাম শুনল, ফোনটা রেখে দিয়ে হাসি মুখে সালামের জবাব দিল সে। আসলে জহির ওর আগেই এসেছিল কিন্তু জাকিয়াকে না পেয়ে ভাবল নীচে গিয়ে চা খেয়ে গলাটা ভিজিয়ে নেই ( সে নিজেও তো অস্থিরতায় ভুগছিল)।
যেইমাত্র চায়ের কাপে চুমুক দিল অমনি জাকিয়াকে রেস্টুরেন্টে ঢুকতে দেখে সে, আর সাথে সাথেই চা খাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দৌড় দিল কিন্তু জাকিয়ার আগে পৌছতে পারলনা.............
প্রথমে কে কাকে কীভাবে সম্মোধন করবে ভেবে পাচ্ছিল না, কারণ তারা কাজিন হলেও দুজনের দেখা হয় না তা প্রায় দশ - বারো বছর তো হবেই। দুজনে অনেক সদালাপী এবং মিশুক হউয়ার কারণে অল্প সময়েই পরিবেশটা স্বাভাবিক হয়ে গেল।
বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার পর জাকিয়া যখন উঠতে যাচ্ছিল তখন জহির বলে উঠল আর কিছুক্ষন থাকলে হয় না, ওর কথার ভঙ্গী দেখে জাকিয়া আবার বসে পড়ল। প্রায় দুই- আড়াই ঘন্টা কথা বলার পর দুজনে দুজনার কাছ থেকে বিদায় নিল।
জাকিয়া যখন বাড়ি ফিরল তখন সন্ধ্যা, সাথে সাথে প্রশ্ন কেমন দেখলে? কেমন লাগল? ও প্রথম যে উত্তর দিয়েছিল তা ওর আজও মনে আছে হয়ত সারা জীবনেও ভুলতে পারবে না। মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিল মনে হয় কথার কোচিং করে আসছে। এরকম উত্তর দেয়ার পিছনে যে কারণটি ছিল তা হল জহির কথা বলে অনেক গুছিয়ে, মিলিয়ে একটার পর একটা স্পস্ট উচ্চারণে, স্পস্ট আওয়াজে। পরে ধীরে সুস্থে সবই বলেছে।
আর ওদিকে জহির যখন বাড়ি ফিরল তার বোন দরজা খুলে হাসি দিল, বাবা ভাই সবাই একটা কিছু শুনার জন্যে অপেক্ষমান। ও জানাল, দেখ জাকিয়া কি বলে? যদি ও রাজি থাকে তাহলে দুই দিনের মধ্যে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক কর আর আগামী শুক্রবার বিয়ে। আর এখানে যদি এখন না হয় তাহলে আগামী ৩ বছরে আমি আর বিয়ে করব না। ছেলের এমন কথা শুনে বাবা মনে মনে খুশী হলেও একটু থমকে গেল, এত দ্রুত কিভাবে সব হবে ?
শুরু হয়ে গেল দৌড়াদৌড়ি, কাছের লোকজনের সাথে পরামর্শ। আত্মিয় স্বজনের হ্যা - না সবধরনেরই মতামত ছিল কিন্তু ছেলে রাজি থাকার কারণে বাবা হ্যা গ্রহন করলেও না গ্রহন করেনি। মাঝখানে রবি-সোম পাড় করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওরা গেল জাকিয়াদের বাড়িতে। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিয়ের দিন ঠিক করা হল শুক্রবার, তার মানে মাঝখানে মাত্র দুই দিন। সাথে এও ঠিক হল এখন দুপক্ষের আত্মিয় - স্বজন মিলে এক দেড়শত লোক হবে আর এক মাস পরে অনুষ্ঠান করা হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা, জহিরের ঘরে জাকিয়া।
বিয়েটা তাহলে হয়েই গেল......................
বিষয়: বিবিধ
১৭৩১ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রেস্টুরেন্টে গিয়েই জহিরকে ফোন দেয় জাকিয়া , যেখানে জহির আগেই পৌছে গিয়েছিল ।
কিন্তু জাকিয়ার মত পৌছামাত্রই ফোন দেয় নি । জাকিয়া কি গাড়িতে থাকা অবস্থায় জহিরের অবস্থান জানতে চেয়েছিল সে পৌছেছে কি না ?
শুরুতেই এই অবস্থা ! কি যে হবে জহিরের কপালে আল্লাহই ভাল জানেন ।
ভাই হতভাগা ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার মন্তব্য গুলি আসলেই অন্যরকম, এখন মনে হচ্ছে আরো বিস্তারিত লিখলে ভাল হত।
যাহক, বিয়ে ব্যপারটা যে আসলে কার লাইফে কখন কিভাবে ঘটে যায় বলা মুশকিল।আর অস্থিরতা/টেনশন থাকলে সব কিছু সব সময় হয়ত পুর্বপরিকল্পনা মাফিক হয় না।
দোয়া করি আল্লাহ তাদেরকে শান্তিতে রাখুক.......
এই ফুলগুলো ওদের জন্য...
আহ! কি মজা তাইনা? ওদের বিয়েটা হয়ে যাওয়ায় আমারও অনেক ভাল লাগছে। ফুল গলি ওদের পৌছে দেব....
সাথে এই ফুলটাও দিয়েন।
<:-P <:-P <:-P ) ) )
হুমম, ওদের জন্য দোয়া রইল...........................
আর আপনার জন্য জন্যও দোয়া রইল..
আপু ওরা নব বিবাহিত যুগল
ধন্যবাদ আপনাকে...
ভাই আপনি কি দাওয়াত পেয়েছিলেন নাকি?
হুমম, বিয়ের কথা শুনতেও ভালো লাগে.....
আর আপনার মত পুটির মায়ের অপেক্ষায় থাকলে তো আর কথাই নেই.....
হায় হায় তাহলে তো খবর আছে। সবার রোষানলে না পড়ে যায় .......
পড়লাম। ভালো লাগলো।
হুমম, বিয়েটা হয়েই গেল। ভাল লাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া....
শুভ কাজ শীঘ্র ভাল.....
হুমম, তবে এর চেয়ে শীঘ্র কিভাবে হয় আমি জানি না.....।
যাইহোক খুব খুব ভালো লাগলো, আসলেই এই সময় টা খুব খুব টেনশনের, আমি এখনো ওকে আপনি করে বলি, যদিও সে তুমি করে বলার অনুমতি দিয়েছে। হয়তো স্বাভাবিক হতে আরোও ৫/৭ দিন সময় লাগবে। ধন্যবাদ আপনাকে
নামে কি আসে যায়। বিয়ের অনুভুতি গুলি মনে হয় সবারই কাছাকাছি।
টেনশন করেন না, আপনি থেকে তুমি হতে সময় লাগবে না। তবে জাকিয়া - জহির প্রথম দেখার দিন থেকেই তুমি করে বলেছিল......। আপনার টেনশন খুব শীঘ্রই দুর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বিয়ের দিন তারিখ কবে ঠিক করা হল?
আরো অনেক দিন ওয়েট করতে হবে.....
এসব নিয়ে ভাবতে আসলে ভয়ই লাগে। যেমন আছি আল্লাহ ভালই রেখেছেন।
প্লিজ, কারো দিকে আর তাকিয়ে থাকা নয়, কেউ আসুক অথবা নাই আসুক, আপনি আসছেন, লিখছেন, ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করছেন, এটাই নিশ্চিত করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন