বিনোদন
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পগন্ধা ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৩:৩৮:১২ দুপুর
আজ সকাল সকাল অফিসে এসে সাজ্জাদের মনটা একটু খারাপই হয়ে আছে।
কেন যে সে পারে না? নিজের সাথে লড়াই করছে, কেন সে শয়তানের সাথে প্রায়ই পরাজিত হয়ে যায় বুঝতে পারছে না।
নাহ, এভাবে আর চলা যায় না, আমাকে পারতেই হবে কারণ একদিকে শয়তানের সাথে যুদ্ধ অন্যদিকে ফাহিমার বিদ্রুপাত্মক কথা।
ফাহিমার সাথে সকাল সকাল কথা কাটা কাটি করে এসে মনটা খারাপ করে সকাল থেকে এগুলি ই ভাবছে সাজ্জাদ।
এই প্রচন্ড শীতে প্রায়ই ঘুম থেকে উঠতে না পারার কারনে ফজরের নামায মিস করছে সাজ্জাদ, আর তা নিয়েই যত গ্যাঞ্জাম হচ্ছে ফাহিমার সাথে।
ডেকে ডেকে বিরক্ত হয়ে অবশেষে কিছু কথা না শুনিয়ে থাকতে পারেনা ফাহিমা।
বেচারি কি ই বা করবে? সে তো আমার ভালই চায়।
সাজ্জাদের এইসব ভাবনার মাঝে এক কাপ চা খেতে খেতে ঘড়ির কাটায় যখন সোয়া দশটা তখন বেশ পরিপাটি হয়ে ছিপছিপে গড়নের লম্বা একটা লোক মুখে হাসি নিয়ে সাজ্জাদের সামনে এসে সালাম দিল।
স্যার আপনার জন্য কিছু কুপন নিয়ে এলাম, এখানে তিন ধরনের কুপন আছে, আপনি যদি এটা নেন তাহলে সুন্দরবন গেলে আপনাকে এই এই ছাড় দেয়া হবে, যদি এটা নেন তাহলে কক্সবাজার- বান্দরবন গেলে এই এই ছাড় দেয়া হবে।
আর এটা হচ্ছে আপনি যদি দুরে কোথাও যেতে না চান, এই যেমন ফ্যান্টাসি বা নন্দনে যেতে চাইলে আপনাকে ওয়াটার কিংডমে বা অন্যান্য রাইডারে ফিফটি পারসেন্ট ছাড় দেয়া হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
সাজ্জাদ অনেক্ষন ভেবে মনে মনে বলল নাহ ইদানীং প্রায়ই ফাহিমার সাথে কথা কাটা কাটি হচ্ছে, দুরে তো এখন যাওয়ার সময় নেই শেষের কুপনটাই নিয়ে নেই, কোথাও একট ঘুরে এলে ওর ও ভালো লাগবে।
ভেবে চিনতে তিন নম্বর কুপনটাই (ফ্যান্টাসি বা নন্দন) কিনে নিল সাজ্জাদ।
"গেট রেডি টু বি সারপ্রাইজড ", ফাহিমাকে ম্যাসেজটা পাঠিয়ে দিয়েই কিছুটা হালকা মন নিয়ে কাজ শুরু করল সাজ্জাদ।
মাঝে মাঝে একা একাই হাসছে সে, ফাহিমা নিশ্চই অনেক খুশী হবে, ও বেড়াতে যেতে খুব পছন্দ করে, মাঝে মাঝে আমাকে বলেও কিন্তু আমি ই তো সময় পাইনা।
ফাহিমার হাসি হাসি মুখটার কথা চিন্তা করে সারাটাদিন ভালই কাটালো সাজ্জাদ।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সাজ্জাদ বাসায় ঢুকলো, বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছে ফাহিমা, কি সারপ্রাইজ নিয়ে এসেছে সে? কিন্তু কিছুই জিজ্ঞ্যেস করল না ফাহিমা, সারাদিনে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেলেও কিছুটা অভিমান রেখে দিয়েছে।
হাত মুখ ধুয়ে একটা কমলা হাতে নিয়ে খেতে খেতে সোফায় ফাহিমার পাশে বসল, ফাহিমার দিকে খানিকটা এগিয়ে দিয়ে বলল জানতে চাইলে না কি সারপ্রাইজ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে? কমলা হাতে নিয়ে, সারপ্রাইজ তো তুমি আমাকে দিবে তুমি ই বল, বলে সাজ্জাদের দিকে তাকাল ফাহিমা।
হুমম, ভেবে দেখলাম অনেকদিন আমাদের কোথাও যাওয়া হয়না, লাইফে কিছুটা বিনোদনের ও তো দরকার আছে তাইনা ? কুপন দুইটা দেখ...
পানিতে বেশ সুন্দর সুন্দর কিছু হৈ- হোল্লরের ছবি আর দুইটা কুপন, বিষয়টা পড়ে এবং শুনে ফাহিমা কিছক্ষন চুপ করে রইল।
তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে দুই বছর হল, এর মধ্যে তেমন কোন বড় ধরনের ঝগড়া আমাদের মাঝে হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে একটু কথা কাটা কাটি হচ্ছে তাও সকালে উঠা নিয়ে।
জানো, আমার খুব খারাপ লাগে তোমাকে এভাবে বলতে কিন্তু যখন দেখি এতো ডাকাডাকির পর ও তুমি সকালে নামায কাজা কর তখন আমার আসলে মাথা ঠিক থাকে না।
আর এখন যখন এই কুপন দুইটা আমাকে দিলে, বুঝতে পাড়ছিনা তুমি আমার এখনকার কথা গুলি কিভাবে নিবে?
তবে আশা করছি আমাকে বুঝার চেস্টা করবে।
ফাহিমা আমি বুঝতে পাড়ছিনা এখন এই বিষইটা নিয়ে সিরিয়াসলি কথা বলার মত কি আছে ?
যাহক সমস্যা নেই বল কি বলতে চাচ্ছ।
দেখো আমি ঘুড়তে অনেক পছন্দ করি কিন্তু ওখানে ওয়াটার কিংডমে গিয়ে এই শত শত মানুষের সামনে ভেজা-ভেজি, চুবা-চুবি, দাপা-দাপি, লাফা-লাফি, হৈ-হোল্লর, নাচা-নাচি, চিল্লা-চিল্লি ভেজা কাপরে এরকম বেহায়াপনার নাম যদি বিনোদন হয় তাহলে এই বিনোদনে আমার আপত্তি আছে।
ওরকম বিনোদন আমার দরকার নেই।
আর তাছাড়া তুমি একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখতো তোমার স্ত্রী এতো এতো লোকের সামনে এভাবে ভিজবে তা কি তুমি চাও? নাকি তোমার চাওয়া উচিত ?
সাজ্জাদ এবার কিছুটা লজ্জাই পেল, এভাবেতো কখনো ভাবিনি, আসলেই তো অনেক নির্লজ্জ একটা ব্যাপার!!!
কিছুক্ষন দুজনে নীরব, বিষয়টা আর গভীর ভাবে অনুধাবন করে কুপন দুইটা ছিরে ফেলে সাজ্জাদ, ঠোটের কোনায় হাসি নিয়ে ওকে ম্যাম, প্রোগ্রাম বাতিল বলে গণ্য হলো।
আচ্ছা ম্যাম আপনি টেবিলে খাবার দেন আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি।
এখন আবার কোথায় যাচ্ছ ? এই একটু আসছি।
সাজ্জাদের পথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে, মনের ভিতর অদ্ভুত একটা আনন্দ নিয়ে টেবিলে খাবার দিতে গেল ফাহিমা।
দশ মিনিটের কথা বলে প্রায় আধঘন্টা পর সাজ্জাদ বাসায় ফিরল, হাতে বাহারী রকমের অনেক গুলি ফুল, ব্যাগে গরম গরম শীতের পিঠা আর দুজনের পছন্দের কিছু মিস্টি।
ফাহিমার চোখে মুখে খুশীর উজ্জ্বল রেখা, আনন্দ আর লজ্জায় ওর কপালের মাঝের শিরাটা ভেসে উঠেছে, ফুল গুলি ফাহিমার হাতে দিয়ে সাজ্জাদ জড়িয়ে ধরল ওকে আর ফাহিমা পরম আদরে মাথাটা রেখে দিলো সাজ্জাদের কাঁধে......................................................
বিষয়: সাহিত্য
১৬৯১ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কপাল খারপ বুঝি একেই বলে
গল্প ভাল হয়েছে ধন্যবাদ আপু ।
ইস্ এমন ভাগ্য কয়জনের হয়?
হাফ অব লাইফ নামাজের জন্য রাগ করবে!
সত্যি ছোট্র ছোট্র শেয়ারিং আর কেয়ারগুলো আমাদের অনেক পাওয়া-না পাওয়ার লাইফকে অনেক সুন্দর করে তুলতে পারে।
কোটি টাকার মধ্যেও সুখ নাই। আবার কুঁড়ে ঘরেও সুখ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।
অনেক ভাল লাগল।
ঘুরে আসুন। এসে ছবিসহ পোস্ট দিতে ভুলবেন না যেন।।
আরে তাইতো তাইতো
কখনো ভাবিনিতো।
অচিরেই যাব সেথা
আপনি বলেছেন যেথা।
গাজী ভাই আপনি কতটুকু বাইম মাছ হতে পেরেছেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন