পদার্পণ.................(শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পগন্ধা ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:০৭:৪৬ দুপুর
আপনি যদি সত্য ই আমাকে পছন্দ করে থাকে তাহলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান, আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্যে যা কল্যানকর দুয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেনো তাই করেন।
মারিয়ার এমন উত্তর হাসিবকে থমকে দিল কারণ আর যাই হউক অন্যসব আট দশটা ছেলের মত সেও ভেবেছিল কিছুদিন চাকরি বাকরি করার পর বিয়ে করবে।
সেদিনের মত আর তেমন কোন কথা হল না দুজনের ।
সুন্দর ফুল গুলি টেবিলের উপর পরে রইল শুধু, দুজন যে যার পথে চলে গেলো।
মারিয়ার আজ খানিকটা হালকা মনে হচ্ছে, কথা গুলি সে এভাবে কাউকে বলতে পারবে কখন সপ্নেও ভাবেনি, আজ আরেক বার তার নিজেকে অনেক বড় মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে গত কয়েক মাসে সে অনেক মাচিউর্ড হয়ে গিয়েছে।
হাসিব বাসায় ফিরে কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা চলে গেল নজের রুমে, ধপাশ করে শরীরটা রেখে দিল বিছানার উপর, চোখ বন্ধ করে খুব জোরে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ল।
হাসিবের দুচোখের কোনা ভিজে উঠেছে, অবাক হয়ে ভাবছে মারিয়াকি আমাকে হ্যা বলল নাকি না বলল? আমার এখন আসলে কি করা উচিত? এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেনো একটু ঘুমিয়ে গেলো।
যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখে মা দরজ়ায় দাড়িয়ে নক করছে, কিরে কখন ফিরলি? কি ব্যাপার এই অসময়ে ঘুমাচ্ছিস কেনো?
শরীর ঠিক আছে তো? মা তখনও বুঝেনি ছেলের মনের ভিতর কত ঢেউ আছড়ে পরছে একের পর এক।
একটু ভারী শান্ত গলায় না মা কিছু হয়নি ভাল আছি, এই এমনি একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আরকি।
টেবিলে আয় তোকে চা করে দিচ্ছি বলে মা চলে গেলো।
হাসিব আরো কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে থেকে টেবিলে গিয়ে চা খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো, কিরে আবার কই যাচ্ছিস? এই একটু ঘুরে আসি।
হাসিবের এখন ঘরে বাইরে কোন কিছুই ভালো লাগছে না, এমন সময় পাশ দিয়ে এক কাপল যাচ্ছে দেখে ওর মনে ভিতর যেন আরো হু হু করে উঠল।
আর ভাল লাগছে না সঙ্গে সঙ্গে বাসায় চলে এলো, এবার মা বুঝল ছেলের কিছু একটা হয়েছে, কিছু জিজ্ঞ্বেস করল না, ছেলেকে একটু সময় দিলো।
শেষ রাতে হাসিবের ঘুম ভেঙ্গে গেলো, কস্ট ওকে চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে, ভাবছে আর যাই হউক মারিয়াকে ছাড়া থাকা সম্ভব না, আমি ওকে হাড়াতে পারব না।
উঠে ফজরের নামাজ পরে রুম থেকে বেড় হয়ে দেখল মা মাত্র নামাজ শেষ করে উঠল, মা তোমার সাথে একটু কথা আছে।
মা জায়নামাজ ভাজ করতে করতে বলল হ্যা বল।
মা ছেলের সংসারে এবার খানিকটা নীরবতা, মা, আগামী সপ্তাহেতো আমি চলে যাচ্ছি তোমার কি মনে হয় আমার একা যাওয়া উচিত? মা ছেলের মনের ভাব বুঝতে পারল যে সে কি বলতে চাচ্ছে কারণ উনি আগেই ছেলেকে বলে দিয়েছিলেন আমৃত্যু এই বাড়িতেই থাকতে চান যেখানে তার স্বামী ছিলেন।
তুই কি কাউকে পছন্দ করিস নাকি আমি মেয়ে দেখব? মায়ের এমন সোজা সাপ্টা কথায় হাসিব মাকে আরেকবার নতুন করে চিনল ভাবল মা মা'ই অনেক কিছু বলার দরকার হয় না তার আগেই কেমন করে যেন বুঝে যায় ….........
মায়ের এমন কথায় হাসিবের কস্ট মনে হল অর্ধেক কমে গেলো, মা, ওর নাম মারিয়া, তারপর মাকে সব কিছু খুলে বলল।
ছেলের বর্ণনা শুনে মারিয়াকে না দেখেই পছন্দ হয়ে গেল, বললেন তুমি তোমার সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ সারাদিন আরেকবার ভাবো সন্ধায় তোমার সাথে কথা হবে।
স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেকে একা বড় করায় যে কোন পরিস্থিতিতেই শান্ত আয়েশা বেগম তাই মারিয়াকে পছন্দ হলেও ছেলেকে ভাবার আরেক টু সময় দিলেন তিনি, তবে মনে মনে তিনিও ছেলের জন্যে এমন ই একটা মেয়ে খুজচ্ছিলেন।
সন্ধ্যায় হাসিব মাকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন, মা বললেন তুমি মারিয়াকে জানাও আমারা আজ রাতেই ওদের বাসায় আসতে চাই কোন সমস্যা আছে কিনা।
হাসিবের কাছে মনে হল বিনা মেঘেই বজ্রপাত সহ ঝড় বৃস্টি হয়ে গেলো।
যাহক আকাশটা একটু পরিস্কার হতেই মারিয়াকে ফোন দিল, সব কিছু শুনে মারিয়া পরে গেল আরেক মুছীবতে কিভাবে কি বলবে, এরকম হুট করে কিছু বললে মা ই বা কিভাবে নিবে।
এক গ্লাস পানি খেয়ে খুব জোড়ে কয়েকবার নিশ্বাস ফেলে আস্তে আস্তে মায়ের কাছে গিয়ে দেখে মা তার রুমটা গুছাচ্ছেন।
মা আসব, হুম এসো।
মা তুমি কি বেস্ত ? জরুরী কিছু কথা বলার ছিল।
এতো আমতা আমতা করার কি আছে, বলে ফেল কি বলতে চাচ্ছ।
ইদানীং মারিয়ার যেন কি হয়েছে, ও ওর মায়ের সাথে এত ফরমাল ওয়েতে কথা বলে না, কিন্তু এখন বলে।
যাহক মা চেনজ়টা বুঝতে পেরে পাশে বসিয়ে বললেন বল কি বলতে চাও।
মা আমাদের ইউনিভার্সিটিতে আমার এক ইয়ার এর সিনিঅর একটা ছেলে আছে।
মাঃ একটা ছেলে আছে?
মারিয়াঃ না মানি আমরা একই টিচারের আন্ডারে রেপোর্ট করছি, আগে চিনতাম না কিছু দিন আগে পরিচয় হল, তারপর আস্তে আস্তে একটু কাঁপা কাঁপা গলায় সব বলে গেল।
মা সব শুনে বলল কিন্তু আমাদেরতো কোন প্রিপারেশন নেই, দাড়াও তোমার বাবার সাথে কথা বলে দেখি।
বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর মা বলল ঠিক আছে ওদেরকে রাত দশটার দিকে আসতে বল।
মারিয়ার ফোন পেয়ে কিছুটা ভয় পেল হাসিব কি জানাবে মারিয়া?
কথা শেষে মাকে রাত দশটায় যাওয়ার কথা জানাল।
আয়েশা বেগম দ্রুত হাসিবের চাচা এবং মামা কে ফোন দিয়ে আসতে বলে ছেলেকে বললেন ভাল মত রেডি হয়ে নিতে।
রাত সারে নয়টায় বাসা থেকে বের হয়ে দোকান থেকে অনেক গুলি মিস্টি আর বেশ সুন্দর একটা আংটি কিনে গাড়িতে উঠল।
হাসিব ভাবছে মার মনে কি আছে এতো বেশী কিনল কেন? যাহক কিছু না বলে ভদ্র ছেলের মত চুপচাপ বসে রইল।
দশটার ৫মিনিট বাকি থাকতেই পৌছে গেল মারিয়াদের বাসায়।
এত অল্প সময়ের নোটীশে মারিয়ারা পুরোপুরি রেডি হতে পারেনি, ফারিয়াও এসছে তার মায়ের সাথে সব কাজ করে যাচ্ছে, মেহমান্দের সাথে মারিয়ার বাবাকে বসিয়ে কিছু নাশ্তা খেতে দিয়ে সারে দশটার মধ্যে সব রেডি করে ফেলল মা মায়ে, এই ফাকে মারিয়াও রেডি হয়ে নিল।
হাসিবের মা সোজা মারিয়ার রুমে ঢুকে তার সাথে কথা বলছে, মারিয়াকে ওনার খুবই পছন্দ হয়েছে, কিছুক্ষন পর হাসিবের মা জানালেন কারো যদি প্রব্লেম না থাকে তবে ওনি আজকেই বিয়ের কাজ সমাধা করতে চাচ্ছেন, সবাই রাজি না হলেও সব কিছু ভেবে জানালো যে তারা রাজি।
যেই ভাবনা সে কাজ রাত বারটা সময় কাজী এসে হাজির, তেমন কোন পুর্বপ্রস্তুতি ছাড়া যখন বিয়ে হয়ে গেল গাড়িতে নিজের পাশে মারিয়াকে পেয়ে কোন ভাবেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলনা হাসিব।
রাত দুইটা সময় সাজ-সজ্জাহীন ঘরে হাসিব আর মারিয়া জীবনের নতুন এক অধ্যায়ে পদার্পন করল যেখানে তাদেরকে একসাথে পাড়ি দিতে হবে জীবনের আরো অনেকটা পথ...............
বিষয়: বিবিধ
১৪৫২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি বরাবরই গল্পের ভক্ত।
দয়া করে বানানের দিকে কি একটু নজর দেয়া যায়?
Please...
ধন্যবাদ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্যে। আসলে গল্পটা একটু দ্রুত শেষ করতে কিছু কিছু জায়গায় অগুছালো ভাব চলে এসেছে
মন্তব্য করতে লগইন করুন