পদার্পণ.................(পর্ব ৩)
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পগন্ধা ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৫:২৭:৪৩ বিকাল
মারিয়া কিন্তু বঝতেই পারল না যে এই পাঁচ মিনিতের কথোপকথন মারিয়ার জীবনে কি পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, কোন নতুন এক অধ্যায়ে পদার্পন রাখতে যাচ্ছে মারিয়া ….........
বাসায় ফিরে নিজের মত ব্যস্ত হয়ে গেল মারিয়া।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু রেস্ট নেয়ার জন্য যেই বিছানায় গেল অমনি মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল, বুঝতে পারল না কার ফোন নম্বর টা সেভ করা হইনি তখনও।
আসসালামু আলাইকুম
ওয়ালাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ, মারিয়া বলছ ?
জী, কে বলছেন প্লিজ?
মারিয়া আমি হাসিব, কেমন আছ?
আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।
বাসায় পৌছে গেছ?
মারিয়া বুঝতে পারছিল না কি বলবে, কেমন যেন মনে হচ্ছে, তাই শুধু বলল হ্যা ভাল আছি।
ও প্রান্ত থেকে এবার আর কোন কথা ভেসে আসছে না, মারিয়া ও কিছু বলছেনা, ঠিক আছে মারিয়া এমনিতেই ফোন দিলাম, ভাল থেকো, আল্লাহ হাফেজ।
আল্লাহ হাফেজ।
মারিয়ার আপন রাজ্যে আগে এভাবে কোন হামলা হতে না দিলেও এবার কেমন যেন একটা হাওয়া ধাক্কা দিয়ে গেল।
অনেক দিনের মজবুত গাথুনি ছিল বলেই হয়তবা মারিয়াকে ধাক্কাটা তেমন ভাবে নাড়া দিতে পারল না।
কিন্তু হাসিব তো হামলার শিকার হওয়ার জন্যে নিজে থেকেই অপেক্ষায় ছিল তাই একবার চোখ যেখানে আটকে গেল সেখান থেকে আর নড়তে পারল না। আর তাই তো শিহরিত মন আর কম্পিত পদ যুগল মারিয়ার রাজ্যের দিকে আপন রাজ্যসহ এগিয়ে চলল।
বারবার হাতে ফোন নিয়েও ফোন দিতে পারছিল না, কি বলবে ?কিভাবে বলবে ? মারিয়া কিভাবে রিএক্ট করবে ? এভাবে প্রশ্ন বানে নিজেকে নিজেই জর্জরির করে ভেবে চিনতে ক্লান্ত হয়ে অস্থির হয়ে সেই দিনটা পার করল ।
পরদিন সকাল থেকে মনে হচ্ছিল ফোন দিবে কিন্তু এত সকালে কি ফোন দেয়া ঠিক হবে ? নিজের মনের দখলদারিত্ত্ব যখন অন্য কাউকে দিয়ে দেয়া হয় তখন বুঝি এরকমই হয়, মন আর মেজাজের ভারসাম্যহীনতা নিয়ে ক্রমেই ধর্য্য হারা হয়ে, নিজেকে নানাভাবে বুঝানোর চেস্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেসে বিকাল বেলা ফোনটা দিয়েই ফেলল।
মারিয়া নম্বরটা সেভ করে নিয়েছিল, ফোন দেখে নির্লিপ্ত, খুশি হবে না বিরক্ত হবে?
আসসালামু আলাইকুম
ওয়ালাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ, কেমন আছ?
আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।
তোমার রিপর্ট এর কাজ কেমন চলছে? কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো?
হ্যা ভাল চলছে, একটু প্রবলেম আছে স্যারের সাথে ডিসকাস করলে ঠিক হয়ে যাবে।
এই সুযোগটাই মনে মনে খুজছিল, মনে মনে মারিয়াকে অসংখবার ধন্যবাদ জানিয়ে বলল কি সমস্যা আমাকে বল আমি সল্ভ করে দিচ্ছি।
না না ঠিক আছে আমি করে নিব
আরে এত কস্ট করার কি আছে, আমাকে বল
এভাবে প্রবলেম আর সলিউশন নিয়ে কথা বলা শেষ করে মারিয়া দেখল যে তারা বিশ মিনিট কথা বলে ফেলেছে, নিজেই খেয়াল করল যেরকম নির্লিপ্ত সে কিছুক্ষন আগেও ছিল তা আর নেই, বরং কেমন যেন একটু হালকা লাগছে.
এভাবে কিছু দিন কথা বলার পর একদিন সন্ধ্যায় হাসিব ফোন দিয়ে জানাল যে তার বেশ ভাল একটা চকুরি হয়েছে কিন্তু পোস্টিং ঢাকার বাইরে, আর এক সপ্তাহ পর তাকে জয়েন করতে হবে আর তাই সে মারিয়াকে আগামীকাল দুপরে খাওয়াতে চায়।
হঠাত একটা ভাল খবর শুনে খুশীর দোলাচলে মারিয়া হ্যা করে দিলো।
ফোন রাখার পর মারিয়া চিন্তা করছে কাজটা কি সে ঠিক করল? তার সাথে তার এমন কি সম্পর্ক যে খেতে যেতে হবে? মারিয়া তখনও বুঝেনি যে তার এত দিনে গড়া রাজত্ব এখন হাওয়ার দোলায় দুলছে, তার রাজ্যের সাথে এখন নতুন আরেকটি রাজ্যের বিস্তার লাভ করেছে।
নানাবিধ বিষয় ভেবে চিনতে পরদিন মারিয়া হাজির হলো সেই স্থানে যেখানে তাদের খেতে যাওয়ার কথা, মারিয়া দেখে মুগ্ধ হেয়ে গেল ছিমছাম একটা রেস্টুরেন্ট, হালকা এয়ারফ্রেশ্নার এর ঘ্রাণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর একটা টেবিল, কিছু বিভিন্ন কালারের ফুল, তার সামনে পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চি লম্বা শ্যাম বর্ণের ছেলেটি মেরুণ রঙের টি শার্ট আর বাদামী রঙের প্যান্ট পরে ঠোটের কোনায় হালকা হাসি নিয়ে বসে আছে।
মারিয়াকে আসতে দেখে উঠে গিয়ে চেয়ার টা টেনে ঠিক করে দিল, মারিয়াকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছিল কিন্তু বলতে গিয়েও হাসিব থেমে গিয়ে বলল কেমন আছো? সেই প্রশ্ন যা মারিয়া পরিচয়ের শুরু থেকে শুনে আসছিল আজ সামনা সামনি সেই প্রশ্ন শুনে মারিয়া কিছুটা লজ্জাই পেল, বলল আলহামদুলিল্লাহ, আপনি? আলহামদুলিল্লাহ ভাল।
কিছুক্ষন দুজনে চুপচাপ বসে থেকে হাসিব বলল কি খাবে?
দাওয়াত আপনি দিয়েছেন আপ্প্যায়ন তো আপনাকেই করতে হবে
ওকে, হাসিবের পছন্দের সাথে মারিয়ার পছন্দ মিলিয়ে বেশ কিছু খাবারের অর্ডার দিয়ে হাসিব সোজা সাপটা ভাবে বলল তুমি কি জানো তোমাকে কেন ডেকে আনা হয়েছে?
জানিনা বললে মিথ্যা বলা হবে তাই মারিয়া চুপ করে রইল
হাসিবঃ তুমিকি কিছু বঝতে পেরেছ?
মারিয়াঃ কি বুঝব?
হাসিবঃ আমি তোমাকে কেন ডেকে এনেছি?
মারিয়াঃ আপনি ই বলেন
হাসিবঃ তুমি কি জান তোমাকে আমার ভাল লাগে?
মারিয়াঃ জানি
হাসিবঃ তোমার ও কি আমাকে ভাল লাগে?
মারিয়াঃ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল আপনার বলা শেষ করেন তারপর আমি বলব
হাসিবঃ আচ্ছা, বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে, আমি অনেক দিন ধরে যেরকম একটা মেয়ে মনে মনে খুজছিলাম তুমি ঠিক সেইরকম একটা মেয়ে, আমার ভাল লাগার সব টুকু তোমার মধ্যে ছড়িয়ে আছে, আমি নিজেও জানি না আমার হৃদয়ের কতটা তুমি দখল করেছো, সম্ভবত পুরোটাই, আমার মনে হয় তুমি এমন একজন যার সাথে পুরোটা জীবন একসাথে কাটিয়ে দেয়া যাবে ইনশাআল্লাহ, আমি আগামি সপ্তাহে চলে যাব তা না হলে কথা গুলি আজকে তোমাকে না বলে হয়তো তোমাকে আরেকটু সময় দিয়ে প্রিপারেশন নিয়ে বলতাম।
এক নিশ্বাসে সব গুলি কথা বলে শেষ করে হাসিব মনে হল একটু হাফ ছেড়ে বাচল, মনে হল অনেক দিনের জমানো কথা একবারে বলে দিয়ে হালকা হল, পাশাপাশি বুকের ভিতর ধুক ধুক করতে লাগলো, কি বলবে মারিয়া?
প্রায় দশ মিনিট কোন কথা নেই........
মারিয়াঃ আপানার মনের ভিতর যে পরিবর্তন এসেছে আমার আসেনি বললে মিথ্যা বলা হবে, কিন্তু জীবনের এতটা সময় নিজেকে এতটা নিয়ন্ত্রনে রেখে আজ এভাবে প্রেম করে তা নস্ট করার কোন ইচ্ছা আমার নেই, জীবনে চলার পথে কাউকে ভাল লাগতেই পারে, এটা একেবারেই স্বাভাবিক, কিন্তু আমি যদি আমার ছায়া, মায়া, কায়া, আত্মাসম্মানবোধ, মুল্যবোধ, ধর্ম কর্ম সব কিছু প্রেম করে ধংস করে দেই তাহলে যে ধংস স্তুপ জমা হবে সেখানে আমার ধংসাবশেষ ছাড়া আর কিছু খুজে পাওয়া যাবে না।
আপনি যদি সত্যি ই আমাকে পছন্দ করে থাকেন তাহলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান, আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্যে যা কল্যানকর দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেনো তাই করেন।
…...........চলবে
বিষয়: সাহিত্য
১৩৭৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এরখমটিই আশা কোরেছিলাম আপু। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব ইজ দি বেস্ট
কিন্তু আপনার নায়িকা তো কোনই সাড়া দিচ্ছে না!!!!
.....মেয়েটির মনের কথা এমন?? অবিশ্বাস্য লাগছে! যদি তাই হয়,বলতে হবে-মেয়েরাও ভাল হয়!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন