বই রিভিউঃ যদ্যপি আমার গুরু
লিখেছেন লিখেছেন অবাক মুসাফীর ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৭:০৪:১৭ সন্ধ্যা
বইঃ যদ্যপি আমার গুরু
লেখকঃ আহমদ ছফা
প্রকাশনীঃ মাওলা ব্রাদার্স
প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১০
মূল্যঃ আশি টাকা (তৃতীয় মুদ্রণ)
.
.
ছোটখাটো গড়নের একজন মানুষ, চোখে চশমা, ভেতরের চোখদুটি আশ্চর্য রকম তীক্ষ্ণ। মুখে একগোছা দাড়ি, একখানা ছেড়া পাঞ্জাবী আর পুরোনো লুঙ্গিতে যাকে চিনেছিলো পুরো বিশ্ব। জন্মেছিলেন এক বিশেষ সময়ের সাক্ষী হতে, ১৯১৪ থেকে ১৯৯৯ এর জীবনটায় তিনি মিশেছেন কালোত্তীর্ণ সব ক্ষণজন্মাদের সাথে, সাক্ষী হয়েছেন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সব আন্দোলনের। শিশু বাংলাদেশকে নিজ হাতে গড়বার জন্য পেয়েছিলেন এক মহান দায়িত্ব, জাতীয় অধ্যাপকের পদ। বলছিলাম জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাকের কথা।
.
.
'যদ্যপি আমার গুরু' বইটিতে আহমদ ছফা লিখে গিয়েছেন সেই ক্ষণজন্মা মানুষটির কথা। তাঁর জ্ঞান-গরিমায় বার বার অভিভূত হয়েছেন লেখক, যুক্তি-তর্কে নত হয়েছেন, আতিথেয়তায় ঋনী হয়ে থেকেছেন আজীবন। প্রসঙ্গক্রমে রচনায় উঠে এসেছেন আরো অনেক নামদার মানুষেরাঃ জসীমউদ্দীন, মাওলানা ভাসানী, কাজী মোতাহের হোসেন, জয়নুল আবেদীন, এস.এম.সুলতান প্রমুখ।
.
.
রবীন্দ্রনাথকে বড় লেখক হিসেবে রায় দেন আবদুর রাজ্জাক, কিন্তু তাকে বড় মানুষ বলতে রাজি নন। বঙ্কিমচন্দ্র সারা জীবন মুসলমানের টাকায় লেখাপড়া করে মুসলমানের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন বলে তাকে 'ছোট মনের মানুষ' বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে ইশ্বরচন্দ্র একজন 'বড় মানুষ' আর 'বড় শিল্পী' হলেন জয়নুল আবেদীন। সেকারণেই নবীন এস.এম.সুলতানকে প্রথমে তুচ্ছ-জ্ঞান করেন আবদুর রাজ্জাক, পরে অবশ্য এস.এম.সুলতানের কিংবদন্তী হবার পেছনে তাঁর অবদান কিছু কম নয়।
.
.
এই মানুষটির সাথে আমি আর একজনের খুব মিল খুঁজে পাই। তিনি হলেন আল্লামা ইকবাল। বিস্তর রকমের মানুষ দেখা করতে আসতেন আল্লামা ইকবালের সাথে। কেউ হয় তো কুস্তিগীর, কেউ বা ব্যাবসায়ী, কেউ বা রাজনীতিবিদ। তিনি সমানে গল্প করে যেতেন কুস্তিগীরের সাথে কুস্তির কৌশল নিয়ে, ব্যাবসায়ীর সাথে বাণিজ্য নিয়া আর রাজনীতিবিদের সাথে দেশের হাল নিয়ে। আবদুর রাজ্জাকও তেমনি। তাঁর মুখে কোনো বাঁধ নেই, বিষয়ের কোনো বাছবিচার নেই। সমানে বলে চলেছেন কখনো রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র-ব্যাবস্থা নিয়ে, কখনো বা এশিয়ার খাবার-দাবার নিয়ে। আবার হয়তো তার পরোক্ষনেই দাবার গুটি চাল নিয়ে বলবেন, কিংবা মোঁপাসা, টলস্টয়, হুগোদের নিয়ে মেতে উঠবেন। বিচিত্র মানুষ ছিলেন বটে!
.
.
'প্রফেসর রাজ্জাক বাঙালি মুসলমানের দৃষ্টি দিয়ে পৃথিবীকে দেখেছেন এবং বিচার করেছেন। আবার পৃথিবী-দেখা চোখ দিয়ে বাঙালী সমাজকে বিচার বিশ্লেষন করেছেন।' এভাবেই বলেছেন আহমদ ছফা। প্রফেসর সাহেব সারা জীবনে একটিও বই লেখেন নি। তবু শুধুমাত্র সহচার্য-সংস্পর্শের মাধ্যমে গড়ে গিয়েছেন অজুত প্রাণ, যারা পরবর্তিকালের বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন।
.
.
বইটি জীবনীগ্রন্থ নয়। আহমদ ছফা বাংলা একাডেমীর ফেলোশীপ পাবার পর পি.এইচ.ডি-র জন্য পরামর্শক হবার অনুরোধ করেছিলেন আবদুর রাজ্জাক সাহেবকে। সেই থেকে পরিচয়, আমৃত্যু আবদুর রাজ্জাকের অকৃত্রিম বন্ধু-কাম-ছাত্র ছিলেন আহমদ ছফা। সেই সূত্রে খুব কাছ থেকে তাঁকে দেখবার সুযোগ পেয়েছিলেন লেখক। এই বইটি তার-ই ফল। প্রকাশ পেয়েছিলো আবদুর রাজ্জাকের জীবদ্দশাতেই।
.
.
উনাকে বইপোঁকা বলাটা সমীচিন হবে না, বলতে হবে 'বইখাদক'। বই পড়া সম্পর্কে তার একটি মতামত আমাকে নাড়া দিয়েছে, সেটি দিয়েই শেষ করছি-
.
~ "কোনো বই পড়ার পর তুমি যদি মোটামুটি বিস্তারিতভাবে তার মূলকথাটুকু নিজের ভাষায় না লিখতে পারো, তাহলে ধরে নাও, বইটি তোমার পড়া হয় নি। তোমার ঝুলিতে জোরদার শব্দ না থাকতে পারে, ভাষার ভিত নড়বড়ে হতে পারে, কিন্তু ও' কাজ না পারলে বইটি আবার পড়, যদি সত্যিই কিছু শিখতে চাও।"
বিষয়: বিবিধ
২১১৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শেষের কথাগুলো খুবই যথার্থ!!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
আমার লিস্টে বইটি আছে। পড়বো ইনশাআল্লাহ।
রিভিউ পড়বো এখন।
অনেক ধন্যবাদ মুসাফির।
বুক রিভিউ লিখলে আমাকে লিংক দেয়ার অনুরোধ রইলো।
জাযাকাল্লাহ।
জাউয়াযাকাল্লাহ।
পড়ার লোভ হচ্ছে, সুন্দর বিবরণের জন্য আন্তরিক শুকরিয়া!
জাযাকাল্লাহ খাইর।
http://www.amarboi.com/2014/01/jaddaypi-amar-guru-ahmed-sofa.html?m=1
মন্তব্য করতে লগইন করুন