পতিতালয়গুলো দিন দিন বেশ সস্তা হচ্ছে, তোমরা বরং ওখানে যেও...!
লিখেছেন লিখেছেন অবাক মুসাফীর ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৭:৪৪:২৫ সন্ধ্যা
আমি সাধারনত ঠ্যাকায় না পড়লে কারো বাসায় যাই না। হোক সে কোনো বন্ধু বা আত্মীয়, অন্য কারো বাসা জিনিসটা বরাবরই ভয়ঙ্কর আমার জন্য। আজ কি হল জানি না, বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে উপস্থিত হলাম এক বন্ধুর বাসায় (সংগত কারণে নাম গোপন রাখছি)। গিয়ে এক অভাবনীয় পরিস্থিতির মধ্যে পড়লাম। জীবনের অন্যতম ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। আমার মনে হল আমার কিছু কথা বলা দরকার এই বিষয়ে, অন্তত সেই বন্ধুটিকে।
ওদের বাসায় আমার উপস্থিতির সময়টা ভুল ছিলো। যা ঘটলো তার সংক্ষেপ এইরকম...
.
যখন গল্প করছিলাম বন্ধুটির সাথে, পাশের ঘর থেকে উচ্চ ডেসিবেলে পরিপূরক দু’টো স্বর পাচ্ছিলাম। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কাহিনী কি?' বললো, 'এমন কিছু না, প্রতিদিনকার ব্যাপার।' আমি আমলে নিলাম না। একটু বাদে দেখলাম, বিতর্কের স্টেডিয়াম পরিবর্তিত হয়ে দু’ঘরের মাঝামাঝি একটা জায়গায় এসে থামলো। শব্দগুলো স্পষ্ট হলো, দৃশ্যপট পর্দামুক্ত হল। মনে হল, হঠাৎ করে আমি কোনো বস্তির মধ্যে গিয়ে পড়লাম। আহ! নিজেদের এবং শশুরবাড়ির জাত তুলে কি অসাধারন সব বিশেষণের ব্যবহার! শুনে আমার কান স্বার্থক হলো। আরো অসাধারণ ব্যাপার, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাক-আক্রমণগুলো হাতাহাতিতে রূপ নিতে যাচ্ছিলো। তা দেখার মত বদ সাহস আমার নেই। মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম, বন্ধুটির দিকে তাকানোর সাহস পাই নি। কে জানে, ক্লাসের অত্যন্ত মেধাবী আর চঞ্চল বন্ধুটির বিদ্ধস্ত রূপ সহ্য করতে পারতাম কিনা।
.
.
আমার কাছে মনে হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে অশ্লীল দৃশ্য হল মা-বাবার ঝগড়া। আমার জীবনে এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা কম, তবে আছে। তাই এর ভয়াবহতা কতটুকু আমি জানি। হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য যেসব মা-বাবা তাদের রুটি-রুজি, বিছানা বা অফিসের আলাপ অথবা কুটনী আত্মীয়ের কুটনামীর ফসল হিসেবে তৈরী হওয়া উত্তপ্ত আলোচনাগুলো সামান্যতম মানবিকতাবোধ না রেখে সন্তানেই সামনেই ইচ্ছেমত বাংলাভাষার ব্যবহার করেন- আমার ইচ্ছে হয়, তাদেরকে ক্লাস টু-তে ভর্তি করিয়ে দিয়ে বাংলা ব্যকরণের “শব্দচয়ণ” অধ্যায়টি ভালোভাবে পড়াই।
.
.
একটা quote পড়েছিলাম কোথায় যেন, তার মূলভাবটা এমন- “প্রত্যেক সন্তানের বাবা-মা পাবার অধিকার আছে, কিন্তু প্রত্যেক বাবা-মায়ের সন্তান পাবার অধিকার নেই।”
.
কথাটা প্রথম দিন পড়ে যতটুকু ভেবেছিলাম, তার থেকে অনেক বেশি ভাবলাম আজ। কে খেয়াল রাখে, বাবা-মায়ের বাকযুদ্ধ অনেক সময় হাতাহাতি পর্যন্ত যেসব ঘটনা সন্তানের সামনে ঘটতে থাকে তা কতটা বেশি প্রভাব ফেলে সন্তানের উপর? এটা নিতান্তই বাবা-মায়ের নিজেদের ব্যাপার, তবুও কোনো সন্তান কখনওই এসব থেকে নিস্পৃহ থাকতে পারে না। সুন্দর সুন্দর সব শব্দগুলো বারংবার বাজতে থাকে তার কানে। বাবা-মায়ের যেকোনো একজনকে নির্দোষ ভেবে অন্যজনকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখতে থাকে এবং তাকে পৃথিবী থেকে অন্তত তাদের পরিবার থেকে সরিয়ে দেবার মত ভয়াবহ চিন্তা ভাবনাও করতে থাকে...!! (আমার কথা না, সাইকোলজি তাই বলে)। অথচ কথা ছিলো দু’জনেই হবে শ্রদ্ধার পাত্র, ভালোবাসার আধার, আশ্রয়। কেউ কথা রাখে না, ওরাও কথা রাখেনি।
.
.
আমি সাইকোলজি ঘাটতে চাইনে, তা ঘাটতে গেলে শিউরে উঠে বার বার পিছ-পা হই। তবু আমার মনে হয়, একটা বয়স পর ছেলেরা বাবাদের দেখে শিক্ষা নেয়- কি করে বাবা হতে হয়। তার বাবার অভিভাবকত্বের প্রচন্ড রকম ছায়া পড়ে
যখন সে নিজে বাবা হয়। এসব বাবারা শুধু বাবা হবার শিক্ষাটাই দিতে ভুলে যান। তারা গণ্ডা-গণ্ডা ভালো বাবাদের গল্প শোনান, ভালো বাবা হয়ে কখনও নীরব শিক্ষক হয়ে থাকতে রাজি নন।
.
.
শেষমেষ সেই বন্ধুটির কাছে অনুরোধ, আর দশ বছর পর যখন তোর আশেপাশে কয়েকটা প্যা-প্যা-প্যা ঘুরে বেড়াবে- কোনোটা কাঁধে, কোনোটা পিঠে আবার কোনোটা তোকে ঘিরে দৌড়াতে থাকবে- সেদিন তুই তোর বাবার মত বাবা হোস নে। আমি জানি, ভালো বাবাদের গল্প পড়ে ভালো বাবা হওয়া কতটা অসম্ভব, কিন্তু আমরা মানুষেরা যেহেতু প্রকৃতিগতভাবে ভালো, একটু চেষ্টা করলে হয়তো খুব ভালোভাবেই পারি সেই ভালো মানুষীটাকে আলোতে নিয়ে আসতে। আর, ক’দিন পর যখন সাঁনাই বাঁজার সময় হবে, তখন শুধু নিজের জন্য বউ খুঁজিস নে, কোরো মা খুঁজিস। তাহলে ব্যাপারটা আরো অনেক সহজ হয়ে যাবে। নিজে সামান্যতম দোষী না হয়েও যে শাস্তি তুই পাচ্ছিস, সে শাস্তি যেন অন্য কেউ না পায়। পারবি না?
.
আর না পারলে অন্তত বিনা দোষে শাস্তি দেবার জন্য কাউকে আনবি না, পতিতালয়গুলো দিন দিন বেশ সস্তা হচ্ছে...!
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৪ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অত্যন্ত দামী কথা৷ পুরো লেখার আদেশ, উপদেশ সবটাই এর মধ্যে চলে এসেছে৷
বাহ! চমৎকার বিশ্লেষণ, এক কথায় বুঝিয়ে দিলেন : “প্রত্যেক সন্তানের বাবা-মা পাবার অধিকার আছে, কিন্তু প্রত্যেক বাবা-মায়ের সন্তান পাবার অধিকার নেই।”
প্রত্যেকটি মা বাবাও যেন সন্তানের অধিকার পায়, আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এমন হওয়ার তাওফীক দান করুন।
জাযাকাল্লাহ খাইর
০ আপনার বন্ধুর বাবা মা কি আরেকটি বাড়িতে থাকে নাকি এটা ঘরের পরিবর্তে রুম হবে ?
সন্তানের কাছে বাবা মা হলেও তাদের নিজেদের আরও বেশ কয়েকটা সত্তা আছে । তারা পরষ্পর স্বামী স্ত্রী এবং স্বামী - স্ত্রীর ঝগড়া হচ্ছে একটা চিরন্তন সত্য , কিংবদন্তীতুল্য ব্যাপার । এ সময়ে আশে পাশে কে আছে সেটা কি খেয়াল করার সময় থাকে ?
ঝগড়া করবার সময় এতোটাই কাণ্ডজ্ঞানহীন হবে যে তাদের বিছানার আলোচনাও টেনে আনবে সন্তানের সামনে?? :o
হাউ রিডিকুলাস...!
এ ধরণের অনেক ঘটনা শুনেছি যার অধিকাংশ এরকম ছিলো-
পরিবারের সন্তানরা যখন নিজ পিতা-মাতার মধ্যে অসহনীয় পরিবেশ - ঝগড়া- মারামারি দেখে বড় হয় তারা নিজেরাও নিজেদের মধ্যে সেই চরিত্র গ্রোআপ করে নিজের অজান্তে! এমনকি বাদ যায় না উচ্চ শিক্ষিতরাও!
এজন্যই সন্তানদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশের প্রয়োজন একটি মৌলিক বিষয়!
আমাদের এখানে সোশাল অনেক স্ট্রং, এমন হয়েছে কোনো বাচ্চা স্কুলে গিয়ে কোনো ভাবে বাসার এই নাজুক অবস্তার কথা বলে বলেছে পরক্ষণেই সোশাল ইনভেস্টিগেশন করেছে,সত্যতা ধরা পড়ার পর সেই বাবা- মা থেকে বাচ্চা আলাদা করা হয়েছে এই ভয়ে যে বাচ্চার মানসিক বিকাশে সেই পরিবেশ আঘাত হানবে!
কারো জীবন পারফেক্ট নয়, রাগ-ক্ষোভ আবেগজড়িত বিষয়, এগুলোর সাথে স্ট্রাগল করতেই হবে তবে বাবা- মা হিসেবে সবসময় মনে রাখতে হবে আমাদের প্রতিটা কাজ আমাদের শিশুদের অন্তরে-মস্তিষ্কে আয়নার মতো প্রতিবিম্বিত হচ্ছে তাই আমাদের ভবিষ্যতকে রক্ষার জন্য আগে সঠিকভাবে আভিভাকত্বের দায়িত্ব জানা ও রক্ষা করা প্রয়োজন!
লম্বা মন্তব্যের জন্য দুঃখিত। লিখাটি মনের কোণে অনেক পাতা ঝরিয়ে গেলো....
সেই সমস্ত দুঃখী পরিবারের জন্য অনেক শুভকামনা এবং নতুন প্রজন্মদের জন্য এক চমৎকার দিগন্ত উদ্ভাসিত হোক সেই দোআ রইলো
এতো সব দেখতে দেখতে ক্লান্ত... তাই আমি অন্য চিন্তায় আছি...
.
বিয়ে না করলেই সব ল্যাটা চুকে যায়...! এত্তো এত্তো টেনশন, রেস্পনসিবিলিটি, সামাজিকতা শুধু শুধু মাথায় চাপে... আবার নিজের সময়, খ্যাতি, টাকা-পয়সায় ভাগিদার বাড়তেই থাকে, বাড়তেই থাকে... কি দরকার?? (thinking imotion)
আমাদের সবার চেষ্টা হোক একজন ভালো-আদর্শ মুসলিম হওয়ার এতেই কিন্তু সব সমস্যার সমাধান!
নেগেটিভিটি আছে সমাজে তার সাথে কিন্তু আছে অনেক পজিটিভিটি সুতরাং- লা তাহযান
আর ওই পজেটিভিটি comes with প্যাড়া... যে সুকুন দিতে পারে, সে ছ্যাকও দিতে পারে...! ছ্যাক আমি ভপ্পাই খুব...!!
ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে সময় হতে আমাদের আমাদের আলেম ওলামা ও ধর্মের কান্ডারীরা - ইসলামবিমুখ শয়তানদেরকে সুযোগ দিয়েছেন, যাতে তারা কৌশলে আমাদের এ মর্মে শিক্ষা দিতে পারেন যে
১। মাল্টিপল বিয়ে আসলে একটা দুর্বৃত্তপনা, নীচু শ্রেনীর ক্রিমিনাল টাইপের কাজ।
২। মেয়েদের কাজ করতে (কন্ডিশান উল্লেখ না করে, কিংবা উহ্য রেখে) কোন বাঁধা ইসলামে নেই।
৩। আল্লাহর চোখে নারী পুরুষ উভয়ে সমান (ডিকোডিং না করে)
৩। পতিতাবৃত্তি আধুনিক সমাজ ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় একটি অপরিহার্য পার্ট।
৪। সর্বোপরী নাম সর্বস্থ একটি সেনসর বোর্ড আছে তো।
সো মানুষের অতি ন্যাচারাল, বৈশিষ্টানুযায়ী সামন্জস্যহীনতা হতে সৃষ্ট ক্রুদ্ধতা, ক্ষোভ, বিতৃষ্ঞা ও তার প্রকাশ আপনার লিখায় বড় বেশী প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে।
যাইহোক, আপনার লিখাটি পড়ে আমার ভাবনায় আসছিল - কেন আজকের পরিবারগুলোতে বিশেষ করে অমন ম্যাচুউরড পরিবারগুলোতে ও ঝগড়া-বিবাদ অমন বিচ্ছিরি আকার ধারন করছে এবং কেন তার লিটারেলী কোন প্রতিকার নেই।
গত কয়েক দশকে দাম্পত্যজীবনের বন্ধনকে নড়বড়ে করার জন্য যে কাজ সমূহ ইন্টেলেক্টচ্যুয়ালরা করেছেন তার দিকে দৃষ্টি ফেরাবার চেষ্টা করছিলাম।
মন্তব্যগুলোসহ পড়লাম,
কী আর বলবো..
দোয়া করি, জাযাকুমুল্লাহ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন