ফিবোনাচির গল্প ২.২ : মোদের শরীরও মাঝে ফিবোনাচির বসবাস!
লিখেছেন লিখেছেন অবাক মুসাফীর ১২ জুন, ২০১৫, ১০:১৭:০৬ রাত
ফিবোনাচির গল্প ২.১
এর পর থেকে
.
.
আমার কি মনে হয় জানেন? আমাদের সৃষ্টিকর্তার খুব খুব বেশি প্রিয় এই ধারাটি। প্রিয় না হলে এই প্রকৃতিতে কেন এতো ছড়াছড়ি এই ধারার? এমনকি খুব সূক্ষ্মভাবে আমাদের শরীরের মধ্যেও তিনি ঢুকিয়ে দিয়েছেন এই ধারা! কি বিশ্বাস হচ্ছে না? চলুন দেখা যাক।
[আমি যা যা বলছি, আমার সাথে সাথে করে গেলে বেশি আনন্দ পাবেন]
আপনার ডান হাতটি উপুড় করুন। এখন বা‘হাতের সাহায্যে ডান হাতের মধ্যমা আঙুলটির নখের দৈর্ঘ্য মাপুন। এখন নখের দৈঘ্যকে একক ধরে আঙুলটির হাড়গুলোর দৈর্ঘ্য মাপুন এক এক করে, হাতের কব্জি অবধি হাড়টি পর্যন্ত। আপনি যদি সঠিকভাবে মাপতে পারেন তবে হাড়গুলোর দৈর্ঘ্য হবে মোটামুটি ২, ৩, ৫ এবং ৮ একক! আর এটা ফিবোনাচি ধারা ছাড়া আর কি!
দেখলেন তো, আপনি জন্মলগ্ন থেকেই আপনার শরীরে ফিবোনাচি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন!
চিত্র: হাতের মাঝে গণিত!
আবারও বলছি, এই পরিমাপটি করতে হবে হাত উপুড় করে, তাতে হাড়ের পরিমাপ সহজ এবং সঠিক হবে। এই ফাঁকে একটা মজার তথ্য দিয়ে রাখি, আপনার হাত চিৎ করলে মধ্যমা আঙুলের মাঝে ভাজের যে দুটো দাগ দেখা যায় ওই দুটোর দূরত্ব মোটামুটি ১ ইঞ্চি। অর্থাৎ, আমরা যদি আঙুলগুলোকে তিনভাগে ভাগ করি তবে মধ্যমা আঙুলের মাঝের ভাগের দৈর্ঘ্য হবে ১ ইঞ্চি! আবার শাহাদাত আঙুলের প্রথম ভাগটির দৈর্ঘ্যও ১ ইঞ্চি! সন্দেহ থাকলে মেপে দেখতে পারেন। (তবে একেবারে ওয়া ওয়া টাইপ পিচ্চি কারো আঙুল মাপলে হবে না কিন্তু! প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের আঙুল চাই।)
ব্যাপারটা এইরকম:
এতোক্ষণ তো দেখলাম বাইরের শরীরের মাপজোখ। চলুন এবার একটু শরীরের ভেতরে প্রবেশ করি। এখানে সমস্যা হল নিজে নিজে মেপে দেখার আনন্দ এখানে নেই, শুধুমাত্র বিজ্ঞানীদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। কিন্তু দিন শেষে যে সত্য বেরিয়ে আসবে সেটা পড়ে বেশিক্ষণ হা হয়ে থাকবেন না যেন, মুখে মাছি ঢুকতে পারে! ভেবে কুল কিনারা পাবেন না, কতটা সূক্ষ্মভাবে তৈরি করা হয়েছে আমাদের। আর সেখানেও স্ব-মহীমায় মিটিমিটি হাঁসতে থাকেন ফিবোনাচি মশাই।
বিশ্বজগতে জীব মাত্রেরই যে জিনিসটা থাকবে তা হল ডিএনএ। সেই ডিএনএ-র আকার কেমন? সে সোজাসুজি থাকতে ভালোবাসে না, সোজাসুজি থাকলে নাকি তার তথ্য আদান-প্রদানে বেশি সময় লাগে। তাই সে পেঁচানো অবস্থায় থাকতে ভালোবাসে। (মঁই দেখেছেন তো সবাই? এই মঁইকে যদি পেঁচানো যায় তবে যেমন আকৃতি পাওয়া যাবে অনেকটা সে রকম।) এই ধরণের আকৃতিকে বলে Double Helix Spiral। আবার, ডিএনএ প্যাঁচ খায় ঠিকই, কিন্তু একটু অসমভাবে। প্রথমে বড় একটি জায়গাজুড়ে প্যাঁচ খেয়ে সাথে সাথে ছোট্টে আরেকটি প্যাঁচ খায়। তারপর আবার প্যাঁচ কিছুটা শিথিল হয়ে বড় প্যাঁচ খায়, এভাবে চলতে থাকে। অর্থাৎ, দু ধরণের খাঁজ সৃষ্টি করে। এই বড় খাঁজকে বলা হয় Major Groove, আর ছোট খাঁজকে Minor groove। এবার আসি মূল কথায়। এই Major Groove-এর দৈর্ঘ্য হলো ২১ অ্যাংস্ট্রোম্স (১), আর Minor Grove-এর দৈর্ঘ্য ১৩ অ্যাংস্ট্রোম্স! আবার, একটি স্পাইরালের সর্বোচ্চ ব্যবধি ২১
অ্যাংস্ট্রোম্স আর দৈর্ঘ্য ৩৪ অ্যাংস্ট্রোম্স! এখনও কি এই ১৩, ২১, ৩৪ সংখ্যাগুলোকে অচেনা লাগে? যদি অচেনা লেগে থাকে তবে কলা (২) খান আর নিচের ছবিটি দেখুন।
চিত্র: ডিএনএ-র গণিত!!
উপরে ডিএনএ-র যে কল্পিত ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন, পৃথিবীর প্রায় সব জীবের মধ্যে থাকা ডিএনএ-র আকার-আকৃতি ঠিক এমনই! একবারও ভেবে দেখেছেন কতটা দরদ দিয়ে, কতটা নিখুঁত করে তিলে তিলে গড়ে তোলা হয়েছে আমাদের? আর সব নিখুঁত, সব সুন্দরের মাঝেই শুধু ফিবোনাচির জয় জয়কার!
[বি.দ্র: (১) ১ অ্যাংস্ট্রোম্স = ১*১০^(১-০) মিটার
(২) কলার মধ্যেও ফিবোনাচি বাবাজি আছেন! এটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব
আপনাদের... খুঁজে পেলে কমেন্টে জানান।]
শেষে একটা ছবি দিয়ে গেলাম, যদি সেখানে ফিবোনাচি মশাইকে খুঁজে পান তবে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠুন, “আমি ফিবোনাচিময়!!“
ওহে ফিবোনাচি!
আমাকে আমার মত থাকতে দাও,
আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে... ...
না থাক, তোমাকে ছাড়া আমার থাকা সম্ভব নয়, তুমি আমার পুরোটা জুড়েই মিশে আছো! তাই তো তুমি আমার এতো প্রিয়... এতো প্রিয়...!!
ফিবোনাচি সম্পর্কে আরো জানতে-
ফিবোনাচির গল্প ১.১
(ফিবোনাচির পরিচয় জানতে আপনাকে ফিবোনাচির গল্প ১.১ পড়তে হবে।)
ফিবোনাচির গল্প ১.২
বিষয়: প্রিয় ধারা
বিষয়: Contest_priyo
২১৯৬ বার পঠিত, ৭০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাসটার সাব কিছু একটা করেন......
টেস্টি হজমি...
খাইলে সব কিলিয়ার...
জন্ম থেকে পরিনত হওয়া পর্যন্ত ছবি দেয়া হল. বুঝে নিয়েন. পরিনত হলে কলায় ফিবনাচির ধারা ৩, ৫. সিরিজের জন্য মাস্টার মশাইকে ধন্যবাদ
আমি দুঃখিত আপনাদের আলোচনায় - বাগড়া বাধানোর জন্য।
আপনার এই কথাটি, 'আমাদের চারপাশে সৃষ্টির মাঝেই রয়েছেন স্রষ্টা'। এ কথাটি আমরা ছোটবেলা হতে শুনে আসছিলাম। কিন্তু এ ধারনাটি মূলতঃ হিন্দু ধর্মের কোর কিংবা ভিত্তি। ওরা রিলিয়াজিয়াস ফেইথ এর একটি স্তম্ভ হল স্রষ্টা সৃষ্টির পর ওনার সৃষ্ট বিষয়াবলীতে বিলীন হয়েছেন। সো সৃষ্ট বিষয়াদিকে ভালবাসলে, শ্রদ্ধা করলে, পূজা করলে স্রষ্টাকেই আলটিমেইটলী পূজা করা হয়।
অন্যদিকে ইসলাম আমাদেরকে ক্লিয়ারলী জানান স্রষ্টা সৃষ্টির পর ওনার আরশে সমাসীন হয়েছেন।
এটা আমি কোন একজন আলেম এর বক্তব্য হতে ব্যাখ্যা সহকারে শুনেছিলাম - কিন্তু মনে করতে পারছিনা কার কাছ হতে। জাকির নায়েক, নুমান আলী খান, ইয়াসির কাদি না ইমরান হোসেন - ঠিক মনে আসছে না।
ক্যালকুলেশন আপনার প্রথম পর্ব অনুযায়ী যতটুকু মনে আছে নীচে দিলাম:
In the Fibonacci sequence, each number is the sum of the two preceding numbers, starting with 0 and 1:
0, 1, 1, 2, 3, 5, 8, 13, 21, 34, 55, 89, 144, 233, 377, 610, …
(In mathematical terms, we can write this as Fn = Fn-1 + Fn-2, with F0= 0 and F1 = 1.)
The amazing thing about the Fibonacci sequence is that numbers in the sequence occur regularly in nature. A banana has five sides, which is a Fibonacci number. The most common flowers have 3, 5, 13, 21 petals – again, Fibonacci numbers.
So divide 5 sides by its factored exponent (15).
So in conclusion a banana flower has 3 Fibonacci's.
.
আপনাদের হাই-স্কুলের সিলেবাসে ফিবোনাচি ছিলো?? :-o নাকি সখ কইরা পড়ছেন??
আচ্ছা তা জিজ্ঞেস করলাম না... But আপনাদের সিলেবাসের (তৎকালীন বা বর্তমান) কিছু ম্যাথ বইয়ের নাম দেন, লেখকের নাম সহ... আমি নিজেই জেনে নিবো ইনশাআল্লাহ...
https://www.youtube.com/watch?v=kRPGPAnPNa8
এই লিঙ্কের বাঁ দিকে Fibonacci in Nature এ বই, তথ্য সবই পাবেন।
http://www.world-mysteries.com/sci_17.htm
এ পর্বও সুন্দর। ধন্যবাদ।
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আ'জীম...!
আপনার গনিত নিয়ে চিন্তায় অসংখ্য সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা আছে..... ভালো লাগলো চালিয়ে যান।
এ পর্বটিও ভালো লাগলো! খুবি চমৎকার ভাবে শরীরের ভিতর ও বাইরে ফিবোনাচির অস্তিত্ব দেখলাম! সুবহান আল্লাহ!
আল্লাহ আপনার মেধায় আরো বারাকাহ দিন আমিন!
জাযাকাল্লাহ!
[img]
মাশাআল্লাহ আপনার খাটাখাটুনীতে আমাদের জানার দ্বার আর একটুখানি উন্মুক্ত হল, ধন্যবাদ।
গণিত নিয়ে একটা পুঁথি! আমার উস্তাদের! কাম-কাজ না থাকলে দেখতে পারেন...
মন্তব্য করতে লগইন করুন