ফিবোনাচির গল্প ১.২ (গাণিতিক উপাখ্‌যান)

লিখেছেন লিখেছেন অবাক মুসাফীর ০৪ জুন, ২০১৫, ০১:০১:৫০ রাত

ফিবোনাচির গল্প ১.১ (গাণিতিক উপাখ্‌যান)

এর পর থেকে...

.

.

.

এবার আমরা চলে যাবো আফ্রিকার একটি বনে। বিশাল কোনো এক পাহাড়চূড়ায় খুব ক্ষুধার্ত একটা চিল বসে আছে, পেটের জ্বালা মেটানোর জন্য শিকার খুঁজছে। আমরা এতক্ষণ যতগুলো খরগোশ দেখলাম তার থেকে একটা না হয় বেচারাকে খেতে দেওয়া যেতে পারে। তাই আমরা যদি একটা খরগোশ ছেড়ে দিয়ে আসি তবে কি সে পাহাড়চূড়া থেকে সোজা নেমে এসে শিকার ধরবে? উত্তর- না। কারণ সে তার নিজের শারীরিক গঠন সম্পর্কে অবগত। চিলের দুই চোখের মাঝের বিস্তৃতি এবং প্রতিটি চোখে একটি গভীর ও একটি অগভীর ফোবিয়াস সেন্ট্রালিস থাকে বলে সে সোজাসুজি চলতে পারে না। সোজাসুজি চলতে গেলে সে দিক হারিয়ে ফেলে। তাই সে তার ঠোঁট সোজা রেখে প্রায় ৪০° কোণে বেঁকে ঘুরে ঘুরে নামতে থাকে। আর চিল এইভাবে যে পথে শিকার করে, একটু খেয়াল করলেই দেখবো তা আসলে ফিবোনাচি স্পাইরাল ছাড়া আর কিছুই না (চিত্র: ৪)।



চিত্র ৪ : চিলের শিকার করার গতিপথ।

ফিবোনাচি ধারা যে কিভাবে আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে তা সত্যিই কল্পনাতীত। খরগোশের মত মৌমাছিও তার বংশবিস্তার করে এই ধারা অনুসারে। আবার বিভিন্ন বৃক্ষ শাখা-প্রশাখার বিস্তার করে ফিবোনাচি সংখ্যা অনুযায়ী। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা থেকে সুবিশাল গ্যালাক্সি তথা ছায়াপথের গঠনও ফিবোনাচি ধারা অনুযায়ী (চিত্র ৫.৩)। এছাড়াও আছে এমন অসংখ্য উদাহরণ। সূর্যমুখী ফুলের পাপড়ির বিন্যাস, কিছু অ্যালোভেরার বিন্যাস (চিত্র ৫.১), নিম্নচাপে সৃষ্টি হওয়া মেঘের বিন্যাস (চিত্র ৫.২), আনারসের খোসার বিন্যাস, ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদের ফ্রন্ডের বিন্যাস (চিত্র ৫.৫), পাইনকর্নের বিন্যাস-সহ (চিত্র ৫.৪) আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে এমন হাজারো দৃষ্টান্ত যেখানে লুকায়িত আছে এই ধারা। এছাড়া বিজ্ঞান এবং গণিতের মাঝে অত্যন্ত ব্যাপক ভাবে মিশে আছে এই ধারা, যার অন্যতম দৃষ্টান্ত প্যাসকেলের ত্রিভুজে ফিবোনাচি ধারার উপস্থিতি।



চিত্র ৫ : ধারাটির আরো কিছু বাস্তব উদাহরণ।

আজ যে ঘটনা ‍দিয়ে ইতি টানবো, সেটি আমার মনে হয় এই ধারার সবচেয়ে বিস্ময়কর উপস্থিতি। প্রতি বছর যখন ইউরোপের দেশগুলোতে তুষারপাত শুরু হয়, তখন শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য অসংখ্য পাখি আমাদের দেশসহ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়। আমরা এসব পাখিকে বলি ‘অতিথি পাখি’। বিজ্ঞানের ভাষায় এদের বলা হয় ‘পরিযায়ী পাখি’। এরা দল বেঁধে এদেশে আসে এবং দল বেঁধেই ফিরে যায়। আশ্চর্য বিষয় হল, প্রতিটি দলের সদস্য সংখ্যা হয় ফিবোনাচি ধারার কোনো না কোনো পদের সমান! অর্থাৎ, এদের দলে ৩৪ বা ৫৫ বা ৮৯ অথবা ১৪৪ টি পাখি থাকতে পারে, কিন্ত কখনও তার ১-২ বেশি বা কম না। দলের সদস্য সংখ্যা এমন হতেই পারবে না, যে সংখ্যার স্থান ফিবোনাচি ধারায় নেই। আবার যখন কোনো একটি বা একাধিক পাখি কোন কারণে মারা পড়ে বা হারিয়ে যায় তখন অন্যান্য পাখিগুলো আবার নতুনভাবে বিন্যস্ত হয় এবং ছোট ছোট দল গঠন করে। এতে করে যে নতুন একাধিক দল তৈরী হয়, সেখানেও তাদের সদস্য সংখ্যা হয় ফিবোনাচি ধারার কোনো না কোনো পদের সমান!

প্রশ্ন আসাটা খুবই স্বাভাবিক যে, খরগোশ, চিল, মৌমাছি, অতিথি পাখিরা এতো সূক্ষভাবে গণিত জানলো কিভাবে? কিভাবে প্রকৃতিতে পদে পদে আমরা গণিতের ছোঁয়া পাই? এতো সবকিছু শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আ’লামীনের করুণায়, যিনি এই বিশ্ব-ব্রম্ভাণ্ডকে গেঁথেছেন গাণিতের সুতোঁয়। নিউটন-আইনিস্টাইনরা পৃথিবীকে কয়েকটি সূত্রে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন, বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন সব কিছু। তারা তাদের কাজে সফলতা দেখিয়েছেন, পৌছেছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী মানুষদের কাতারে। তারা তা করতে পেরেছিলেন শুধুমাত্র প্রকৃতির ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন বলে। মহান রাব্বুল আ’লামীন আমাদের সামনেই সেই সুযোগ তৈরী করে রেখেছেন, আর আমরা এতোটাই মূর্খ যে কিছুই দেখতে পাই না। আমরা বাস করছি গণিতের এক বিশাল সমুদ্রে। আমাদের ব্যার্থতা এই যে, আমরা এই অমীয় সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে পারি না। আমাদের পুরো বিশ্বজগৎ-ই চলছে গাণিতিক নিয়মে। সৃষ্টিকর্তা নিঁখুতভাবে গণিত কষেই তৈরি করেছেন এই মহাবিশ্ব! তাই তো আমাদের এই প্রকৃতি এতো সুন্দর, এতো নিঁখুত। ফিবোনাচি ধারার আবিষ্কারক লিওনার্দো ফিবোনাচি ধারাটি আবিষ্কারের পর খুব বেশি কাজ করে যেতে পারেন নি। তিনি মারা যাবার আগে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমি যদি আর তিনটা বছর বাঁচতে পারতাম!’ শুধুমাত্র এই ধারা নিয়ে কাজ করতে পারার জন্য তার এই আঁকুতি। তিনি না পারলেও আমরা কিন্তু ঠিকই পারি এই রহস্যময় ধারা নিয়ে কাজ করতে। কেউ এমন কিছু পেয়ে গেলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!

সবার জীবন ফিবোনাচি ধারার মত বৈচিত্রময় হয়ে উঠুক।

বিষয়: প্রিয় ধারা

বিষয়: Contest_priyo

১৭৩০ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

324465
০৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:০৯
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : যাক এবার বেশ খানিকটা বুঝতে পেরেছি।
বলেছিলাম না, গণিতের প্রতি আমার একটা প্রেম আছে Oh go On Oh go On Oh go On Big Grin

এর পরের বার দেখবেন আপনাকে শুধু প্রশ্নই করে যামু Big Grin Big Grin Big Grin
০৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:১৬
266262
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : ফিবোনাচির গল্প ২.১-এ আপনার প্রশ্নের অপেক্ষায়... Happy যদিও কবে পোস্ট করবো তার কোনো ঠিক নেই... Sad Sad Crying
১১ জুন ২০১৫ রাত ১২:১৯
267143
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : ভাইডি, আপনার ঐতিহাসিক কমেন্টখানা গুম হয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে... Crying Crying Crying
১১ জুন ২০১৫ রাত ১২:৩৫
267145
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : নাআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআ এ হতে পারে নাআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআ Worried Worried Crying Crying Crying
324466
০৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:১৩
মাটিরলাঠি লিখেছেন :
সত্যিই বিস্ময়কর। ভালো লাগলো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। Rose Rose
০৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:১৯
266264
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : ফিবোনাচির গল্প ১.১ পড়ে দেখার অনুরোধ রইলো... ওখানে আরো কিছু উদাহরণ রয়েছে... Happy
324480
০৪ জুন ২০১৫ রাত ০৩:২২
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।
ইন্টারেস্টিং।
অনেক দিন ধরে আমার এক ভাই বলছিলেন তিনি রাশিয়ায় এক ইজিফশিয়ান ভাইকে চিনেন যিনি গত ২৫/৩০ বছরের বেশী শুধু কোরানের সংখ্যা নিয়ে গবেষনা করছেন এবং ইতোমধ্যে প্রাচীণ বিভিন্ন বিষয়াদি যেমন আদম আঃ হতে শুরু করে বিভিন্ন নবী রাসুলদের আঃ দের ঘটনার মধ্যে গানিতিক যোগসূত্র যেমন স্থাপন করেছেন তেমনি আগামীর দিনগুলো নিয়ে কোরানের যে মতামত তাকে ডিকোডিং করেছেন।

আমরা ভাবছিলাম ভদ্রলোককে ইনভাইট করবো - আপনার লিখা পড়ার পর মনে হচ্ছে - আমন্ত্রন জানানোটাকে আরো সিরিয়াসলী এগিয়ে নিতে হবে।

ধন্যবাদ ভিন্নধর্মী বিষয়ে আমাদের জনানোর জন্য।
০৪ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:১৬
266305
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুমুস সালাম... খুব দ্রুত ইনভাইট করে ফেলেন, আর আমাদের জানাতে ভুলবেন না যেন... উফফ!! কোরানের গণিত!! তাও আবার ভূত-বর্তমান-ভবিষ্‌যত!! অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকবো... Thinking Thinking Thinking
324485
০৪ জুন ২০১৫ রাত ০৪:০৮
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসসালামু আলাইকুম !

সুন্দর আদুরে খরগোশ কে পাহাড়ের উপর চিলে হাতে ছেড়ে দিলেন? Crying

এই পর্বটি খুব সহজ লাগলো ! ভালোও লেগেছে! আচ্ছা সূর্যমুখী ফুলের বৃত্তের মাঝে যে কচি রেনু সেগুলোর সাথে কি ফিবোনাচিরর সম্পর্ক আছে?

নিয়মিত লিখুন! শুকরিয়া Good Luck

মহান রাব্বুল আ’লামীন আমাদের সামনেই সেই সুযোগ তৈরী করে রেখেছেন, আর আমরা এতোটাই মূর্খ যে কিছুই দেখতে পাই না। আমরা বাস করছি গণিতের এক বিশাল সমুদ্রে। আমাদের ব্যার্থতা এই যে, আমরা এই অমীয় সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে পারি না। আমাদের পুরো বিশ্বজগৎ-ই চলছে গাণিতিক নিয়মে। সৃষ্টিকর্তা নিঁখুতভাবে গণিত কষেই তৈরি করেছেন এই মহাবিশ্ব! মন ছুঁয়ে গেলো কথাগুলো! Good Luck
০৪ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:২৪
266307
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : কী আর করবো! বেচারার প্রাণ ওষ্ঠ্‌যাগত... আর এক বছরের মাথায় ১৪৪ জোড়া! এতোগুলো রাখবো কোথায়?
.
.
হুম্ম, সূর্যমূখীর ওই রেণুগুলোর সাথেও ফিবোনাচির bosom friend টাইপ সম্পর্ক, পরের পোস্টে এই ব্‌যাপারে আসছে ইনশা আল্লাহ...
.
.
আর পরের পোস্ট গুলো আরো সহজ হবে আশা করি, আপনাদের অনেকের প্রিয় জিনিস নিয়ে কিনা!
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:৩৫
266680
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন :
324494
০৪ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:১৮
ঝিঙেফুল লিখেছেন : চমৎকার এবং শিক্ষণীয় Rose
০৪ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:২৬
266308
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : ধন্‌যবাদ... সবই তাঁর ইচ্ছা..
324513
০৪ জুন ২০১৫ সকাল ০৯:৩৩
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : ফিবোনাচ্চি রাশিমালা নিয়ে একটা লেখার ইচ্ছে ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই| নানা কারণে হয়ে উঠেনি|আপনার লেখাটা ভালো লাগলো খুবই | অনেক ধন্যবাদ নিন লেকটার জন্য|
০৪ জুন ২০১৫ সকাল ১১:৩৮
266357
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : My pleasure... Thanks for reading... Happy
০৫ জুন ২০১৫ রাত ১১:৩১
266911
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : আপনিও লিখুন না! আমরা হয় তো আরো ভালো এবং মজার কোনো তথ্‌য পাবো... Happy
324786
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:৩৬
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আপনি দেখছি সত্যি সত্যি গণিত পাগল।
http://www.independent.co.uk/news/weird-news/of-course-someone-applied-the-fibonacci-sequence-to-celebrity-faces-10292549.html
এই লিঙ্কে ফিবনাচির আরো মজার তথ্য দেখতে পাবেন
০৫ জুন ২০১৫ রাত ১১:২৯
266909
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : হা হা হা... Rolling on the Floor Rolling on the Floor এটা বেশ মজার ছিলো... Big Hug এমনই কিছু দেখেছিলাম বলিউডের কিছু তারকাদের নিয়ে... লিংকটির জন্‌য যাঝাকাল্লাহ খাইর...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File