ফিবোনাচির গল্প ১.১ (গাণিতিক উপাখ্যান)
লিখেছেন লিখেছেন অবাক মুসাফীর ০৩ জুন, ২০১৫, ০৯:৩৮:০৭ রাত
গণিত মানেই সৌন্দর্য। গণিতের সৌন্দর্যকে বই-খাতার ভেতর ধামা-চাপা দেওয়া আর মনের গভীর থেকে অনুভব করা, এই দুইয়ের মাঝে যোজন যোজন ব্যাবধান বিদ্যমান। আজ আমরা আমাদের চিরাচরিত অবস্থা থেকে একটু বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি।
‘গণিত’ এই শব্দটা শুনলে প্রথমে যে দুটো জিনিস আমার মাথায় আসে তা হল ফিবোনাচি ধারা আর পাই (π)। আমার পৃথিবীতে সবচেয়ে আদরের ধ্রুব হল পাই (π=৩.১৪১৫৯….) আর ধারাটি হল ফিবোনাচি ধারা। এই উপাখ্যানটি মূলত ফিবোনাচি ধারাকে নিয়ে; এখানে আমরা এই ধারার আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, এর কিছু বৈশিষ্ট্য, তৈরীর উপায় এবং কিছু রহস্যময়তা সম্পর্কে একে একে জানবো।
এই ধারাটি আবিষ্কার করেন ইতালীয় গণিতবিদ লিওনার্দো ফিবোনাচি (জন্ম-মৃত্যু: ১১৭০-১২৪০ খ্রীস্টাব্দ) । বিখ্যাত নগরী পিসায় তার জন্ম (সেই পিসা নগরী , যেখানে গ্যালিলিও সাহেব পড়ন্ত বস্তুর সূত্র আবিষ্কার করতে গিয়ে কতকিছুই না ফেলে ফেলে নষ্ট করেছেন!)। তিনি তার বিখ্যাত বই Liber Abaci তে (১২০২ সালে) এই ধারার কথা উল্লেখ করেন এবং আবিষ্কারক হিসেবে এই ধারার নাম তার নামানুসারে করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ১২০২ সালেরও বহু পূর্ব থেকেই এই ধারা লুকানো ছিলো আমাদের এই ভারতবর্ষে। অতিপ্রাচীনকালে রচিত বিভিন্ন সংস্কৃত শ্লোকে তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ফিবোনাচি সাহেব শুধুমাত্র তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন এবং এর কিছু বিস্ময়কর অবস্থানের কথা বলে গেছেন।
ফিবোনাচি কিভাবে তৈরী করেছিলেন এই ধারা? আসলে ফিবোনাচি ধারা এত সহজেই তেরী করা যায় যে, ক্লাস ওয়ানের যেকোন শিক্ষার্থীও পারবে এই ধারা তৈরী করতে! এর জন্য যেটুকু জ্ঞান লাগবে তা হল, শুধু যোগ করতে পারা। তাহলে কিভাবে তৈরী করা যায়, দেখা যাক। ফিবোনাচি সাহেব বলেছিলেন, ‘এই ধারার প্রথম দুটো পদ হবে ০ আর ১ এবং পরবর্তী পদগুলো হবে, পূর্ববর্তী দুইটি পদের যোগফল।’ অর্থাৎ, প্রথম পদ ও দ্বিতীয় পদ হবে ০ এবং ১, তৃতীয় পদ হবে, প্রথম পদ + দ্বিতীয় পদ = ০+১ = ১। চতুর্থ পদ হবে, দ্বিতীয় পদ + তৃতীয় পদ = ১+১ = ২। পঞ্চম পদ হবে, তৃতীয় পদ + চতুর্থ পদ = ১+২ = ৩ … … এভাবে চলতে থাকবে। আরো কিছু পদ এভাবে যোগ করে করে আমরা যে ধারাটি পাবো তার বিস্তৃত রূপ: ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭, ৬১০, ৯৮৭, ১৫৯৭, ২৫৮৪, ৪১৮১, ৬৭৬৫, ১০৯৪৬ … … হুম, ধারাটি কিছুটা ইচড়ে পাকা স্বভাবের। ছোট বাচ্চার মত ছোট্ট ছোট্ট পায়ে হাঁটি হাঁটি করতে করতে হঠাৎ করেই যেন দানবাকৃতি ধারন করলো! আসলে এখানেই ফিবোনাচি ধারার আসল সৌন্দর্য নিহিত।
এবার আসল কথায় আসা যাক । আমি এই ধারাটিকে অত্যন্ত রহস্যময়, বলেছি। আমি এ-ও বলছি যে, খুব বেশি থ্রিলিং একটা বিষয় আছে এই ফিবোনাচি ধারায়; যারা মাসুদ রানা বা তিন গোয়েন্দা পড়ে, তাদের হয়তো আর থ্রিলিং-এর খোঁজ করা লাগবে না বইয়ের ভাজে, সব রহস্য
যেন ভর করেছে এই গণিতিক ধারায়! অনেকেই ভাবতে পারে, কয়েকটি সংখ্যার যোগে কিই-বা আহামরি বিস্ময় থাকতে পারে? যৌক্তিক প্রশ্ন। আমি যেহেতু এত বড় বড় কথা ইতিমধ্যে বলে ফেলেছি, তাই আমি আমার কথাগুলোর কইফিয়াত
দিতে বাধ্য।
থ্রিলিং-এর খোঁজে প্রথমে আমরা চলে যাব গতিদানব(!) শামুকের কাছে। দেখা যাক আমাদের কোনো সাহায্য করতে পারে কিনা শামুক বাবাজি। শামুক, এই শব্দটা মাথায় আসলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে শামুকের শক্ত খোলস আর পিচ্ছিল একটা দেহ, মাথায় দুটো শুড়ের মত। আমরা এইবার শমুকের একটা ফাঁকা খোলসের দিকে একটু লক্ষ্য করি (চিত্র: ১)। কি দেখতে পাচ্ছি? দেখা যাচ্ছে যে, ভেতরের একটা বিন্দু থেকে খোলসের স্পাইরালটি উপবৃত্তাকার পথে ঘুরে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উপরে উঠে গিয়েছে। এবার আমরা আজকের নায়ক ফিবোনাচি ধারাকে একটু সাজিয়ে নিবো জ্যামিতিক আকারে। প্রথম পদ ০ কে একটি বিন্দু বিবেচনা করে, ধারার প্রতিটি পদের জন্য আমরা এমন একটি করে বর্গ কল্পনা করবো যার প্রতিটি বাহুর মান হবে পদের মানের সমান। অর্থাৎ, দুইটি ১ এর জন্য দুইটি ১X১ বর্গ, ২ এর জন্য ২X২ বর্গ, ৩ এবং ৫ এর জন্য যথাক্রমে ৩X৩ এবং ৫X৫ বর্গ … … এভাবে সব বর্গগুলোকে একত্রে সাজালে আমরা নিচের ছবির (চিত্র ২) ন্যায় একটা আয়ত পাবো। এবার প্রতিটি বর্গের যেকোনো দুইটি বিপরীত কৌণিক বিন্দুকে স্পর্শ করে আমরা যদি কার্ভ বা স্পাইরাল আঁকি তবে তা দেখতে ছবির স্পাইরালের মতই হবে। এখন এই স্পাইরালের সাথে কি কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে শামুকের খোলসের?
চিত্র ১ : শামুকের খোলস।
চিত্র ২ : ফিবোনাচি স্পাইরাল (বর্গাকারে
সাজিয়ে)
আমরা বোধহয় ছবি দুটি থেকে বুঝে ফেলেছি, শামুকের খোলসের স্পাইরাল আর ফিবোনাচি স্পাইরাল হু-বহু এক!
.
.
.
আমার অনেক পছন্দের একটা প্রাণী খরগোশ। একসময় একজোড়া খরগোশ ছানা ছিলো আমার। যদিও তখন জানতাম না যে, খরগোশ মহাশয় পাক্কা গণিতবিদ! জানলে হয়তো আলাদা কদর করতাম! গণিতবিদ খরগোশ তার বংশবৃদ্ধি করে সম্পূর্ণ গণিত মেনে। আগেই বলে রাখি, খরগোশ তার জন্মের দ্বিতীয় মাস থেকে বংশবৃদ্ধি শুরু করে এবং জোড়ায় জোড়ায় বাচ্চা দেয়। আমরা যদি এক জোড়া খরগোশকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে বড় করে তুলি, তবে তারা জন্মের পর দ্বিতীয় মাস থেকে ছানা উৎপাদন শুরু করবে। তাই প্রথম মাসে কোনো বংশবৃদ্ধি হবে না কিন্তু দ্বিতীয় মাসে খরগোশের জোড়া সংখ্যা হবে দুই। এভাবে তৃতীয়, চতুর্খ ও পঞ্চম মাসে খরগোশ জোড়ার সংখ্যা হবে ৩, ৫ ও ৮ এবং পরবর্তী মাসগুলোতে ১৩, ২১, ৩৪ এভাবে। সাধারণত এক বছরে খরগোশ মারা যায় না। তাই বছর শেষে দেখা যাবে, খরগোশ জোড়ার সংখ্যা ১৪৪। এখানের সব সংখ্যাগুলো হচ্ছে ধারাটির পর্যায়ক্রমিক পদ। তাই আমরা বলতেই পারি যে, সবই হচ্ছে ফিবোনাচি ধারা মেনে!
চিত্র ৩ : খরগোশের দলবল।
ফিবোনাচির গল্প ১.২ (গাণিতিক উপাখ্যান)
বিষয়: প্রিয় ধারা
বিষয়: Contest_priyo
২০৪১ বার পঠিত, ৪১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু আমি দিমু না
তারপর মাষ্টার মশাইকে একথা বললে বলে কিনা সাব্বাস
তাহলে কোথায় ছিলেন এতক্ষণ
নাকি চুড়ি করে ঢুকে ছিলেন
মাথায় ড্রপ দিলেও ভাল লাগল।
বিশাল একটা ঢোক গিলে পোস্ট পড়লাম! আমি বরাবর অংক মুখস্ত করেছি! তাই আপনার তত্ব আমারও মাথার উপর দিয়ে গেলো,চক্ষু শুধু দর্হন করেই গেলো
ছবিগুলো কিন্তু মগজ অতিক্রম করেছে
পিসা শহর আমাদের থেকে একটু দূরে, যাই যাই করেও যাওয়া হয়নি
.
.
হায় হায়! গণিতের মত কিউট জিনিস মুখস্ত!!
.
.
ওউউ! ইতালীতে প্রবাসী! ইতালীর পাস্তা ছাড়া বিখ্যাত আর কি আছে??
fiat গাড়ী আছে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন