পুলিশের গাড়ি : মাসজিদের সামনে করে কী?
লিখেছেন লিখেছেন অবাক মুসাফীর ২৮ মে, ২০১৫, ০৯:২২:২৬ রাত
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু মুসলিমদের একটুকরো আকাশে আজ দূর্যোগের ঘনঘটা! তাই তো এখন মাসজিদের সামনেও পুলিশ দাড়িয়ে থাকে... নিরাপত্তা দেয়!!
আমি যে মাসজিদে নামাজ পড়ি সেখানে বিষয়টা লক্ষ্য করছি বেশ কয়েকদিন ধরে। প্রতি বৃহঃস্পতিবার মাগরীবের নামাজের সময় মাসজিদের সামনে একটা পুলিশের গাড়ি (পুলিশভর্তি) দাড়িয়ে থাকে... ইকামাত শুরু হলে কয়েকজন গিয়ে নামাজও পড়েন। কিন্তু তাদের মাসজিদের সামনে হেন টহল দেয়ার মতলব আমার বুঝে আসে না...
নামাজ শেষে বেরিয়ে দেখলাম একজন পুলিশ দাড়িয়ে আছেন, বয়স কম, চাকরিতেও খুব বেশি দিন আসেন নি বোধ হয়। কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ব্যাপারটা। উনি একগাল হেসে বললেন, 'ডিউটি, বাছা (!) ডিউটি!'
আমি বাচ্চাকাচ্চা মানুষ, কিন্তু অপরিচিত একজনের কাছে বাছা সম্বোধিত হওয়ার মত নই অন্তত। বাছাগোত্রীয় পোলাপানদের নাক টিপলে দুধ বের হয়, আমার নাক থেকে দুধ বেরুবার কোনো সম্ভবনাই নেই, আমি দুধ খাই না। গায়ে পুলিশি পোশাক আর বেল্টে একটা পিস্তল গোজা থাকলে বোধ হয় রাজা রাজা একটা ভাব আসে। যাই হোক, আবার জিজ্ঞাসা করলাম, 'তো ঘটা করে মাসজিদের সামনে ডিউটি ক্যান পড়লো আপনাদের?'
উনি এইবার তুমি দিয়েই শুরু করলেন, 'আর বুঝো না, নিরাপত্তা দিতাছে সরকার। মুসলিমদের নিরাপত্তার বড়ই অভাব! তাই, নিরাপত্তা দিতাছে।'
আমি মখা বনে গেলুম। মুসলিমপ্রধান দেশে মুসলিমরাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছে! ভালো তো, ভালো না?
মাঝেমধ্যে ইনারাই দাড়িটুপিওয়ালাদের মাসজিদ থেকে বেরুবার পথে হয়রানি করেন, দেহের কত জায়গায় যে তল্লাশী করেন তা আর না বলি। ইউ নো হোয়াট, দিস ইস কল্ড, #নিরাপত্তা।
উনার নিরাপত্তার গান আমার পোষাইলো না, মাসজিদ-প্রাঙ্গন থেকে বেরিয়ে গেলাম। দেখলাম, একজন মুরুব্বি হাত বাড়িয়ে ডাকছেন। উনিও পুলিশ, দাড়িওয়ালা, মাথায় পাতলা সাদা টুপি, নামাজ পড়ে কেবল বের হলেন হয়তো। আমি কাছে গিয়ে সালাম দিলাম, উনি উত্তর দিয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা করলেন, 'রাসেল কে চিনো?' বুঝলাম, আমি একটু আগে যার সাথে কথা বলে বের হলাম, তার নাম রাসেল। আমি বললাম, 'না, চিনি না।' উনি বললেন, 'তো কি কথা হল জানতে পারি?' আমি বললাম। আমার কথা শুনে উনি মুচকি হাসছেন, হাসার মত কি হল বুঝলাম না।
এবার উনি বললেন, 'তুমি যদি ঠিক একই প্রশ্ন আমাকে করতে তাহলে একেবারেই অন্য উত্তর পেতে!'
-'যেমন?'
-'তুমি সত্যিই শুনতে চাও?'
-'হু, আমি বেকার মানুষ। আমার অফুরন্ত সময়। আপনার বলতে আসুবিধা না থাকলে বলতে পারেন।'
-'তবে শোনো, আমি এইখানেসহ এই শহরের অন্যান্য মাসজিদে ডিউটি করতে যাই ঠিকই, কিন্তু সাথে সাথে আরো একটা কাজ করি। আমার মেয়ের জামাই খুঁজি।'
-'আঙ্কেল, বুঝলাম না। আপনার মেয়ের জামাই হারিয়ে গেছেন নাকি?'
-'ধুর বোকা! আমার মেয়ের তো এখনো বিয়েই হয় নি! আমি ওর হবু বর খুঁজি! আজকালকার দিনে ভালো ছেলে পাওয়া খুব কঠিন কাজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী, ভদ্র-সভ্য একটা ছেলে দরকার, তার খোঁজেই আমি মাসজিদে মাসজিদে ঘোরাঘুরি করার এই অলস সময়টাকে কাজে লাগাই।'
আমি আবার মখা বনে গেলুম!
[সবার কাছে দোয়ার দরখাস্তঃ আল্লাহ যেন আমার কপালে এমন কোনো শ্বশুর জুটিয়ে দেন।]
[বি.দ্রঃ উনার কন্যা সংখ্যা মোটে এক। ব্যাপারটা বড়ই দুঃখজনক, actually মর্মান্তিক! উনার সন্তান সংখ্যা কম, আফসোস উনার হওয়ার কথা! আমার হচ্ছে]
বিষয়: বিবিধ
২১১৭ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পুলিশের জামাই হইলে চিরকাল কাজ ন করে খেতে পারবেন।
এটা হতাশার বিষয় নয় বরং এটাই ফ্যাক্টস্। কোরানে ও হাদীসে আল্লাহ যা কিছু স্বত্তা সৃষ্টি করেছেন বলে জানিয়েছেন - তার প্রতিটিই সামহাউ মানুষের কর্তৃত্বাধীন কিংবা নিজ থেকে মানুষকে এ্যাকটিভলী বাঁধা দেবার ক্ষমতা হীন এ্যাক্সেপ্ট একটি স্বত্তা। যে শুধু নিজ থেকে বাধাঁই দেবে না - কুফুরী, শিরক সব করিয়ে ছাড়বে - তা সে মুমিন হোক কিংবা অন্য কোন মানুষ হোক। আর ঐ স্বত্তার বিরোধিতা করলে মনে হবে দোজখে নিক্ষেপ করেছে - মূলতঃ তা বেহেস্ত।
সো হতাশ হবেন না বরং আনন্দিত হোন - এই জন্য যে আল্লাহর রাসুলের সঃ বক্তব্য আপনার চোখের সন্মুখে উন্মোচিত হতে দেখে।
আপনি আমি আমরা দিনকে দিন সেই স্বত্তাকে দেখছি যে বিরোধিতা, প্রতিবাদ করলে দোজখে নিক্ষেপ করে।
আমি যদি আপনার জায়গায় থাকলাম তাহলে আমি বলতাম কেন আংকেল আমাকে দেখেও আপনি আপনার জামাই পান নি
ভাই কোন মসজিদে ডিউটি করছিল বলেন তো তাহলে একটা চান্স নিয়ে..................
খুলনায় আইতে পারবেন?? থাকেন কই?
ভাই রাজধানীর কোন শহরের মসজিদে এরকম পুলিশ পাহারা দেয় না
পুলিশ কি নিরাপত্তা ও দেয় আবার মেয়ের জামাই ও খোঁজে? এক ঠিলে দুই পাখি?
এভাবে মসজিদে এসে মেয়ের জন্য নামাযী জামাই খোঁজা খুবই ভাল কথা কিন্তু নিজে পুলিশের চাকরি করে (যা যথেষ্ট প্রশ্নের উদ্রেক করে ) তবু ও বুঝেন মেয়েকে সুখী দেখতে হলে নামাযী জামাই লাগবে!ভালো পরিবর্তন হয়েছে দেখি জনগনের!
আপনি দ্বীনদার শ্বশুড়, বউ পান দোআ করি পুলিশ শ্বশুড় পাইয়েন না!
উড়াইয়া দেখা তাই!
পাইলে পাইতেও পার,
অমুল্য রতন!'
মসজিদে যাওয়া বাড়াইয়া দেন! ছাই সদৃশ ফুলিশে ভাল শ্বশুর পাইতেই পারেন!!
আপনাকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা প্রিয় ভাই!
আল্লাহ আমাদের সকলের ভালো করুন!আমিন!!
সাধারন মুসলমানের দৃষ্টিতে পড়লে মনে হয় 'হায় অভাগা' বাংগালী।
চমৎকার লিখেছেন। যদি কারো বোধদয় হয়।
আমিতো আপনার সেই টুংটাং লেখা থেকে ধরেই নিয়েছিলাম যে আপনি একজন একজন নারী যাকে কি না তার মানুষটা মালাই আর গোলাপ গিফট করে!! তাহলে সেই মেয়েটা কে?
অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন